ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

রমনা বটমূলে ৫০তম বর্ষবরণের সুবাদে বৈশাখ এসেছে ছায়ানটে

প্রকাশিত: ০৫:৫০, ১ এপ্রিল ২০১৭

রমনা বটমূলে ৫০তম বর্ষবরণের সুবাদে বৈশাখ এসেছে ছায়ানটে

মনোয়ার হোসেন ॥ ছায়ানটের হাত ধরেই শুরু হয়েছিল বাংলা নববর্ষ উদ্্যাপনের শহুরে রীতিটি। সেই ১৯৬৭ সালে পাকিস্তান আমলে বৈরী পরিবেশে রমনা বটমূলে অনুষ্ঠিত হয়েছিল প্রথম বর্ষবরণের আয়োজনটি। আপন সংস্কৃতির আলোয় বাঙালীর জাতিসত্তাকে মেলে ধরার সেই ঐতিহাসিক প্রয়াসটি এবার পদার্পণ করবে ৫০ বছরে। আসন্ন ১৪২৪ বঙ্গাব্দে পাঁচ দশক পূর্ণ করবে ছায়ানট আয়োজিত রমনা বটমূলে বর্ষবরণের প্রভাতী আয়োজনটি। সেই সুবাদে নতুন বাংলা বছর আসার আগেই নববর্ষ উদ্্যাপনে বর্ণিল রূপ নিয়েছে ধানম-ির ছায়ানট সংস্কৃতি ভবন। বাংলা পঞ্জিকা ধরে সময়ের আগে চৈত্র মাসেই এখানে এসেছে বৈশাখ। ছুটির দিনের সন্ধ্যায় ভবনটিতে বয়ে যাওয়া প্রাণের উচ্ছ্বাসে সেই দৃশ্যই বারবার আছড়ে পড়ল চোখে। রমনা বটমূলে পঞ্চাশতম বর্ষবরণ উপলক্ষে চার আয়োজনে সজ্জিত বিশেষ অনুষ্ঠানমালার দ্বিতীয় আয়োজনটি অনুষ্ঠিত হলো শুক্রবার। ‘আনন্দ, বাঙালীর আত্মপরিচয়ের সন্ধান ও অসাম্প্রদায়িকতা’ বিষয়টির ওপর ৫০তম বর্ষবরণ উদ্্যাপনের দ্বিতীয় অনুষ্ঠানে ছিল নববর্ষ উদ্্যাপন অভিযাত্রার স্মারণিক প্রদর্শনী। এ প্রদর্শনীতে উঠে এসেছে ১৯৬৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রমনা বটমূলে বর্ষবরণের তথ্যচিত্র। সেই সঙ্গে বৈশাখের আগমনী রংমাখা শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তনে পরিবেশিত হয়েছে নৃত্য, শুদ্ধ সঙ্গীত, পাঠাবৃত্তি ও গান। চৈতালী সন্ধ্যায় যন্ত্রসঙ্গীতের সুর মূর্ছনায় প্লাবিত হয় শ্রোতায় পরিপূর্ণ মিলনায়তন। একসঙ্গে বেজে ওঠে বেহালা, বাঁশি, সারেঙ্গির মধুর সুর ও ঢোলের বোল। সুর-ছন্দ-মূর্ছনা নামের বৃন্দ পরিবেশনা শেষে ভেসে আসে কবিগুরুর গানের সুর। ছায়ানট বিদ্যায়তনের বড়দের দল সম্মেলক কণ্ঠে গেয়ে শোনায় ‘এবার তোর মরা গাঙে বান এসেছে’। দলীয় পরিবেশনার পর একক কণ্ঠে বিক্রম দাশ গেয়ে শোনান ‘যে তোমায় ছাড়ে ছাড়ুক’। সুতপা রায় গেয়ে শোনান দ্বিজেন্দ্রলাল রায়ের গান ‘জীবনটাতো দেখা গেলো’। শুক্লা পাল সেতুর কণ্ঠে গীত হয় রজনীকান্ত সেনের গান ‘আমি অকৃতি অধম’। কাজী নজরুল ইসলামের ‘মোরা ঝঞ্ঝার মত উদ্দাম’ গানটি গেয়ে শোনায় বড়দের দল। ‘চিরযাত্রী’ শিরোনামের কবিতা আবৃত্তি করেন সুমনা বিশ্বাস। রবীন্দ্রনাথের মূল গান ও ভাঙ্গা গানের সুর সহযোগে পরিবেশিত হয় বৃন্দ নাচ। নবনীতা চক্রবর্তী গেয়ে শোনান নজরুলের গান ‘কাবেরী নদী জলে কে গো বালিকা’। এরপর একে একে রেজাউল করিম পরিবেশন করেন ‘নদীর স্রোতে মালার কুসুম’, নাহিয়ান