ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কাঠমান্ডুতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ‘আপহেভেলস’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী

প্রকাশিত: ০৬:১৪, ১ এপ্রিল ২০১৭

কাঠমান্ডুতে বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ‘আপহেভেলস’ শীর্ষক  চিত্র প্রদর্শনী

সংস্কৃতি ডেস্ক ॥ নেপালের ললিতপুরের পার্ক গ্যালারিতে সম্প্রতি উদ্বোধন হলো বেঙ্গল ফাউন্ডেশনের ‘আপহেভেলস’ শীর্ষক চিত্র প্রদর্শনী। এর মাধ্যমে কাঠমান্ডুতে ত্রিবার্ষিকীর এ প্রদর্শনীতে বাংলাদেশকে প্রতিনিধিত্ব করছে বেঙ্গল ফাউন্ডেশন। প্রদর্শনীতে বাংলাদেশের আট শিল্পীদের চোখ দিয়ে সমসাময়িক বাংলাদেশকে তুলে ধরা হচ্ছে। নেপালে গত ২৬ মার্চ যৌথভাবে প্রদর্শনীর উদ্বোধন করেন বাংলাদেশের রাষ্ট্রদূত মাশরাফি বিনতে শামস ও কাঠমান্ডু ত্রিবার্ষিকীর প্রতিষ্ঠাতা ও চেয়ার সঙ্গীতা থাপা। প্রদর্শনীতে অংশগ্রহণকারী শিল্পীরা হলেনÑ ঢালী আল মামুন, শিশির ভট্টাচার্য, দিলারা বেগম জলি, মোস্তফা জামান, প্রমতেশ দাশ পুলক, রাজিব দত্ত, জিহান করিম ও মারজিয়া ফারহানা। প্রদর্শনী চলবে ৯ এপ্রিল পর্যন্ত। বেঙ্গল ফাউন্ডেশন সূত্রে জানা যায়, ‘আপহেভেলস’ বাংলাদেশের তিন প্রজন্মের শিল্পীর ভিন্ন ভিন্ন মাধ্যমের দ্বারা বাংলাদেশকে উপস্থাপনা। যে দেশটি বিভিন্ন রাজনৈতিক এবং আদর্শিক ঘাত প্রতিঘাতের পর এখন একটি সন্ধিক্ষণের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে যেখানে কোন নতুন ধারণার বা চেতনার উত্থানের জন্য একটি অনন্য স্থল। এটিই এই প্রদর্শনীর মূল ভাবনা যেখানে পুরনোরা পরিবর্তিত হয়ে নতুন ধারায় মিশে যেতে পারে এবং পুরনো ধ্যান ধারণা রূপান্তরিত হয়ে কোন অভূতপূর্ব রূপ নিতে পারে। এই বিপর্যয় এবং সেখান থেকে উত্থান পুরো বিষয়টি এই এলাকার রাজনৈতিক বা একটি স্বাধীন রাষ্ট্র হিসেবে উত্থিত হওয়ার ইতিহাসকেই চিত্রিত করে। বারংবার ঐতিহাসিক রূপান্তরের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ নামক এই স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম যার জাতিসত্তায় মিশে আছে বিভিন্ন ঐতিহাসিক ঘটনা-ব্রিটিশ উপনিবেশ, পরবর্তীতে পাকিস্তানের ঔপনিবেশ, রক্তক্ষয়ী মুক্তিযুদ্ধ পরবর্তীতে যুদ্ধবিধ্বস্ত একটি দেশের মাথা তুলে দাঁড়ানোর লড়াই ইত্যাদি। ব্রিটিশ সাম্রাজ্যবাদী হস্তক্ষেপের প্রভাব ঔপনিবেশবাদীদের হস্তক্ষেপের জটিল পরিণতি মোস্তফা জামানের দুইটি ভিডিও আর্টের বিষয়বস্তু। ঢালী আল মামুনের ইন্সটলেশন ১৯৪৭ এর বিভক্তির দীর্ঘস্থায়ী এবং চরম প্রভাব কে মনে করিয়ে দেয়। দিলারা বেগম জলির শিল্পানুগ সুই-কাজ এইসব অস্থির সময়ে, বিশেষ করে একাত্তরের যুদ্ধে বাংলাদেশী নারীদের সংগ্রাম এবং আত্মত্যাগের গল্প বলে। স্বাধীনতার জন্য সংগ্রামে ভাষা ও সাংস্কৃতিক বৈশিষ্ট্যকে রক্ষা করার বিষয়টিও ঐতিহাসিকভাবে বার বার গুরুত্ব বহন করেছে। বর্তমানে বিশ্বায়নের চাপে এই সংগ্রাম নতুন রূপে দেখা দিয়েছে। বাংলা ভাষা ও সাহিত্যের যে রসবোধ ধারণের শক্তি তা রাজীব দত্ত তার মুরাল অঙ্কনের মাধ্যমে তার অঙ্কন এবং ভাষার ব্যাবহার মিশ্রিত সিরিজ কাজের অংশের ‘রমিজের দিনগুলি’ মাধ্যমে তুলে ধরেছেন। স্বাধীনতার পর রাজনৈতিক ভিন্নরূপে প্রতীয়মান হয়েছে। শিশির ভট্টাচার্যের অঙ্কন কিছুটা প্যারডি ধাতে যুদ্ধের পরবর্তী উত্থান, অভ্যুত্থান ও পাল্টা-অভ্যুত্থান এবং সেই সব ঘটনার মূল চরিত্রদের তুলে ধরে। প্রমতেশ দাশ পুলকের ভাস্কর্য একইসঙ্গে স্টিলের তৈরি একটি অগ্নি নির্বাপক যন্ত্রের অংশবিশেষ এবং তরু মজ্জা দিয়ে তৈরিফুলের প্রতিকৃতির সম্মিলন যা জীবনের ভঙ্গুরতা ও তা সংরক্ষণ করার কঠিন সংগ্রামের বিষয়টি প্রতিফলন ঘটায় উত্থান এবং পতনের। বিষয়টি বাংলাদেশের দৈনন্দিন জীবনের সরল বাস্তবতায়ও প্রকাশিত হয়। পরিবেশের মনুষ্যসৃষ্ট বিপর্যয় পরিবর্তনের এবং নগরায়নের বিরূপ প্রভাবের বিপরীতে জিহান করিমের ভিডিও একটি শান্তির বার্তা দেয়। একইভাবে এই বিশৃঙ্খলায়, মানুষের মস্তিষ্কের অবস্থাকে জিজ্ঞাসাবাদ করে মারজিয়া ফারহানার কাজ যা সাধারণ ক্যালেন্ডারের পাতায় এক্রাইলিক দিয়ে মেরিলিন মনরোর বিভিন্ন অভিব্যক্তিকে বিনির্মাণ করে আধুনিক জীবনের অর্থহীনতাকে ব্যঙ্গ করে।
×