ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

জঙ্গী দমনে নতুন বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, যুক্ত হচ্ছে মে মাসে

প্রকাশিত: ০৫:২৮, ২ এপ্রিল ২০১৭

জঙ্গী দমনে নতুন বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিম, যুক্ত হচ্ছে মে মাসে

শংকর কুমার দে ॥ জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিশেষায়িত বাহিনীর শক্তি, সক্ষমতা ও সফলতা অর্জন করেছে। এ জন্য দেশ-বিদেশের শক্তিধর রাষ্ট্র ও প্রতিষ্ঠানের প্রশংসা কুড়াচ্ছে। আগামী মে মাসেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনীতে যুক্ত হচ্ছেÑ বিশেষায়িত বাহিনী ক্রাইসিস রেসপন্স টিম (সিআরটি) নামে কমান্ডে ইউনিট। এ ইউনিট যুক্ত হলে বিশ্বের জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে শক্তিধর দেশগুলোর পর্যায়ে পৌঁছাতে পারবে বলে সরকারের নীতিনির্ধারক মহলের দাবি। কমান্ডো ইউনিট ছাড়াও এখন জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমেন কাজ করছে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ও র‌্যাব। আগামী মাসে কমান্ডো ইউনিট যোগ দিলে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ও র‌্যাবের সঙ্গে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে ঈর্ষাণীয় সাফল্য অজনে সক্ষম হবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এ খবর জানা গেছে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সাবমেশিন বন্দুক, রাইফেল, শটগান, স্নাইপার রাইফেল, দাঙ্গা নিয়ন্ত্রণ, স্টান গ্রেনেড, বিশেষ আগ্নেয়াস্ত্র দিয়ে সাজানো হচ্ছে এসব বিশেষায়িত বাহিনী। বিশেষায়িত বাহিনীর সদস্যদের থাকবে ভারী শরীর বর্ম, ব্যালিস্টিক ঢাল, এন্ট্রি টুলস, সাঁজোয়া যান, নাইট ভিশন ডিভাইস, মোশন ডিটেক্টর। জিম্মি বা জিম্মি শিকারীর জিম্মি ব্যক্তিকে উদ্ধার, জঙ্গী হামলা-মোকাবেলা ও ছিনতাই হওয়া বিমান উদ্ধার, লক্ষ্যবস্তু নির্ধারণের জন্য সহ বিশেষ সরঞ্জাম ব্যবহার করতে পারেন তারা। অত্যাধুনিক উন্নত প্রযুক্তির কলা-কৌশল রপ্তকরা বিশেষায়িত বাহিনীগুলোর সদস্যদের জঙ্গী আস্তানার জঙ্গীদের চিহ্নিত করে তাদের কাছে থাকা উন্নত অস্ত্র ও শক্তিশালী বিস্ফোরক বিধ্বংসে ও আত্মঘাতী জঙ্গী দমনে পারদশী করে গড়ে তোলা হচ্ছে। চট্টগ্রামের সীতাকু-ে, সিলেটের শিববাড়ি, মৌলভীবাজারের নাছিরনগর ও বড়হাটে জঙ্গী আস্তানা ধ্বংস করে আত্মঘাতী জঙ্গীদের দমন করে ব্যাপক সাফল্য অর্জন করেছে কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াট ও র‌্যাব। আগামী মাসে বিশেষ প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কমান্ডো ইউনিট যুক্ত হলে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা আরও কয়েকগুণ বেড়ে যাবে। ইন্টারপোলের সেক্রেটারি জেনারেল জারগেন স্টক গত মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত ৩ দিনব্যাপী পুলিশপ্রধানদের সম্মেলনে জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের ভূমিকার অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। বাংলাদেশে অব্যাহত জঙ্গী হামলা ও সন্ত্রাস দমনে শেখ হাসিনার সাহসী ভূমিকার প্রশংসা করেছেন মার্কিন কংগ্রেসম্যান চার্লস ডাব্লিউ বুস্টানি (জুনিয়র) এমডি। ঢাকায় নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মার্শিয়া ব্লুম বার্নিকাট গত বৃহস্পতিবার রাজধানীর বনানীতে এফএম রেডিও স্টেশন রেডিও টুডে পরিদর্শনে গিয়ে সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ দমনে বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর ভূমিকার ভূয়সী প্রশংসা করেছেন। