ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

রাইসিনা হিলে ৭ এপ্রিল প্রণব মুখার্জীর ডিনারে আমন্ত্রিত মমতা

প্রকাশিত: ০৫:৪৬, ১ এপ্রিল ২০১৭

রাইসিনা হিলে ৭ এপ্রিল প্রণব মুখার্জীর ডিনারে আমন্ত্রিত  মমতা

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার দিল্লী সফরকালে তার সম্মানে ভারতের রাষ্ট্রপতি প্রণব মুখোপাধ্যায়ের ডিনারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়কেও আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আগামী ৭ এপ্রিল প্রধানমন্ত্রীর সফরের প্রথমদিনই রাষ্ট্রপতি ভবন রাইসিনা হিলে এই ডিনার হবে। দিল্লীর কূটনৈতিক সূত্র জানায়, তিস্তা চুক্তির জট খুলতে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতাকে ওই ডিনারে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। আনুষ্ঠানিক আমন্ত্রণের একটি চিঠি রাষ্ট্রপতি ভবন থেকে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীর কাছে পাঠানো হয়েছে। মমতা এই আমন্ত্রণ গ্রহণ করেছেন কি না, তা জানা যায়নি। তবে তার দল তৃণমূল কংগ্রেসের এক নেতা জানিয়েছেন, কেন্দ্রীয় সরকার তিস্তার আলোচনায় পশ্চিমবঙ্গকে অন্তর্ভুক্ত করতে চাইলে মমতা দিল্লীতে হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে রাজি হবেন। চারদিনের সফরে আগামী ৭ এপ্রিল শেখ হাসিনা দিল্লী পৌঁছাবেন। সফরের আগে তিস্তা চুক্তি নিয়ে বাংলাদেশ ও ভারতে নানা পর্যায়ে বিভিন্ন আলোচনা চলছে। গত সপ্তাহে মমতা অভিযোগ করেন, পশ্চিমবঙ্গকে না জানিয়েই ভারতের কেন্দ্রীয় সরকার বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তির দিকে অনেকখানি এগিয়ে গেছে। সম্প্রতি কলকাতার একটি টেলিভিশনে ‘মুখোমুখি মুখ্যমন্ত্রী’ অনুষ্ঠানে মমতা বলেছেন, আমি তো শুনছি ২৫ মে নাকি বাংলাদেশে গিয়ে তিস্তা চুক্তি হবে। অথচ আমি এখনও কিচ্ছু জানি না। এ ধরনের যে কোন চুক্তির আগে রাজ্যের স্বার্থকে বিবেচনায় নিতে হবে বলেও মন্তব্য করেন তৃণমূলনেত্রী মমতা। তিনি আরও বলেন, তোমরা যদি সবকিছু রেডি করে আমাকে বল স্ট্যাম্প মারার জন্য, স্যরি! আমাকে রাজ্যের স্বার্থ দেখতে হবে। আমি বাংলাদেশকে ভালবাসি। বাংলাদেশকে যতটা হেল্প করার আমি করব, তবে রাজ্যকে বাঁচিয়ে। এর প্রতিক্রিয়ায় ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, বাংলাদেশের সঙ্গে তিস্তা চুক্তি সই করার আগে পশ্চিমবঙ্গসহ সব অংশীদারের সঙ্গেই আলোচনা করা হবে। তিস্তা চুক্তি না হওয়ার জন্য ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের পক্ষ থেকে বরাবরই পশ্চিমবঙ্গের রাজ্য সরকারের আপত্তিকে বাধা হিসেবে দেখান হয়েছে। এ নিয়ে বিজেপিবিরোধী নেত্রী মমতার সঙ্গে তাদের কোন আলোচনাই ফলপ্রসূ হয়নি। এবারের সফরে প্রণবের অভিজ্ঞতা এবং মমতা ও হাসিনার সুসম্পর্ককে কাজে লাগিয়ে নয়াদিল্লী ‘যত দ্রুত সম্ভব’ তিস্তার সমাধান করতে চায় বলে দিল্লীর সরকার ঘনিষ্ঠ সূত্রগুলো ইঙ্গিত দিয়েছিল। তার অংশ হিসেবেই রাষ্ট্রপতির ডিনারে পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। মমতার পাশাপাশি বাংলাদেশ লাগোয়া রাজ্যগুলোর মুখ্যমন্ত্রীদেরও হাসিনার মুখোমুখি বসানোর চিন্তা চলছে বলে সূত্রগুলো জানিয়েছে। ২০১১ সালে ভারতের তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী মনমোহনের ঢাকা সফরের সময় তিস্তা চুক্তি সই হওয়ার কথা থাকলেও পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় শেষ মুহূর্তে আপত্তি তোলায় বিষয়টি আটকে যায়। এর প্রায় সাড়ে তিন বছরের মাথায় ২০১৫ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবসের অনুষ্ঠানে যোগ দিতে ঢাকা এসে শীঘ্রই তিস্তার জট খোলার আশা দেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়। এরপর একই বছর ৬ জুন ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির ঢাকা সফরের সময় মমতার সঙ্গে আলোচনা শুরু হলে পুরনো কাঠামোতে তিস্তা চুক্তি নিয়ে আপত্তি জানিয়ে আবারও বেঁকে বসেন তিনি। শেষ পর্যন্ত ঢাকা সফরে তিস্তা চুক্তি না করার আশ্বাস দিয়েই প্রধানমন্ত্রী মোদি পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রীকে সফরে আসতে রাজি করান। ফেব্রুয়ারিতে ঢাকায় সফরে এসে তিস্তার বিষয়ে তার প্রতি আস্থা রাখতে বলেছিলেন মমতা। তবে তিনি আস্থা রাখতে বললেও তার বিরোধিতার কারণেই ২০১১ সালে তিস্তা চুক্তি হতে হতেও আটকে যায়। ভারতের তখনকার প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের সঙ্গে সফরে আসার কথা থাকলেও শেষ মুহূর্তে নিজেকে সরিয়ে নেন মমতা। তিনি তখন বলেছিলেন, পশ্চিমবঙ্গের মানুষের স্বার্থের বিরুদ্ধে গিয়ে এই চুক্তিকে তিনি সমর্থন করতে পারেন না। তবে মমতা প্রকাশ্যে এ কথা বললেও একাধিক ঘরোয়া বৈঠকে নির্বাচনের পরে তিস্তা চুক্তি নিয়ে অগ্রসর হবেন বলে জানিয়েছিলেন। উল্লেখ্য, ২০১০ সালের জানুয়ারিতে শেখ হাসিনার দিল্লী সফরের সময়েও মমতা দিল্লীতে আমন্ত্রিত হয়েছিলেন। শাড়ি উপহার নিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করেছিলেন। এবারও তিনি শেখ হাসিনার সঙ্গে দেখা করতে পারেন। রাষ্ট্রপতির সাথে ডিনারের সময় সেখানে শেখ হাসিনার সঙ্গে একটি বৈঠকও হতে পারে।
×