ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

১৯৫ পাকি যুদ্ধাপরাধী

প্রকাশিত: ০৬:১৩, ১ এপ্রিল ২০১৭

১৯৫ পাকি যুদ্ধাপরাধী

গণহত্যা দিবস উপলক্ষে ২৯ মার্চ আয়োজিত এক সেমিনারে আইনমন্ত্রী আবারও ১৯৫ জন পাকিস্তানী সেনা সদস্যকে দেশে ফিরিয়ে আনার কথা বলেছেন। উল্লেখ্য, এই ১৯৫ জন পাক সেনা একাত্তরে বাংলাদেশের মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ভয়াবহ ও নৃশংস গণহত্যায় জড়িত ছিল। সে কারণে তারা নিশ্চিতভাবেই যুদ্ধাপরাধী হিসেবে বিবেচিত। এখন দাবি উঠেছে, দোষী সাব্যস্ত এসব সেনাকে বাংলাদেশে ফেরত এনে আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধী ট্রাইব্যুনালে বিচার করার। উল্লেখ্য, ট্রাইব্যুনালের তদন্তকারী কর্মকর্তারা পাকিস্তানের ১৯৫ সেনা সদস্যের যুদ্ধাপরাধ সম্পর্কে তদন্ত করেছেন। ১৯৭৪ সালের ৯ এপ্রিল ভারতের রাজধানী নয়াদিল্লীতে বাংলাদেশ-ভারত পাকিস্তান স্বাক্ষরিত এক ত্রিপক্ষীয় চুক্তি অনুযায়ী পাকিস্তান তাদের বিচার করেনি বিধায় বাংলাদেশ চিঠি লিখে তাদের ফেরত চাইবে। বাংলাদেশ নেদারল্যান্ডসের হেগে অবস্থিত আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তা চাইলে তারাও নির্দেশ দিতে পারে পাকিস্তানকেÑ ১৯৫ যুদ্ধাপরাধীকে হস্তান্তরের জন্য। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালে ১৯৫ পাকিস্তানী সেনা সদস্যের বিচারের দাবি ক্রমশ জোরদার হচ্ছে দেশে। এর অবশ্য যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত কারণও আছে। বাংলাদেশের সর্বস্তরের জনগণের গণদাবির পরিপ্রেক্ষিতে কিছু বিলম্বে হলেও বর্তমান সরকার একাত্তরের কুখ্যাত যুদ্ধাপরাধী মানবতাবিরোধী পাকি দোসরদের বিচার করছে একে একে। দুঃখজনক হলো, প্রতিটি যুদ্ধাপরাধীর দ- কার্যকর হওয়ার পরপরই পাকিস্তান তাদের পক্ষাবলম্বন করে প্রতিক্রিয়া জানিয়ে প্রতিবাদ জানিয়েছে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে। আরও যা অবাক ব্যাপার তা হলো, এই প্রতিবাদ শুধু পাকিস্তান জামায়াতে ইসলামীই জানায়নি বরং তাদের সঙ্গে একই সুরে কণ্ঠ মিলিয়েছে মুসলিম লীগসহ অন্যান্য রাজনৈতিক দল ও পাকিস্তান সরকার। এতে অবশ্য এটাও প্রমাণিত হয়েছে যে, বাংলাদেশের স্বাধীনতা আন্দোলন ও মুক্তিযুদ্ধের বিরোধিতাকারীরা আসলেই ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সেনাবাহিনী এবং শাসকদের পক্ষাবলম্বন করে ঘৃণিত গণহত্যায় লিপ্ত হয়েছিল। তদুপরি এতে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের বিচারের রায় যে সঠিক ও যথার্থ, সেটাই প্রমাণিত হয়। পাকিস্তানের ‘মোটা মাথার’ শাসককুল এই বিষয়টি অনুধাবন করতে পুরোপুরি ব্যর্থ হয়েছে। ঢাকার পাকিস্তান হাইকমিশনারকে একাধিকবার পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে লিখিত প্রতিবাদ তুলে দেয়া হয়েছে। অনুরূপ হয়েছে তুরস্কের ক্ষেত্রেও। সেক্ষেত্রেও পিছু হটেনি বাংলাদেশ সরকার। তীব্র ভাষায় প্রতিবাদ জানানো হয়েছে তুরস্ক সরকারের ঔদ্ধত্যের বিরুদ্ধে। বাংলাদেশের এহেন সুদৃঢ় অবস্থান আন্তর্জাতিক অঙ্গনে প্রশংসা অর্জনে সক্ষম হয়েছে এবং একই সঙ্গে বিশ্ববাসীরও। অনেকটা এ প্রেক্ষাপটেই সামনে চলে এসেছে ১৯৫ পাক সেনার বিচারের প্রসঙ্গটি। চুক্তি মোতাবেক হস্তান্তরিত ১৯৫ পাক সেনার বিচার করার কথা ছিল পাকিস্তানের। তারা কোনদিনই তা করেনি। তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের প্রাপ্য সম্পদও তারা ফেরত দেয়নি আজ পর্যন্ত। তদুপরি বাংলাদেশে আটকে পড়া পাকিস্তানীদের ফেরতও নেয়নি এখনও। অর্থাৎ ওই চুক্তি তারা নিজেরাই লঙ্ঘন করেছে পদে পদে। ১৯৫ পাক সেনার বিচারের জন্য প্রয়োজনে জাতিসংঘসহ আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালতের সহায়তাও চাওয়া যেতে পারে। সুমহান মুক্তিযুদ্ধ বাংলাদেশের অহঙ্কার ও গর্ব। ত্রিশ লাখ শহীদ ও দুই লাখ মা-বোনের সম্ভ্রমের বিনিময়ে লাল-সবুজের অমলিন যে স্বাধীনতার পতাকা অর্জিত হয়েছে, সর্বদাই তা সমুন্নত রাখতে হবে। আর তাই একাত্তরে ঘৃণিত গণহত্যার জন্য দায়ী ১৯৫ পাক সেনার বিচার আজ পরিণত হয়েছে গণদাবিতে।
×