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, গত ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর থেকে চলতি ৩১ মার্চ পর্যন্ত সিলেটের শিববাড়ি ও মৌলভীবাজারের বড় জঙ্গী আস্তানায় অভিযান পরিচালনাকালে নিহত হয়েছে আত্মঘাতীসহ অর্ধশতাধিক জঙ্গী, যার মধ্যে নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের নেতৃত্বদানকারী শীর্ষস্থানীয় জঙ্গীরা। এছাড়াও বিভিন্ন স্থান থেকে গ্রেফতার হয়েছে অন্তত অর্ধডজন আত্মঘাতী দলের জঙ্গী সদস্য, যারা জিজ্ঞাসাবাদে আত্মঘাতী জঙ্গী ও জঙ্গী আস্তানার নাম ফাঁস করে দিয়েছে। এর মধ্যে অন্তত ৫ জন নারী জঙ্গীও গ্রেফতার হয়েছে। গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহল পর্যন্ত দীর্ঘ নয় মাসের জঙ্গীবিরোধী অভিযানে নিহত হয়েছেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর চৌকস নয়জন কর্মকর্তা, যার মধ্যে গুলশানে ২ জন, সিলেটের শিববাড়িতে-৩ জন। এর মধ্যে সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গীদের পরিত্যক্ত অবস্থায় রেখে দেয়া গ্রেনেড-বোমার বিস্ফোরণে নিহত ৩ জনের মধ্যে র‌্যাবের ইন্টেলিজেন্স উইং এর প্রধান লে. কর্নেল আবুল কালাম আজাদ গুরুতর আহত অবস্থায় মৃত্যুর যন্ত্রণায় ভুগে মৃত্যুর ঘটনা ঘটলে সকল মহলেই শোকের ছায়া নেমে আসে। সহকর্মীর অকাল মৃত্যুতে জঙ্গী দমনের দৃঢ় প্রত্যয়ব্যক্ত করে ফেসবুকের বার্তা দিয়েছেন পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিট প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলাম। ফেসবুক বার্তায় মনিরুল ইসলাম বলেছেন, সকলকে কাঁদিয়ে চিরবিদায় নিলেন প্রিয় সহযোদ্ধা লে. কর্নেল আজাদ! সহযোদ্ধার মৃত্যু বেদনা দেয় এ কথা যেমন সত্য, তেমনি সেই শোককে শক্তিতে পরিণত করে মানবকুলে সৃষ্ট দানব ধ্বংসে আমাদের আরও বেশি সংকল্পবদ্ধ করে আজাদ, আপনাকে ফিরে পাব না জানি কিন্তু কথা দিচ্ছি আপনার হত্যাকারীদের রক্ষা নাই, সমূলে তাদের বিনাশ অনিবার্য করে তুলবই! আপনার স্মৃতি বুকে ধারণ করেই অসুর দমনে এগিয়ে যাচ্ছি, যাব! পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের ১ জুলাই গুলশান হলি আর্টিজান বেকারিতে জঙ্গী হামলার পর থেকে চলতি বছরের ১ এপ্রিল সিলেটের মৌলভীবাজারের বড়হাটে আত্মঘাতী জঙ্গী আস্তানার দমনে সাফল্য অর্জন করেছে র‌্যাব, সোয়াট ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিট। এর মধ্যে গুলশান হলি আর্টিজান ও সিলেটের শিববাড়ির জঙ্গী দমনে পুলিশের এসব বাহিনীকে সহায়তা করেছে সেনাবাহিনীর কমান্ডো ও প্যারাকমান্ডো বাহিনী। আগামী মাসে পুলিশের কমান্ডো বাহিনী মাঠে নামানো হলে সেনাবাহিনীকে আর জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে ডাকার