দূরদানা সূচি শোনান ‘দক্ষিণ সমীরণ সাথে’, লতিফুন জুলিও শোনান অতুল প্রসাদ সেনের ‘আমি যাবো না, যাবো না’, নাজমুল আহসান তুহিন শোনান পরান ফকিরের ‘তুমি কোন বা দেশে’। সংগঠনের শিশু শিল্পীরা গেয়ে শোনায় আব্দুল লতিফের ‘লাখো লাখো শহীদের রক্তমাখা’। বাচিকশিল্পী রফিকুল ইসলাম আবৃত্তি করেন বিদ্রোহী কবি নজরুলের কবিতা ‘প্রবর্তকের ঘুর চাকায়’। ছোটদের দলের শিল্পীদের কণ্ঠে একেএম আব্দুল আজিজের রচনায় ‘কল কল ছল ছল’ গানটির মধ্য দিয়ে শেষ হয় এ আয়োজন। ভবনের তৃতীয় থেকে পঞ্চম তলা পর্যন্ত সেজেছে অভিযাত্রা স্মারক প্রদর্শনীতে। এতে উঠে এসেছে ১৯৬৭ থেকে ২০১৬ সাল পর্যন্ত রমনা বটমূলে ছায়ানটের প্রভাতী সঙ্গীতায়োজনের ধারাবাহিক বিবরণ। মূলত বিভিন্ন পেপার কাটিং ও আলোকচিত্র দিয়ে সাজানো হয়ে প্রদর্শনীটি। দোতলার সিঁড়ি পেরিয়ে তৃতীয় তলায় পৌঁছতেই নজর কেড়ে নেয় ইংরেজী দৈনিক অবজারভারে প্রকাশিত ছবিটি। কোন এক বর্ষবরণের আয়োজনে বটমূলে কয়েকটি সারিতে বসে গাইছেন বর্তমান ছায়ানট সভাপতি সন্্জীদা খাতুন। তাঁর সঙ্গে কণ্ঠ মেলাচ্ছেন ইফ্্ফাত আরা দেওয়ান, শাহীন সামাদ, ডালিয়া নওশীন, সাদিয়া আফরিন মল্লিকসহ বর্তমানের প্রখ্যাত কণ্ঠশিল্পীরা। ১৯৬৭ থেকে ১৯৮৭ সালের বর্ষবরণের সচিত্র তথ্য মেলে ধরা এ পর্বের নাম দেয়া হয়েছে ‘সূচনা, মুক্তিযুদ্ধ, স্বাধীনতা, বঙ্গবন্ধু হত্যা থেকে স্বৈরতন্ত্রের পতন’। ১৯৮৮ থেকে ২০০০ সালের সচিত্র তথ্যগুলোর নাম দেয়া হয়েছে ‘গণতন্ত্রের পুনর্জাগরণ’। ২০০১ সালে রমনা বটমূলে আঘাত করেছিল মৌলবাদী অপশক্তি। রুশ সংস্কৃতি কেন্দ্রে সম্প্রীতি উৎসব ॥ ঢাকার রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতির সহযোগিতায় মুক্তিযুদ্ধ একাডেমির আয়োজনে অনুষ্ঠিত হলো সম্প্রীতি উৎসব ও সংবর্ধনা অনুষ্ঠান। শুক্রবার ধানম-ির রুশ বিজ্ঞান ও সংস্কৃতি কেন্দ্র মিলনায়তনে এ অনুষ্ঠান হয়। খেলাঘরের শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব ॥ একাডেমির জাতীয় সঙ্গীত, আবৃত্তি ও নৃত্যকলা কেন্দ্র মিলনায়তনে চলছে কেন্দ্রীয় খেলাঘর আসর আয়োজিত তিন দিনের খেলাঘর জাতীয় শিশু-কিশোর সাংস্কৃতিক উৎসব ও প্রতিযোগিতা। শুক্রবার উৎসবের দ্বিতীয় দিনে প্রধান অতিথি ছিলেন ইমিরেটাস অধ্যাপক ড. সিরাজুল ইসলাম চৌধুরী। বিশেষ অতিথি ছিলেন শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। লেখিকা সংঘের সাহিত্য পদক প্রদান ও গুণীজন সংবর্ধনা ॥ বাংলাদেশ লেখিকা সংঘ সাহিত্য পদক প্রদান ও গুণীজন সংবর্ধনার আয়োজন করেছে। প্রতিষ্ঠানটির ৪৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী উপলক্ষে শুক্রবার বিকেলে জাতীয় জাদুঘরে এ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।
×