ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যতিক্রমী ফ্লাওয়ার ফেস্ট

অজস্র ফুলের মেলা বহুবিধ ব্যবহার মুগ্ধ দর্শনার্থী

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২ এপ্রিল ২০১৭

অজস্র ফুলের মেলা বহুবিধ ব্যবহার মুগ্ধ দর্শনার্থী

জনকণ্ঠ ফিচার ॥ ঝরো-ঝরো হল, এই বেলা তোর শেষ কথা দিস বলি/আমার মল্লিকাবনে যখন প্রথম ধরেছে কলি...। বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে তখনও প্রবেশ করা হয়নি, কাছাকাছি যখন, কানে আসছিল কবিগুরুর অমর বাণী। মিষ্টি সুর অনুসরণ করে সামনে এগিয়ে যেতেই চোখ ছানাভরা! চেনা চত্বর আমূল বদলে গেছে। যেদিকে চোখ যায় ফুল আর ফুল। এই ফুল ওই ফুলের সৌন্দর্যে মুগ্ধ হয়ে ছুটছিলেন তরুণীরা। যেন এক একটি রঙিন প্রজাপতি! কেউ চুলের ভাঁজে গুঁজে নিচ্ছিলেন প্রিয় ফুল। কারও মাথায় ফ্লাওয়ার ক্রাউন বসানো। ফুলেল সাজে নতুন বউ হয়ে চমকে দিয়েছেন অনেকে। হঠাৎ দেখে মনে হয়েছে, বিয়ে বাড়ি! আসলে আকর্ষণীয় ফুলের মেলা। দেশে উৎপাদিত ফুলের বিশেষ প্রদর্শনী। তিনদিনব্যাপী আয়োজনে মুখরিত ছিল গোটা এলাকা। মেলায় ছিল ১৪টি প্যাভিলিয়ন ও ৩৩টি স্টল। এসব স্টল ও প্যাভিলিয়ন ভর্তি ছিল ফুলে। বাইরেও ফুল আর ফুল। ফুলের ব্যবহারটা বিশেষ চোখে পড়েছে। একটি ঘোড়ার গাড়ি সাজানো হয়েছিল গাঁদা ফুল দিয়ে। লোহার কাঠামোটি ঢেকে তাতে যেন প্রাণসঞ্চার করেছিল ফুল। গাড়ির ভেতরে ঢুকে মোবাইল ফোনের ক্যামেরায় ছবি তুলছিলেন তরুণীরা। দোলনা তৈরি করা হয়েছিল। সেখানেও প্যাঁচিয়ে দেয়া হয়েছিল ফুলের মালা। ফুলের একটি গেট তৈরি করা হয়েছিল। এটির নিচ দিয়ে প্রতিদিন হেঁটেছেন দর্শনার্থীরা। বিয়ের সাজে ফুলের ব্যবহার কেমন হয়? কত হয়? মেলা ঘুরে ভাল ধারণা হয়েছে দর্শনার্থীদের। গুলশান ইভেন্ট নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে ছিল বিয়ের সব আয়োজন। স্টলের দুই পাশে দুটি হাতি ও ঘোড়া দাঁড়িয়ে ছিল। সেখানেও ফুল আর পাতায় আকর্ষণীয় উপস্থাপনা। ‘রেড’ নামের একটি স্টলে গিয়ে দেখা গেল বিয়ে বাড়ির সাজ। ভেতরে বউ সেজে বসে আছেন একজন। কথা বলে জানা গেল, বর-কনেসহ আগ্রহীদের ফুল দিয়ে সাজিয়ে দেয় এই প্রতিষ্ঠান। মেলার নজরুল মঞ্চ ফুল দিয়ে সাজিয়ে বসেছিলেন ৯ নারী উদ্যোক্তা। সবাই এসেছিলেন যশোর থেকে। একজনের নাম হাফিজা খাতুন হ্যাপি। ফুল চাষ করে সত্যি সত্যি হ্যাপি তিনি। দেখে বোঝা যায়। তিনি জানান, জিকরগাছার গদখালীতে ১০ বিঘা জমি আছে তাদের। তিনি নিজে সেখানে বীজ বপন চারা তৈরি ও চাষাবাদের কাজ করেন। বাংলাদেশের ফুলের বড় উৎস চুয়াডাঙ্গা। সেই অঞ্চল থেকে মেলায় এসেছেন চাষীরা। চুয়াডাঙ্গা ফুল ঘর নামের একটি স্টলে গিয়ে কথা হয় তরুণ ফুলচাষী আবদুর রশিদের সঙ্গে। তিনি জানান, শুরুটা করেছিলেন তার বাবা। তিনি চুয়াডাঙ্গার সবচেয়ে সফল চাষীদের অন্যতম। বাবার কাছ থেকে শিখে একই কাজ করছেন তারা তিন ভাই। মেলায় ছিল কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি স্টল। স্টলে নানা জাতের ফুল। প্রথমেই চোখে পড়ল লিলি। সাদা এবং লাল রঙের লিলি পাশাপাশি রাখা। অল্প মাটিতেই সবুজ সতেজ গাছ। সেখানে চমৎকার ফুল ফুটে আছে। দেখে মন ভরে যায়। ছিল কিছু বনসাই। ক্যাকটাসও। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মাহবুবা সিদ্দিকা বিশেষ আগ্রহ নিয়ে বললেন নন্দিনীর কথা। বাংলাদেশে এই ফুল একদমই নতুন। জাপান থেকে আনা জাতটি নিয়ে নাকি ১৭ বছর ধরে গবেষণা করছেন তাদের শিক্ষক ড. আ ফ ম জামাল উদ্দিন। সাদা পাঁপড়ির এই ফুল দেখতে কিছুটা গোলাপের মতো। স্টলের দায়িত্বে থাকা শিক্ষার্থী দারুণ তথ্য দিলেন। জানালেন, ৪৫টির বেশি রং হয় নন্দিনীর! অর্কিডও দেখা গেল মেলায়। দীপ্ত অর্কিডস নামের একটি প্রতিষ্ঠানের স্টলে গিয়ে দেখা যায়, প্রায় ১০ রকমের অর্কিড। স্টলে থাকা তানভীর জানান, ময়মনসিংহের ফুলবাড়িয়াতে অর্কিডের চাষ করেন তারা। সাফল্য এত যে, তাদের অর্কিড এখন দুবাইয়ে রফতানি হচ্ছে। মেলার আয়োজন করে ইভেন্ট এ্যান্ড ইনকিউভেশন সেন্টার ফর এন্টারপ্রাইজেস এবং বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার সোসাইটি। আয়োজকদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, মেলায় বিভিন্ন ধরনের সহস্রাধিক ফুল রাখা হয়েছিল। অংশ নেয় ফুলচাষী, ব্যবসায়ী ও সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। সুন্দর এই আয়োজন প্রতিবছর হবেÑ সকলের ফুলপ্রেমীদের তাই প্রত্যাশা।
×