ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ফুলের জলসায়-

প্রকাশিত: ০৩:৫১, ২ এপ্রিল ২০১৭

ফুলের জলসায়-

ফুল ভালবাসে না এমন মানুষ খুঁজে পাওয়া দুষ্কর। রকমারি ফুলের বিচিত্র রূপ ও রং, ভঙ্গি ও সৌরভ মোহিত করে না এমন মানুষ বোধকরি মিলবে না এ বাংলায়। শুধু বাংলার কথাই বা বলি কেন, ফুলের কদর বিশ্বব্যাপী। তবে বাঙালীর আবেগ খানিকটা বেশি বলে ফুল নিয়ে তার কিছুটা আদিখ্যেতা রয়েছে বৈকি! যদিও সেসব মেনে নিতে আপত্তি থাকে না। শুধু প্রেমিক-প্রেমিকাই পরস্পরকে ফুল দিয়ে ভালবাসা জ্ঞাপন করে এমন নয়, ফুলের ব্যবহার এখন সর্বত্রই। কারও হাতে ফুলের তোড়া দিতে, কারও গলায় ফুলের মালা জড়াতে উপলক্ষের প্রয়োজন পড়ে না। বিভিন্ন জাতীয় ও ব্যক্তিগত বিশেষ দিবসে ফুলের ব্যাপক ব্যবহার লক্ষ্য করা যায়। পরিস্থিতি এমন যে ভালবাসা দিবসের মতো কোন কোন দিবসে রাজধানীতে রীতিমতো ফুলের আকাল পড়ে যায়। দুদিন আগে থেকেই টন টন ফুল ঢাকায় আনা হয় দেশের দক্ষিণাঞ্চলসহ কয়েকটি এলাকা থেকে। তবে চাহিদা পূরণ করতে গিয়ে হিমশিম খান বহু ফুল ব্যবসায়ী। ওইদিন গোলাপের চাহিদা সর্বোচ্চ হওয়ায় ওই বিশেষ ফুলটির দুর্ভিক্ষদশা তৈরি হয়। বাঙালীর পুষ্পপ্রীতি দিন দিন বেড়ে চলেছে। দেশের অর্থনীতিতে ফুল চাষ বড় অবদান রাখতে শুরু করেছে। অবস্থা এতটাই অনুকূল যে এখন অর্ধসপ্তাহব্যাপী পুষ্পমেলা বা ফ্লাওয়ার ফেস্টেরও আয়াজন লক্ষ্য করা যাচ্ছে। দেশে উৎপাদিত ফুল নিয়ে বৃহস্পতিবার থেকে দ্বিতীয়বারের মতো শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী ‘বাংলাদেশ ফ্লাওয়ার ফেস্ট-২০১৭’। রাজধানীর বাংলা একাডেমি প্রাঙ্গণে এই উৎসবে বিপুলসংখ্যক পুষ্পপ্রেমীর শুভাগমন ঘটছে। মেলায় ১৪টি প্যাভিলিয়ন ও ৩৩টি ফুলের স্টল রয়েছে। হাজার রকম ফুল আর ফুলের চারার সমারোহ রয়েছে এখানে। এ উৎসবের অন্যতম আয়োজক ফ্লাওয়ার সোসাইটির সভাপতি যথার্থই বলেছেন, ‘কিছুদিন আগেও শৌখিনতায় মানুষ বাড়ির আঙিনায় ফুলের গাছ রোপণ করত এবং পূজা-পার্বণেই ফুলের ব্যবহার করত। বর্তমানে তা পাল্টেছে। ফুল অর্থকরী ফসল হিসেবে বাণিজ্যিকভাবে উৎপাদন ও বিপণন হচ্ছে।’ ১৯৮২ সাল রজনীগন্ধা ফুল চাষের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশে বাণিজ্যিকভাবে ফুল উৎপাদন শুরু হয়। বর্তমানে দেশে প্রায় ২৪টি জেলায় ১২ হাজার একর জমিতে বাণিজ্যিকভাবে ফুল চাষ হচ্ছে। ফুল চাষ, বিপণন ও ফুলকেন্দ্রিক নানা কাজে সবমিলিয়ে প্রায় ২০ লাখ মানুষ এই সেক্টরের সঙ্গে সরাসরি জড়িত। দেশে উৎপাদিত হচ্ছে প্রায় সাড়ে ৮০০ কোটি টাকার ফুল। ফুল চাষের জন্য বিখ্যাত যশোর। এ জেলার ঝিকরগাছা, গদখালীসহ নানা জায়গায় ফুল চাষ হচ্ছে বাণিজ্যিকভাবে। বিভিন্ন এলাকায় ফুল চাষের প্রেরণায় বদলে গেছে বহু হতভাগ্য নারীর জীবন। দারিদ্র্য জর্জরিত পরিবারগুলো এখন সচ্ছল হয়েছে। ফুলের মেলায় এমনই দিনবদলের গল্প শোনালেন কয়েকজন স্বাবলম্বী নারী। সৌন্দর্য ও সৌগন্ধের অনন্য প্রতীক হিসেবে ফুল কেনা এবং ফুলগাছ রোপণ ও পরিচর্যার প্রয়োজনীয়তার কথা বলে গেছেন মনীষীরা। ফুল আপনার জন্য ফোটে না। অন্যকে রূপ-রস-গন্ধে ভরিয়ে দিতেই তার উন্মীলন। তাই এই ফুল থেকেও মানুষের শিক্ষা নেয়ার আছে। নিজের জীবনকেও সেভাবে অন্যের জন্যে উৎসর্গ করার মধ্যে রয়েছে জীবনের সার্থকতাÑ এটিও যেন আমরা স্মরণে রাখি।
×