ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ডাঃ দীপু মনি আইপিইউ কমিটির চেয়ারপার্সন

সংসদে নারী পুরুষের সমতা আনতে ৫০ বছর লাগবে

প্রকাশিত: ০৫:২৭, ২ এপ্রিল ২০১৭

সংসদে নারী পুরুষের সমতা আনতে ৫০ বছর লাগবে

সংসদ রিপোর্টার ॥ ‘ফোরাম অব ওম্যান পার্লামেন্ট’-এর সেমিনারের মধ্য দিয়ে শনিবার থেকে ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়নের (আইপিইউ) পাঁচ দিনব্যাপী আন্তর্জাতিক সম্মেলন শুরু হয়েছে। বিশ্বের ২০৯ জন নির্বাচিত নারী জনপ্রতিনিধিদের উপস্থিতিতে শুরু হওয়া এই সেমিনারে বক্তারা বলেন, বর্তমানে বিশ্বের সংসদগুলোতে নারী সংসদ সদস্যদের গড় অবস্থান ২৩ শতাংশ। এটাকে ৫০ উন্নীত করার জন্য আইপিইউ কাজ করছে। তবে এই চলমান ধারায় সংসদে নারী-পুরুষের সমতা আনতে আরও ৫০ বছর লাগবে। বৈঠকে আগামী তিন বছরের জন্য বাংলাদেশের সাবেক পররাষ্ট্রমন্ত্রী ডাঃ দীপু মনি এমপিকে আইপিইউ’র ‘ফোরাম অব ওম্যান পার্লামেন্ট’-এর চেয়ারপার্সন নির্বাচিত করা হয়। শনিবার বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে অনুষ্ঠিত বিশ্বের নারী জনপ্রতিনিধিদের নিয়ে অনুষ্ঠিত সেমিনারে এ নির্বাচন করা হয়। সরকার দলীয় সংসদ সদস্য ডাঃ দিপু মনির সভাপতিত্বে সেমিনারে অনুষ্ঠানে বক্তৃতা করেন জাতীয় সংসদের স্পীকার ড. শিরীন শারমিন চৌধুরী, আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী, সেক্রেটারি জেনারেল মার্টিন চুনগুং ও বিভিন্ন দেশের নারী সংসদ সদস্যরা। সেমিনারে স্পীকার ড. শিরীন বলেন, সংসদে নারী-পুরুষের সমতা আনতে প্লানেট ৫০-৫০ লক্ষ্যকে সামনে রেখে আইপিইউ’র নির্দেশনা অনুযায়ী আমরাও কাজ করছি। সংসদে নারীর অংশগ্রহণ বাড়াতে ইতোমধ্যে বিভিন্ন পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। পশ্চাৎপদ নারীদের এগিয়ে নিয়ে আসতে নারী দারিদ্র্য দূরীকরণ পদক্ষেপ নেয়া হয়েছে। তাদের তথ্য-প্রযুক্তি দক্ষতা বাড়ানোরও উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। এছাড়া জেন্ডার সমতা নিরসনেও বাংলাদেশ সরকার কাজ করছে বলে তিনি জানান। জেন্ডার বৈষম্য নিরসনে এখনও কিছু চ্যালেঞ্জ রয়েছে উল্লেখ করে স্পীকার আরও বলেন, চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে এখনও অন্যতম নারীদের বেতন বৈষম্য। অথচ তারাই কাজের ক্ষেত্রে বেশি আন্তরিক। তিনি বলেন, প্লানেট ৫০-৫০ অর্জনে ইতোমধ্যে অনেকগুলো পদক্ষেপ নিয়েছে সরকার। তৃণমূলের নারীদের বিভিন্ন স্কিমে সহায়তা প্রদান করা হচ্ছে। বিশেষ করে বিধবা ভাতা ও মাতৃত্বকালীন ভাতা চালু করা হয়েছে। অনুষ্ঠানে আইপিইউ প্রেসিডেন্ট সাবের হোসেন চৌধুরী বলেন, আইপিইউ সারা বিশ্বব্যাপী নারী বৈষম্য নিরসনে কাজ করছে। আইপিইউ সদস্যভুক্ত দেশগুলোর সংসদ সদস্য ও পার্লামেন্টের মধ্যে সম্পর্ক স্থাপনের মাধ্যমে কিভাবে নারীর বৈষম্য কমিয়ে আনা যায়, তার কর্মপরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। তিনি বলেন, নারী-পুরুষের বৈষম্য