ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

এবার গ্রাহকের অর্থে নির্মাণ করা হচ্ছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ১ এপ্রিল ২০১৭

এবার গ্রাহকের অর্থে নির্মাণ করা হচ্ছে পায়রা বিদ্যুত কেন্দ্র

রশিদ মামুন ॥ এবার গ্রাহকের অর্থে গড়ে ওঠা তহবিল থেকে পায়রা-১৩২০ মেগাওয়াট বিদ্যুতকেন্দ্রের ইক্যুইটির সংস্থান করে দিচ্ছে সরকার। প্রতি মাসের বিদ্যুত বিলের সঙ্গে নির্দিষ্ট পরিমাণ অর্থ পরিশোধ করেন গ্রাহক। এই অর্থেই গড়ে ওঠেছে বিদ্যুত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন তহবিল। যা পরিচালিত হয় বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের (বিআইরসি) নীতিমালা অনুযায়ী। বিদ্যুত খাতের বৈপ্লবিক পরিবর্তনের জন্য সরকার যে সকল নীতি গ্রহণ করছে এ তহবিল ব্যবস্থাপনা তার একটি। পরিকল্পনায় থাকা বড় কয়লাচালিত বিদ্যুতকেন্দ্রের মধ্যে এখন পর্যন্ত পায়রা বিদ্যুতকেন্দ্রের নির্মাণকাজ শুরু হয়েছে। দেশীয় কোম্পানি নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানি (এনডব্লিউপিজিসিএল) এবং চায়না ন্যাশনাল মেশিনারি ইমপোর্ট এ্যান্ড এক্সপোর্ট কর্পোরেশন (সিএমসি) বিদ্যুত কেন্দ্রটির উদ্যোক্তা। বিদ্যুত কেন্দ্রটি নির্মাণে বাংলাদেশ চায়না পাওয়ার কোম্পানি প্রাইভেট লিমিটেড (বিসিপিসিএল) নামে পৃথক কোম্পানি করেছে উদ্যোক্তারা। চীনের এক্সিম ব্যাংকের আর্থিক সহায়তায় বিদ্যুতকেন্দ্রটি নির্মাণ করা হচ্ছে। কেন্দ্র নির্মাণে ৮০ ভাগ ঋণ দিচ্ছে চীনের এক্সিম ব্যাংক। বাংলাদেশ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের সচিব মোঃ ফয়জুর রহমান স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে গত ২৭ মার্চ তহবিল থেকে ইক্যুইটির এক হাজার ১৮৪ কোটি টাকা দেয়ার বিষয়ে অনুমোদন দেয়া হয়। এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের একজন সদস্য জানান, বিদ্যুত খাতে সরকারের পরিকল্পনা বাস্তবায়নে কোথাও আর্থিক সঙ্কট দেখা দিলে এই তহবিল থেকে অর্থ প্রদান করা হয়। সঙ্গত কারণে এখন আর কেউ আর্থিক সঙ্কটে আটকে থাকবে না। এ তহবিলের অর্থ জমা থাকে পিডিবির কাছে। মন্ত্রণালয়ের একটি কমিটি প্রকল্প বাছাই করে এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের অনুমোদন নিয়ে প্রকল্পের অনুকূলে অর্থ বরাদ্দ করা হয়। এখন পর্যন্ত এ তহবিলে জমা অর্থের পরিমাণ চার হাজার কোটি টাকা। এর আগে তহবিলের অর্থে বিবিয়ানাতে একটি গ্যাসচালিত বিদ্যুতকেন্দ্র নির্মাণ করা হচ্ছে। এছাড়া সিলেটে একটি বিদ্যুতকেন্দ্রকে রিপাওয়ারিং এবং