ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সিডনির মেলব্যাগ ॥ অজয় দাশগুপ্ত

জঙ্গী কলঙ্ক মুছতে হলে সবাইকে জাগতে হবে

প্রকাশিত: ০৬:১২, ১ এপ্রিল ২০১৭

জঙ্গী কলঙ্ক মুছতে হলে সবাইকে জাগতে হবে

দেশের পরিবেশ যেন হঠাৎ করে অশান্ত হয়ে উঠেছে। সিলেট, মৌলভীবাজার, কুমিল্লা সব মিলে এক ধুন্দুমার কা-। জঙ্গীবাদের এই উগ্র চেহারা নতুন না হলেও এমন আক্রমণ ছিল অপ্রত্যাশিত। কিন্তু কেন হঠাৎ এই আক্রমণ? এই ধরনের জঙ্গীপনার পিছনে কারা আছে, কারা থাকে সেও আমাদের অজানা কিছু না। কিন্তু এতদিন ধরে প্রশাসনের বড় কর্তারা বলছিলেন এদেশে কোন আইএস নেই। যা আছে তা হলো দেশী উগ্রবাদী। এই উগ্রবাদীরা কার ইন্ধনে কাদের প্ররোচনায় এসব করে সমাজের ভালই জানা আছে। তবু আমরা মানি না, মানতে চাই না। আমাদের প্রধানমন্ত্রী বার বার করে বলেন, যারা পথভ্রষ্ট যারা বেহেশতের নাম ভাঙ্গিয়ে পরকালের লোভ দেখায় তারা আসলে জাতির দুশমন। এই দুশমনের ঠিকানা আমাদের ঘরে। সমাজের রন্ধ্রে রন্ধ্রে। বদলে যাওয়া এ দেশে সুশীল নামের প-িতরা দীর্ঘদিন ধরে নানাভাবে উস্কে দিচ্ছে এদের। সরকারের কঠোরতায় তা কিছুটা কমলেও অন্তরের বিষ নামেনি। আজ আমরা যা দেখছি তা অনেকদিনের জমানো। কি করে যেন এমন একটা ব্যাপার চালু হয়ে গেছে ধর্ম মানে এসব বিষয়ে নিশ্চুপ থাকা। অন্যদিকে যে সমাজ একদিন এসবের বিরুদ্ধে সোচ্চার ছিল, যে সংস্কৃতি একদা এর প্রতিবাদে মাঠে নামতো আজ তারাও যেন উধাও। চলছে সমঝোতার নামে এক নীরব আত্মঘাতী লড়াই। এখন অবধি আমাদের সৌভাগ্য দেশের নিরাপত্তা বাহিনী সমানে লড়ে এদের বিষদাঁত ভেঙ্গে দিচ্ছে। যে সব ঘটনা আমরা কোনদিন দেখিনি, যেসব আক্রমণ বা সন্ত্রাস বাঙালী জীবনে ভাবতে পারেনি আজ তার প্লেয়িং ফিল্ড মুক্তিযুদ্ধের বাংলাদেশ। তারুণ্যের ভেতর এমন সর্বনাশী প্রবণতা কি আসলে একা কোন মানুষ বা কোন দলের দ্বারা করানো বা জাগিয়ে দেয়া সম্ভব? বিদেশের যেসব শক্তি নীরবে কাজ করছে তাদের আপাতত অদৃশ্য মনে হলেও এরাই পেছনের খেলোয়াড়। বাংলাদেশের সবুজ প্রান্তর শ্যামল ছায়ায় মরুর যে প্রভাব তার এই উগ্র রূপ দেশে দেশে নানাভাবে বেরিয়ে আসছে। বাংলাদেশের বেলায় এর পেছনে কাজ করছে একমুখী শিক্ষা ব্যবস্থার অভাব। একদেশে একাধিক শিক্ষার কুফল এখন হাতে নাতে পাচ্ছি আমরা। কোমলমতি শিশু-কিশোরদের কি শেখানো হয়, কি তারা জানে সে বিষয়ে সমাজ শাসনের এমন নীরবতা ও সহ্য করার দিকটা কি সভ্যতার পরিচয় বহন করে? এটিএন নিউজের মুন্নী সাহা এসেছিলেন সিডনি। তার কাছ থেকে শুনেছি ধর্মীয় বিদ্যালয়গুলোতে জাতীয় সঙ্গীত না গাওয়া বা পরিচিত না করানোর অপচেষ্টার কথা। একটা দেশে একটি স্বাধীন সমাজে এটা কিভাবে সম্ভব? অথচ আমাদের দেশের শাসনভার আছে একাত্তরে নেতৃত্ব দেয়া দলের হাতে। আসলে আমরা ভুলে যাচ্ছি তাদের ভেতরেও ঘটে গেছে বিশাল পরিবর্তন। তাদের তৃণমূলে তাদের সমর্থক বাহিনীতে এখন সেই