প্রয়োজনীয়তা নাও লাগতে পারে। গুলশানের হলি আর্টিজান থেকে শুরু করে সিলেটের মৌলভীবাজার বড়হাটের আত্মঘাতী জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চালানোর ঘটনায় এ পর্যন্ত অর্ধশতাধিক আত্মঘাতী জঙ্গী নিহত হয়েছে। যেসব স্থানে বড় জঙ্গীবিরোধী অভিযান চালানো হয়েছে, তার মধ্যে সিলেটের শিববাড়ি, সিলেটের মৌলভীবাজারের দুই জঙ্গী আস্তানা নাছিরনগর ও বড়হাট, সীতাকু-ের দুই জঙ্গী আস্তানা সাধন কুটির ও ছায়ানীড়, কুমিল্লার কোর্টবাড়ি, কুমিল্লার যানবাহনে তল্লাশি অভিযানে নিহত ও গ্রেফতার হয়েছে আত্মঘাতী জঙ্গীরা। এর মধ্যে চট্টগ্রামের সীতাকু-ে নিহত হয়েছে ৪ জঙ্গী যার মধ্যে রয়েছে জঙ্গী দম্পতি ও শিশু, সিলেটের শিববাড়িতে নিহত হয়েছে ৪ জঙ্গী যার মধ্যে রয়েছে জঙ্গী দম্পতি, সিলেটের মৌলভীবাজারের নাছিরনগরে নিহত ৭ জনের মধ্যে ২ জঙ্গী ও এক মহিলা ছাড়াও চার শিশু রয়েছে। এছাড়াও জঙ্গীবিরোধী সফল অভিযান চালানোর ফলে গুলশানের হলি আর্টিজান বেকারিতে-৫ জন, কল্যাণপুরে ৯ জন, নারায়ণগঞ্জে ৩ জন, রূপনগরে ১ জন, আজিমপুরে ১ জন, গাজীপুর ও সাভারের আশুলিয়ায় পৃথক অভিযানে নিহত হয়েছে ৯ জন, আশকোনার অভিযানে নারী ও শিশুসহ ৩ জন। গাজীপুর, আশুলিয়া ও টাঙ্গাইলে নিহত হয়েছে কয়েকজন। নিহতদের মধ্যে আত্মঘাতী নারী জঙ্গীও রয়েছে। এছাড়াও র‌্যাবের অস্থায়ী কার্যালয় ও র‌্যাবের চেকপোস্টে আত্মঘাতী হামলা চালাতে গিয়ে মারা গেছে ২ জঙ্গী। রাজধানী ঢাকায় জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার হওয়ায় রাজধানীর বাইরে দেশের বিভিন্ন জেলা, বিভাগীয় শহর ও মহাসড়কগুলোর আশপাশে জঙ্গীরা শক্তিশালী আস্তানা গড়ে তোলে। এসব জঙ্গী আস্তানায় আত্মঘাতী জঙ্গীরা আত্মগোপন করে অস্ত্র, বিস্ফোরক মজুত গড়ে তোলে নাশকতা ঘটানোর জন্য। এরা নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপের আত্মঘাতী জঙ্গী বলে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর দাবি। পুলিশ সূত্রে জানা গেছে, মূলত গত মার্চ মাসের প্রথম সপ্তাহে হুজির সদস্যরা ফাঁসির আসামি হুজি প্রধান মুফতি আবদুল হান্নানকে প্রিজনভ্যান থেকে ছিনিয়ে নেয়ার চেষ্টার ঘটনার মধ্য দিয়ে জঙ্গীবিরোধী অভিযান জোরদার হয়। কারণ, হুজি প্রধানকে ছিনিয়ে নেয়ার ঘটনায় দুই জঙ্গী গ্রেফতার এবং চট্টগ্রাম থেকে বাসযোগে ঢাকায় আসার পথে কুমিল্লায় পুলিশের ওপর আক্রমণকালে দুই জঙ্গী গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে চট্টগ্রামের সীতাকু-ের জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়া যায়। সীতাকু-ে জঙ্গী দম্পতি গ্রেফতার করে জিজ্ঞাসাবাদে পাওয়া যায় সিলেটের জঙ্গী আস্তানা, যার অভিযান অব্যাহত চলছে। তবে আত্মঘাতী জঙ্গীদের হামলার প্রধান লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী, তাদের দফতর ও চেকপোস্ট। জঙ্গীদের বড় ধরনের নাশকতার পরিকল্পনা নস্যাৎ করে অভিযান জোরালো করায় জঙ্গীরা কৌশল পরিবর্তন করে আত্মঘাতী হয়ে উঠেছে জঙ্গীরা। জঙ্গীদের এমন কৌশল নেয়ায় পাল্টা কৌশল নিয়ে শনাক্ত হওয়া জঙ্গী আস্তানাগুলোতে অভিযান অব্যাহত রেখেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। জঙ্গীরা দেশের উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল ও পূর্বাঞ্চলসহ দেশের সীমান্তবর্তী জেলাগুলো বিশেষ করে পার্বত্য ও পাহাড়ী এলাকায় ছড়িয়ে-ছিটিয়ে পড়েছে, যাদের কাছে মওজুদ রয়েছে বিপুল অস্ত্র, গোলাবারুদ ও বিস্ফোরক। গোয়েন্দা সংস্থার একজন কর্মকর্তা বলেন, জঙ্গীদের আত্মঘাতী হামলার নেপথ্যে কিছু তথ্য পাওয়া গেছে। জঙ্গীরা কোথায় হামলার পরিকল্পনা করছে, কোথায় তাদের আস্তানা, নাশকতার পরিকল্পনা, অস্ত্র ও বিস্ফোরণের প্রশিক্ষণ নেয়ার বিষয়ে অনেক তথ্য পেয়ে গেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও গোয়েন্দারা। এসব তথ্যের সূত্র ধরে সীতাকু- থেকে শুরু করে সিলেট, মৌলভীবাজার এবং কুমিল্লার জঙ্গী আস্তানা সম্পর্কে তথ্য পেয়ে আস্তানায় অভিযান চালানো হয়। এছাড়াও গ্রেফতার হয়নি, আত্মগোপনে রয়েছে এমন দেশের বিভিন্ন স্থানে কোন জঙ্গীর নেতৃত্বে কার্যক্রম চলছে এ বিষয়েও তথ্য পাওয়া গেছে। এসব জঙ্গীর পারিবারিক পরিচয়, আত্মীয়স্বজনদের পরিচয়, তারা কে কবে থেকে জঙ্গী কার্যক্রমে রয়েছে সব তথ্য পেয়ে পুলিশ চূড়ান্ত অভিযান শুরু করা হয়েছে, যা অব্যাহত থাকবে। আর জঙ্গীবিরোধী এসব অভিযান ব্যর্থ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর মনোবল ভেঙ্গে দিতেই মূলত, জঙ্গীরা আত্মঘাতী হয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে হামলার টার্গেটে পরিণত করেছে। এটা জঙ্গীদের নতুন কোন কৌশল নয়, জঙ্গী গোষ্ঠিতে যোগদান মানেই আত্মঘাতী, এখন শুধু জঙ্গীরা মরিয়া হয়ে আত্মঘাতী হওয়া বা আক্রমণ করার প্রবণতা বেড়েছে বলা যায়। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল গত ২৬ মার্চ আবারও আইএসের অস্তিত্বের কথা অস্বীকার করলেও সর্বশেষ সিলেটের শিববাড়িতে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে ২ পুলিশসহ ৬ জন নিহতের ঘটনায় দায় স্বীকার করে আইএস। দেশে আইএস নেই বলে দাবি করেছেন পুলিশের আইজিও। জঙ্গিবিরোধী যত অভিযান ২০১৬ সালের ১ জুলাই হলি আর্টিজানে জঙ্গী হামলার পর অভিযানের পর থেকেই আইএসের দায় স্বীকারের ঘটনা ঘটতে দেখা যাচ্ছে, যদিও ব্লগার, লেখক, প্রকাশক, বিদেশী নাগরিক, ধর্মযাজক, পুরোহিত, ভিন্নমতাবলম্বীদের হত্যাকা-ের পর আবার আইএসের পরিবর্তে আল-কায়েদা ও তার মতাদর্শ অনুসারী আল আনসার দায় স্বীকারের ঘটনা ঘটেছে। সরকারের পক্ষ থেকে বারবারই বলা হচ্ছেÑ আইএস নয়, তাদের মতাদশী থাকতে পারে। তবে সাভারের আশুলিয়ায় সারোয়ান জাহান, নারায়ণগঞ্জে তামিম আহমেদ চৌধুরী, মিরপুরের রূপনগরে মেজর (অব.) জাহিদুল ইসলাম, আজিমপুরে তানভীর কাদেরী, মোহাম্মদপুর বেরিবাঁধে বন্ধুকযুদ্ধে নুরুল ইসলাম মারজান নিহত হওয়ার ঘটনায় নব্য জেএমবি বা সারোয়ার-তামিম গ্রুপ বড় ধরনের ধাক্কা খেয়েছে বলে মনে করেছিলেন আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা। কিন্তু চট্টগ্রামের সীতাকু- ও সিলেটের শিববাড়ি ও মৌলভীবাজারের জঙ্গী আস্তানায় অভিযানে আত্মঘাতী জঙ্গীদের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা আবারও জঙ্গীবিরোধী অভিযানের বিষয়টি নতুন করে চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। স্বরাষ্ট্্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, সন্ত্রাসবাদ দমনে যেই র‌্যাপিড এ্যাকশন ব্যাটালিয়ন (র‌্যাব) এর সৃষ্টি হয়েছিল তারাও জঙ্গী দমনে সাফল্য দেখাচ্ছে। সাফল্য অর্জন করেছে যুক্তরাষ্ট্রের অস্ত্র ও প্রশিক্ষণে তৈরি স্পেশাল উইপন্স অ্যান্ড ট্যাক্টিকস (সোয়াত) টিমও। পুলিশে নতুন করে যুক্ত হওয়া কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ক্রাইম (সিটিটিসি) ইউনিট, যা জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে ইতোমধ্যেই সাফল্য অর্জনের স্বাক্ষর রেখে চলেছে। সিটিটিসি প্রধান মোঃ মনিরুল ইসলামের নেতৃত্বে বর্তমানে সিলেটের মৌলভীবাজারে আত্মঘাতী জঙ্গী আস্তানায় অভিযান চলছে। এ ছাড়াও গত ফেব্রুয়ারিতে ৮ সপ্তাহব্যাপী পুলিশের নতুন ইউনিট কমান্ডো বাহিনীর প্রশিক্ষণ শুরু হয়েছে খাগড়াছড়িতে, যারা আগামী মে মাসে প্রশিক্ষণ শেষে জঙ্গী ও সন্ত্রাসবিরোধী অভিযানে অংশ নিতে প্রস্তুতি নিচ্ছে। সশস্ত্র বাহিনীতে কমান্ডো বা প্যারাকমান্ডো বাহিনীর প্রশিক্ষণে কনস্টেবল থেকে এএসপি পদমর্যাদার মোট ৪৪ জন অংশ নিচ্ছেন কমান্ডো বাহিনীতে। পুলিশের একজন উর্ধতন কর্মকর্তা জানান, গত বছরের জুলাই মাসে গুলশানের হলি আর্টিজান ও কিশোরগঞ্জের শোলাকিয়া হামলাসহ দেলের বিভিন্ন স্থানে সশস্ত্র জঙ্গী হামলার প্রেক্ষাপটে পুলিশ বাহিনীর সামর্থ বৃদ্ধির জন্য অত্যাধুনিক প্রশিক্ষণ ও সরঞ্জামসহ সব ধরনের ‘লজিস্টিক সাপোর্ট’ দিতে পুলিশের যে কোন সঙ্কটকালীন পরিস্থিতিতে ঘটনাস্থলে পৌঁছে অপরাধীদের বিরুদ্ধে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে কমান্ডো বাহিনী। যুক্তরাষ্ট্রের বিখ্যাত এফবিআইসহ বিভিন্ন দেশ থেকে প্রশিক্ষণপ্র্রাপ্ত বিশেষায়িত কাউন্টার টেররিজম ইউনিট, সোয়াট, র‌্যাবের সঙ্গে কমান্ডো বাহিনীর যুক্ত হওয়ার মধ্য দিয়ে জঙ্গী ও সন্ত্রাস দমনে শক্তি, সামর্থ্য ও সাফল্য অর্জনে সক্ষম হবে। জঙ্গীবিষয়ক বিশ্লেষকরা বলেন, ইসলামিক স্টেট বা আইএস,আল-কায়েদা, তালেবানসহ নানা নামের জঙ্গী সংগঠন যুক্তরাষ্ট্রের টুইন টাওয়ারে হামলা, ভারতের মুম্বাইয়ে হোটেলে হামলা, পাকিস্তানের পেশোয়ারে স্কুলে, ফ্রান্সের প্যারিসে হামলা করে নিরস্ত্র, নিরীহ সাধারণ মানুষকে হত্যা করেছে। অদূর ভবিষ্যতে একই কায়দায় এমন ধরনের হামলার আশঙ্কার প্রতিরোধে পর্যাপ্ত নিরাপত্তাব্যবস্থা নিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর শক্তি ও সক্ষমতা বৃদ্ধি করা হয়েছে, যা আরও মজবুত করা প্রয়োজন। জঙ্গীরা যেহেতু যুদ্ধকৌশল রপ্ত করে আত্মঘাতী হয়ে আক্রমণাত্মক হয়ে উঠেছে, সঙ্গত কারণেই তা ঠেকাতে উপযুক্তভাবে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত ও দক্ষ গোয়েন্দা নেটওয়ার্ক ও যুদ্ধকৌশলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত বিশেষায়িত বাহিনীর প্রয়োজনীয়তা অপরিহার্য। বিশেষ নিরাপত্তা পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে দ্রুত কার্যকর আইনী প্রতিরোধ গড়ে তোলার পাশাপাশি জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে জনসচেতনতা সৃষ্টি, জনপ্রতিরোধ গড়ে তোলা, জঙ্গী মদতদান ও জঙ্গী অর্থায়ন বন্ধে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে।
×