কমিয়ে আনতে আইপিইউ ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচী নিয়েছে। এজন্য সদস্য দেশগুলোর পার্লামেন্টের সঙ্গে বিভিন্ন সময় মতবিনিময় করা হয়। বিভিন্ন অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ডাঃ দিপু মনি জেন্ডার সমতা নিশ্চিত করতে ও নারী উন্নয়নে সরকারের গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের কথা তুলে ধরেন। তিনি এ বিষয়ে আইপিইউ’র সদস্য দেশগুলোর সম্মিলিত পদক্ষেপের ওপর গুরুত্বারোপ করেন। আন্তর্জাতিক এই সম্মেলনের দ্বিতীয় দিনে আজ রবিবার সকালে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রের গবর্নিং কাউন্সিল শুরু হবে। প্রথম প্লেনারি সেশনে ‘সমতা ও সবার জন্য মর্যাদা প্রতিষ্ঠায় ঃ আইপিইউ প্রেসিডেন্টের’ ভূমিকা শীর্ষক সাধারণ বিতর্ক অনুষ্ঠিত হবে। এরপর ‘ফোরাম অব ইয়ং পার্লামেন্টারিয়ান্স’র সেমিনার অনুষ্ঠিত হবে। স্পীকারের সঙ্গে বৈঠক ॥ জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলির সভাপতি ড. শিরীন শারমিন চৌধুরীর সঙ্গে বৈঠক করেছেন জাপান, বেলারুশ ও কিউবা থেকে আগত ডেলিগেশন প্রধানগণ। শনিবার দুপুরে সংসদ ভবনে স্পীকারের কার্যালয়ে অনুষ্ঠিত বৈঠকে তারা ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলি, বাংলাদেশের সংসদীয় কার্যক্রম, নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়ন, সামাজিক নিরাপত্তা প্রভৃতি বিষয়ে আলোচনা করেন। স্পীকার আইপিইউ এসেম্বলিতে আগত প্রতিনিধিদলকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশে আইপিইউ এসেম্বলির মতো বৃহৎ আয়োজন করতে পেরে আমরা গর্বিত। এসেম্বলিকালীন প্রতিনিধিদলের প্রত্যেক সদস্য ইভেন্টগুলো উপভোগ করবেন এবং এসেম্বলি কার্যক্রমে স্বতস্ফুর্তভাবে অংশগ্রহণ করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি বলেন, ১৩৬তম আইপিইউ এসেম্বলি আয়োজন বাংলাদেশের মর্যাদা ও ভাবমূর্তি উজ্জ্বল করেছে। বিশ্বের বিভিন্ন সংসদ ও সহযোগী সংস্থা থেকে আগত প্রতিনিধিদের এ মিলন মেলা বাংলাদেশকে এক অনন্য উচ্চতায় অধিষ্ঠিত করেছে। এ সময় জাপানী প্রতিনিধিদলের প্রধান সানচি সুজুকি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় জাপান যেমন বাংলাদেশের পাশে ছিল তেমনি বর্তমান উন্নয়ন কর্মকা-েও বাংলাদেশের পাশে আছে এবং ভবিষ্যতেও থাকবে। ছয় বছর পূর্বে সুনামী ও ভূমিকম্পে জাপান ক্ষতিগ্রস্ত হলে বাংলাদেশ জাপানের পাশে দাঁড়ানোয় তিনি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন। কিউবা ডেলিগেশন প্রধান মারিয়া ইলানডা ফেররেরা গোমেজ বলেন, বাংলাদেশ কিউবার পরীক্ষিত বন্ধু। স্বাধীন বাংলাদেশের আত্মপ্রকাশের পর থেকে কিউবা বাংলাদেশের পাশে রয়েছে। তিনি বাংলাদেশ ও কিউবার সংসদীয় প্রতিনিধি পর্যায়ে সম্পর্ক উন্নয়ন, সাংস্কৃতিক ভাব বিনিময় ও ব্যবসা বাণিজ্য প্রসারের ক্ষেত্রে একত্রে কাজ করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন।
×