ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনের দাবি

প্রকাশিত: ০৪:০০, ২ এপ্রিল ২০১৭

বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধনের দাবি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রিমিয়ামে তালিকাভুক্তির ক্ষেত্রে ইস্যুয়ার ও বিনিয়োগকারী সবার জন্য একটি যুগোপযোগী বিধান করতে ২০১৫ সালের শেষদিকে প্রাথমিক গণপ্রস্তাবের (আইপিও) বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংস্কার করে পুঁজিবাজার নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ এ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। এর আওতায় একটি কোম্পানির তালিকাভুক্তির প্রক্রিয়া চলছে। তবে বিদ্যমান আইনেও যোগসাজশ ও কারসাজির মাধ্যমে প্রাথমিক শেয়ারের দর বাড়ানোর সুযোগ রয়ে গেছে বলে মনে করছেন বাজার সংশ্লিষ্টরা। পাশাপাশি বুক বিল্ডিংয়ে বিডিংয়ের মাধ্যমে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের শেয়ার প্রাপ্তির ক্ষেত্রেও কিছু জটিলতা ও অসন্তোষ রয়েছে। সবার স্বার্থরক্ষায় বুক বিল্ডিং পদ্ধতি আরও কার্যকর করতে সম্প্রতি নিয়ন্ত্রক সংস্থার কাছে আবারও পাবলিক ইস্যু রুলস সংশোধনের দাবি জানিয়েছে দেশের দুই স্টক এক্সচেঞ্জ। আইনের সর্বশেষ সংশোধনীর পরও বুক বিল্ডিং পদ্ধতির কিছু দুর্বলতা রয়েছে স্বীকার করে বিএসইসির কমিশনার স্বপন কুমার বালা ডিএসই আয়োজিত এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, আইনের কিছু সমস্যার বিষয়ে কমিশন অবগত। নতুন আইনে অন্তত একটি কোম্পানির আইপিও আসুক। অভিজ্ঞতার আলোকে প্রয়োজনে আবারও আইনটি সংশোধন করা হবে। এ ক্ষেত্রে বিতর্ক এড়াতে বুক বিল্ডিং পদ্ধতিতে শেয়ার দর নির্ধারণে ‘ডাচ-এ্যাকশন পদ্ধতি’ কিংবা ‘এ্যাঙ্কর ইনভেস্টর’ পদ্ধতি অনুসরণ করা যেতে পারে। ডাচ-এ্যাকশন পদ্ধতিতে কোন বিনিয়োগকারীকে তার প্রস্তাবিত দরেই শেয়ার ক্রয় করতে হয়। তখন নিজেদের স্বার্থ বিবেচনায় প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীরা দর প্রস্তাবে আরও দায়িত্বশীল হন। অন্যদিকে ‘এ্যাঙ্কর ইনভেস্টর’ পদ্ধতিতে চূড়ান্ত শেয়ার কাট অফ প্রাইস নির্ধারণের আগেই এ্যাঙ্কর ইনভেস্টর গ্রুপ নির্দিষ্ট দরে শেয়ার কিনতে পারে। একটি দরে কোন বড় বিনিয়োগকারীরা শেয়ার কিনে নিলে তখন সে আইপিওতে সাধারণ বিনিয়োগকারীদের আস্থা বাড়ে। এদিকে বিদ্যমান বুক বিল্ডিং পদ্ধতি সংশোধন করে ন্যূনতম ৫০টি যোগ্য প্রতিষ্ঠানের প্রস্তাবের ভিত্তিতে শেয়ারের কাট অফ প্রাইস নির্ধারণ এবং কোন একক প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর জন্য সর্বোচ্চ ২ শতাংশ শেয়ার কেনার সুযোগ রাখার প্রস্তাব দিয়েছে দেশের প্রধান শেয়ারবাজার ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ (ডিএসই)। তবে আইপিওর আকার বড় হলে তা ১ শতাংশে নামিয়ে আনা যেতে পারে বলেও মত তাদের। এ বিষয়ে একাধিক ইস্যু ব্যবস্থাপক বলেন, বড় আইপিও হলে বিডিংয়ে ৫০টি যোগ্য প্রতিষ্ঠানের বাধ্যবাধকতা গ্রহণযোগ্য হতে পারে। তবে ছোট ও মাঝারি আকারের কোম্পানির বিডিংয়ে সংখ্যা ২০-এর বেশি হওয়া কোনভাবেই যৌক্তিক হবে না। এর বাইরে কাট অফ প্রাইস নির্ধারণ হয়ে যাওয়ার পর কম দর প্রস্তাবকারীদের আবারও কাট অফ প্রাইসে শেয়ার কেনার সুযোগ দেয়ার বিপক্ষে তারা। পাশাপাশি একটি প্রতিষ্ঠানকে তার জন্য বরাদ্দকৃত সর্বোচ্চ আবেদনসীমার অন্তত ৩০ শতাংশ শেয়ার কেনার আবেদনে বাধ্য করারও দাবি তাদের। তারা মনে করছেন, এতে দর প্রস্তাবে বিডাররা শুরু থেকেই আরও দায়িত্বশীল হবেন। অন্যদিকে, চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জের (সিএসই) পক্ষ থেকেও কিছু পয়েন্ট উত্থাপন করা হয়েছে। স্টক এক্সচেঞ্জটির কর্মকর্তারা জানান, মিউচুয়াল ফান্ড ও কমিশন কর্তৃক অনুমোদিত ‘অন্যান্য’ এ দুই ক্যাটাগরি বাদ দিলে বর্তমান আইনানুসারে বিডিংয়ে মোট ১০ ক্যাটাগরির যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীর অংশগ্রহণ সম্ভব। বর্তমানে ক্যাটাগরিভেদে তাদের মধ্যে সমানসংখ্যক (শতকরা হিসাবে) শেয়ার বরাদ্দের বিধান রয়েছে। কার্যত দেখা যায়, একটি ক্যাটাগরি থেকে অনেক বেশি শেয়ার কেনার আবেদন আসছে, বিপরীতে অন্য ক্যাটাগরির বিনিয়োগকারীদের কাছ থেকে তুলনামূলক কম আবেদন আসছে। এ ক্ষেত্রে যোগ্য প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের মধ্যে শেয়ার বরাদ্দে অভ্যন্তরীণ কোটা বিন্যাসটি তুলে দেয়া যেতে পারে বলে মত দিয়েছে সিএসই। এছাড়া বিদ্যমান বুক বিল্ডিং আইনে কাট অফ প্রাইস নির্ধারণের পদ্ধতি আরও কার্যকর ও বাস্তবসম্মত করা প্রয়োজন বলেও মনে করে সিএসই।
×