একই জোশ। একই অন্ধত্ব। যে কারণে মাঠ পর্যায়ে কোন সংগঠিত প্রতিবাদ বা প্রতিরোধ নেই। রাজনীতির বড় ভুল তার এককেন্দ্রিকতা। এটা মেনেও বলি, বিরোধী দলের কি দায়িত্ব পালন করছে বিএনপি? কোথায় তাদের সচেতনতা বা সমাজের প্রতি দায়বোধ? তারা গদিতে নেই বলে দেশে সন্ত্রাস আর দাঙ্গা বাধাতে হবে? এই সেদিন এদের প্ররোচনায় আগুনে পোড়া মানুষের আহাজারিতে আকাশ বাতাস ভারি হয়ে উঠেছিল। যানে আগুন জানে আগুন সব মিলিয়ে ভারি এক পরিবেশ। সে ভার ও এক ধরনের সন্ত্রাস বৈকি। অথচ সে দায় নেয়নি কোন রাজনীতি। স্কুলে পড়ুয়া মেয়ের একচোখ নষ্ট করার ভেতর দিয়ে যে একচোখা রাজনীতি তার কারণেই আজ দেশের এই দশা। একটি দল দেশ শাসনে থাকবে কি না থাকবে তার দায় মেটাবে নিরীহ জনগণ? এই যে এতগুলো সন্ত্রাসী ঘটনা, দেশের মানুষের বুক কাঁপানো জঙ্গীবাদ তার ব্যাপারে কোন বিরোধী দল কেন কথা বলে না? উল্টো রিজভী সাহেবরা বলেন, বিএনপিকে সভা-সমিতি ও মিছিল করতে দিলেই নাকি এসব উগ্রবাদীরা সুড়সুড় করে গর্তে ঢুকে যেত। এমন দেশ এমন সমাজ আগে দেখেছেন কেউ? যেখানে এসব কথা বলার পরও তারা আনচ্যালেন্জড থেকে যান? কেউ জানতে চায় না তাদের এসব করতে দিলেই কি সন্ত্রাস আসলে বন্ধ হয়ে যাবে? যদি তা হয়ই তবে তো বুঝতে হবে চাবিকাঠি তাদের হাতে। তারা চাইলেই এসব জঙ্গীবাদীরা নিষ্ক্রিয় হলে তারাই যুক্তিমতে গডফাদার। অথচ না সরকার না সুশীল কেউই তা হিসাব করে না। করলেও বলে না। এখন এই জঙ্গীবাদ এমন এক জায়গায় পৌঁছে গেছে যেন এটাই নিয়তি। এর কুপ্রভাব এত বেশি যে এরশাদের মতো লোকও ইসলামী জোটের ঘোষণা দেয়। তিনি প্রেসক্লাবে ইসলামী মহাজোটের ঘোষণা দেবার ভেতর দিয়ে এটাই বুঝিয়ে দিয়েছেন আসলে দেশের সাইলেন্ট মেজরিটি এমন কিছু চায়। যদি তা চায়ও তার বিরুদ্ধে যে রাজনীতির সক্রিয় ভূমিকা পালনের কথা তারা আজ নীরব। একদা যেসব নারী এদেশের চেতনা ও মুক্তির জন্যে কাজ করতেন আজ তারা ভ্রান্ত। ভ্রান্ত এদেশের যুবক যুবতীরা। একদিকে আধুনিকতা ইলেকট্রনিক বাস্তবতা আরেকদিকে তলে তলে অন্ধকারের উপাসনা। এভাবে চললে জঙ্গীবাদ কখনও আয়ত্তে আসবে না। ধরা পড়বে না মনে লুকিয়ে থাকা জঙ্গীর ঠিকানা। বড় কঠিন সময় পার করছে বাংলাদেশ। তার এই কঠিন সময়ে মূলত শেখ হাসিনা ছাড়া আর কাউকেই দেখতে পাই না যার ওপর ভরসা রাখা চলে। রাজনীতি যদি এর সমাধান দিতে না পারে দেশের পরিবেশ উন্নয়নের সঙ্গে তাল মিলাতে পারবে না। তখন এসব উন্নয়ন কথার কথা হয়ে আসল কাজকেই বিগড়ে দেবে। বাংলাদেশের সামাজিক সমস্যার অন্তরালে বড় হওয়া মনোজাগতিক জঙ্গীবাদ দমনে সংস্কৃতিকে এগিয়ে আসতে হবে। কেবল পুরস্কার আর স্বীকৃতির লোভে প্রগতিশীল সাজার দিকটা বন্ধ করুন। মানুষের ভেতর সেই চেতনা আর মুক্তি ফিরিয়ে আনুন যা একদা মুসলিম লীগের কবর রচনা করেছিল। যার ভেতর থেকে বেরিয়ে এসেছিল আদর্শিক বাংলাদেশ। সেটা না হলে এই কলঙ্ক ঘুচবে না কোনদিন।
×