ঢাকায় আজ প্রথমবারের মতো অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে আইপিইউ (ইন্টার পার্লামেন্টারি ইউনিয়ন) সম্মেলন। সন্ধ্যায় এটি উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ১২৫ বছরের বনেদি এই সংগঠনটি বিশ্বের সংসদীয় রাজনীতির প্রাণকেন্দ্র হিসেবেই পরিচিত। এ সম্মেলন বাংলাদেশকে এক নতুন উচ্চতায় নিয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে। এই সম্মেলনে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে একটি ইতিবাচক বাংলাদেশের পরিচিত হওয়ার সুযোগ থাকবে। পৃথিবীর নাগরিকদের সঙ্গে বাংলাদেশের নাগরিকদের সেতুবন্ধ রচনা হবে।
উল্লেখ্য, প্রথমবারের মতো আইপিইউ-এর সভাপতি পদে নির্বাচিত হন বাংলাদেশের একজন সংসদ সদস্য। তিনি হলেন বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের তরুণ প্রজন্মের নেতা সাবের হোসেন চৌধুরী। বলাবাহুল্য, এর মাধ্যমে বাংলাদেশের প্রতি, বাংলাদেশের গণতন্ত্রের প্রতি বিশ্বের সংসদীয় সম্প্রদায়ের বড় স্বীকৃতি অর্জিত হয়। এই সঙ্গে উল্লেখ করা দরকার কমনওয়েলথভুক্ত দেশগুলোর এমপিদের সংগঠন কমনওয়েলথ পার্লামেন্টারি এ্যাসোসিয়েশনের (সিপিএ) সভাপতি নির্বাচিত হয়েছেন স্পীকার শিরীন শারমিন চৌধুরী। ১৯৭৩ সালে কমনওয়েলথে যোগদানকারী বাংলাদেশ এবারই প্রথম নেতৃত্ব দেয়ার কর্তৃত্ব পেয়েছে। ৫৩ সদস্যবিশিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ এই আন্তর্জাতিক ফোরামে নারী নেতৃত্বও বিশেষ দৃষ্টান্ত হিসেবে বিবেচিত হচ্ছে। এবারের নির্বাচনে ১৭৫টি আইনসভার ৩২১ জন ভোটার ছিলেন।
আইপিইউ-এর মতো একটি আন্তর্জাতিক সম্মেলন বাংলাদেশে হওয়ার ক্ষেত্রে বেশ কিছু বিশেষ তাৎপর্য আছে। এ সম্মেলনে প্রায় ১৭১টি দেশের প্রতিনিধিরা আসছেন। এর মধ্যে ৯৫টি দেশের জাতীয় সংসদের স্পীকার ও ডেপুটি স্পীকাররা থাকছেন। প্রতিষ্ঠিত বাস্তবতা হলো সংসদ সদস্যরাই একটি দেশের সাধারণ মানুষের জাতীয় পর্যায়ে প্রতিনিধিত্ব করেন। এখন যে বিশ্ববাস্তবতা, তার পরিপ্রেক্ষিতে জাতীয় পরিসর পেরিয়ে সংসদ সদস্যরা আন্তর্জাতিক পর্যায়েও তার প্রতিনিধিত্ব বিস্তার করছেন কিংবা করার সুযোগ পাচ্ছেন। আর সেই সুযোগ তৈরি করার ক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে আইপিইউ। এবারের সম্মেলনে বিশ্বের উল্লেখযোগ্যসংখ্যক দেশের সংসদ সদস্যরা ব্যবসা-বাণিজ্য, বিনিয়োগ থেকে শুরু করে বিশ্বের সামাজিক ও অর্থনৈতিক বৈষম্য, লৈঙ্গিক অসমতা, নিরাপত্তা, জলবায়ু পরিবর্তন, প্রযুক্তিগত বিবর্তনসহ প্রায় বিদ্যমান সব আন্তর্জাতিক ইস্যু নিয়েই কথা বলবেন। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে নতুন প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘের নতুন মহাসচিব দায়িত্ব নেয়ার বাস্তবতায় বর্তমান বিশ্ব পরিস্থিতি নিয়েও আলোচনা হবে। এর ফলে এসব বিষয়ে আমাদের দেশের সংসদ সদস্যরা জানতে পারবেন। সাধারণ মানুষও বিষয়গুলো সম্পর্কে আরও স্পষ্ট ধারণা পাবেন। সবচেয়ে বড় কথা, এত বড় সম্মেলনের আয়োজক দেশ হওয়ার মধ্য দিয়ে বাংলাদেশ বিশ্বে নতুন একটি পরিচিতি পাবে; বড় পরিসরে বাংলাদেশের ব্র্যান্ডিং হবে। এত দেশের প্রতিনিধিরা বিভিন্ন ক্ষেত্রে বাংলাদেশের সাফল্য ও সম্ভাবনার কথা জানতে পারবেন। এটা দেশের জন্য নিঃসন্দেহে অনেক বড় অর্জন।
বাংলাদেশকে নতুনভাবে তুলে ধরা তথা বাংলাদেশের সম্ভাবনা তুলে ধরা যাবে এই সম্মেলনে। তা ছাড়া আমাদের রফতানি পণ্য পোশাক শিল্প থেকে শুরু করে পাট শিল্প এবং তথ্যপ্রযুক্তি খাত যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তা স্বচক্ষে দেখার মাধ্যমে একটা ভিন্ন মাত্রায় নিয়ে যাবে বাংলাদেশকে। আমাদের কৃষ্টি, ঐতিহ্য সম্পর্কে তাদের জানানোর অন্যতম সুযোগ এই সম্মেলন। বাংলাদেশ সম্পর্কে প্রতিষ্ঠিত একটা ধারণা আছে যে, এটা প্রাকৃতিক দুর্যোগের দেশ। এখানে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা নেই। এ সম্মেলন একটি ইতিবাচক বাংলাদেশকে তুলে ধরবে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে। দেশবাসী আশা করে একটি সফল সম্মেলন আয়োজনের মধ্য দিয়ে আন্তর্জাতিক পরিসরে বাংলাদেশের ভাবমূর্তি অধিকতর উজ্জ্বল হবে।