কয়েকটি বিদ্যুতকেন্দ্রর সংস্কার করা হবে। বিদ্যুত বিভাগের উপসচিব মাহফুজা আখতার স্বাক্ষরিত একটি চিঠিতে গত ১৫ মার্চ এনার্জি রেগুলেটরি কমিশনের কাছে এ বিষয়ে অনুমোদন প্রদানের অনুরোধ করা হয়। ওই চিঠিতে বলা হয়, বিদ্যুতকেন্দ্রটির শতকরা ৮০ ভাগ ঋণের বিপরীতে ২০ ভাগ ইক্যুইটি থাকছে। এই ইক্যুইটির ৫০ ভাগ নর্থ ওয়েস্ট পাওয়ার জেনারেশন কোম্পানিকে প্রদান করতে হবে। এ জন্য মোট এনডব্লিউপিজিসিএলের এক হাজার ৯৮৪ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে হবে। ইতোমধ্যে এনডব্লিউপিজিসিএল ভূমি উন্নয়ন বাবদ ৫০০ কোটি টাকা এবং নিজস্ব তহবিল থেকে ৩০০ কোটি টাকা প্রদান করেছে। এর বাইরে কোম্পানিটির আরও এক হাজার ১৮৪ কোটি টাকা প্রয়োজন। যা বিদ্যুত রক্ষণাবেক্ষণ এবং উন্নয়ন তহবিল থেকে প্রদান করার জন্য অনুরোধ করে বিদ্যুত বিভাগ। আল্ট্রা সুপার ক্রিটিক্যাল প্রযুক্তির বিদ্যুতকেন্দ্রটির প্রথম ইউনিট উৎপাদনে আসবে আগামী ২০১৯ সালের জুন মাসে আর দ্বিতীয় ইউনিট উৎপাদনে আসবে একই বছর ডিসেম্বরে। বিদ্যুতকেন্দ্রর ইউনিট প্রতি উৎপাদন ব্যয় হবে ছয় টাকা ৬৫ পয়সা। চীন, অস্ট্রেলিয়া এবং ইন্দোনেশিয়া থেকে বিদ্যুতকেন্দ্রটির জন্য কয়লা আমদানি করা হবে। বলা হচ্ছে বিদ্যুতকেন্দ্র পর্যন্ত পৌঁছাতে টনপ্রতি কয়লার ব্যয় দাঁড়াবে ১০০ ডলার। বিদ্যুতকেন্দ্রের সব থেকে উল্লেখযোগ্য দিক হচ্ছে পুনর্বাসন পরিকল্পনা। বিদ্যুতকেন্দ্রের সঙ্গে একটি সমন্বিত পুনর্বাসন পন্থার উদ্ভাবন করা হয়েছে। এতে মানুষকে ঘর বাড়ির সঙ্গে শিক্ষা এবং কাজের সুযোগ করে দেয়া হচ্ছে। পুনর্বাসন পরিকল্পনায় দেখা যায় যারা ২০ ডেসিমেলের কম জমি হারিয়েছেন তারা ছয় ডেসিমেল করে জমি পাবেন সঙ্গে এক হাজার বর্গফুটের সেমিপাকা বিল্ডিং পাবেন। আর যারা ২০ ডেসিমেলের ওপরে জমি হারিয়েছেন তারা আট ডেসিমেল জমি পাবেন সঙ্গে এক হাজার ২০০ বর্গফুটের সেমিপাকা ঘর পাবেন। একইসঙ্গে আধুনিক পানি সরবরাহ ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা গড়ে দেয়া হবে। যেসব পরিবার দোকান হারিয়েছে তাদের জন্য দোকান ঘরও তৈরি করে দেয়া হচ্ছে। চরের মানুষের জীবন বদলে দিতে বিসিপিসিএল কেন্দ্র এলাকায় বিদ্যুত নিচ্ছে, রাস্তা নির্মাণ করছে, অভ্যন্তরীণ সকল রাস্তায় বৈদ্যুতিক বাতির ব্যবস্থা করা হচ্ছে। গড়ে তোলা হচ্ছেÑ কমিউনিটি ক্লিনিক, মসজিদ, ঈদগাহ, অফিস কাম কমিউনিটি সেন্টার, শিশুদের জন্য থাকবে খেলার মাঠ, প্রকল্পের ক্ষতিগ্রস্ত পরিবারের শিশুদের জন্য পাশেই স্কুল থাকবে, সাঁতার শেখার জন্য পুকুর, গ্রামের মধ্যেই গো-চারণ ক্ষেত্র তৈরি করে দেয়া হবে।
×