ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

কুসিক নির্বাচন ॥ আস্থার পরীক্ষায় বড় সাফল্য বর্তমান ইসির

প্রকাশিত: ০৫:৪৫, ১ এপ্রিল ২০১৭

কুসিক নির্বাচন ॥ আস্থার পরীক্ষায় বড় সাফল্য বর্তমান ইসির

শাহীন রহমান ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে আস্থার সঙ্গেই বৈতরণী পার হতে পেরেছে ইসি। এ নির্বাচন নিয়ে প্রথম থেকেই কঠোর অবস্থানে ছিল তারা। আর এই কঠোর অবস্থানের কারণে শেষ পর্যন্ত শান্তিপূর্ণ নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। বর্তমান সিইসি দায়িত্ব নেয়ার পর একাধিক নির্বাচন সম্পন্ন হলেও কুমিল্লা সিটি নির্বাচন ছিল বড় কোন নির্বাচন। রাজনৈতিক প্রতিদ্বন্দ্বিতা থাকায় দেশবাসীর নজর ছিল কুমিল্লার দিকে। অপরদিকে নির্বাচন কমিশনের জন্যও এ নির্বাচন ছিল আস্থার পরীক্ষা। দলীয় ভিত্তিতে নির্বাচন হওয়ায় তা সুষ্ঠু করাও ছিল ইসির জন্য বড় চ্যালেঞ্জ। শেষ পর্যন্ত সব চ্যালেঞ্জ মোকাবেলা করে নির্বাচন সুষ্ঠু করাও বর্তমান ইসির জন্য বড় একটি সাফল্য। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এখন দেখার বিষয় আগামী নির্বাচনগুলো তারা কতটা সাফল্যের সঙ্গে মোকাবেলা করতে সক্ষম হয়। ইসি সূত্রে জানা গেছে, আগামী বছরের শেষ নাগাদ তারা একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন পরিকল্পনা নিয়ে অগ্রসর হচ্ছেন। ইতোমধ্যে জাতীয় নির্বাচনের প্রাথমিক প্রস্তুতিও তারা শুরু করেছেন। তবে একাদশ নির্বাচনের আগে বর্তমান ইসির আরও একাধিক নির্বাচনের পরীক্ষা দিতে হবে। জানা গেছে আগামী বছরের যেকোন সময় অনুষ্ঠিত হবে দেশে পাঁচটি বড় সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। বিশেষ করে খুলনা, রাজশাহী, বরিশাল, সিলেট ও গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন আগামী জাতীয় নির্বাচনের আগেই সম্পন্ন করতে হবে। এসব নির্বাচনের পরেই হবে জাতীয় সংসদ নির্বাচন। বিশেষজ্ঞদের প্রশ্ন সামনের নির্বাচনও তাদের জন্য একটি পরীক্ষা। যেহেতু আইন অনুযায়ী দলীয় সরকারের অধীনে হবে আগামী জাতীয় নির্বাচন। এছাড়াও স্থানীয় সরকার নির্বাচনও দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় রাজনৈতিক দলের হস্তক্ষেপ মোকাবেলা করাও তাদের জন্য বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ। গত ১৫ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিক দায়িত্ব গ্রহণ করেন কেএম নুরুল হুদার নেতৃত্বাধীন নির্বাচন কমিশন। এর আগে রকীব কমিশন বিদায় নিলেও তাদের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের গ্রহণযোগ্যতা নিয়ে নানা মহলের প্রশ্ন রয়েছে। যদিও রকীব কমিশনের শুরু হয়েছিল সাফল্যের সঙ্গেই। তাদের শেষটাও ছিল প্রশংসনীয়। দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে তাদের অধীনে সবগুলো নির্বাচন ছিল অবাধ সুষ্ঠু। আবার বিদায়ের আগেও নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন হয়েছে। যা নিয়ে কোন মহলেই প্রশ্ন ছিল না। কিন্তু দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরে তাদের অধীনে অনুষ্ঠিত অনেক নির্বাচন নিয়ে সাধারণ জনগণের মধ্যে প্রশ্ন রয়েছে। এ অবস্থায় বর্তমান কমিশনের দায়িত্ব পালন অনেকটা চ্যালেঞ্জের হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে বর্তমান কমিশন দায়িত্ব নেয়ার পর কতটা আস্থার সঙ্গে দায়িত্ব পালনের সক্ষম হন সেটাই ছিল জনগণের দেখার বিষয়। তবে দায়িত্ব নেয়ার পর থেকে এখন পর্যন্ত যতগুলো নির্বাচন এই ইসির অধীনে হয়েছে সবগুলোই শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু হয়েছে। এখন পর্যন্ত কোন নির্বাচন নিয়েই প্রশ্ন ওঠেনি। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন, দায়িত্ব নেয়ার পর কমিশনের প্রতি জনগণের আস্থা ফেরানোও তাদের একটা চ্যালেঞ্জের বিষয়। তাই প্রথম থেকে সব নির্বাচনেই তাদের কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হচ্ছে যাতে নির্বাচন নিয়ে কোন ধরনের প্রশ্ন না ওঠে। যদিও তারা বলছেন, কুমিল্লা নির্বাচন ছাড়া এখন পর্যন্ত এই ইসির অধীনে বড় কোন নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়নি। তাই সামনের সব নির্বাচন তাদের জন্য এক ধরনের চ্যালেঞ্জ। এছাড়াও আগামী জাতীয় নির্বাচনও অনুষ্ঠিত হবে রাজনৈতিক সরকারের অধীনে। একটি দলীয় সরকারের অধীনে কঠোর অবস্থানে থেকে নির্বাচন কতটা সুষ্ঠুভাবে পরিচালনা করতে পারবে সেটাও দেখার বিষয় রয়েছে। গত মাসের ২০ তারিখে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেন প্রধান নির্বাচন কমিশনার কেএম নুরুল হুদা। তফসিল ঘোষণার পর থেকেই এ নির্বাচন সুষ্ঠু করতে তাদের কঠোর পদক্ষেপ নিতে হয়েছে। এই নির্বাচন উপলক্ষে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বৈঠকেও তিনি নির্বাচন সুষ্ঠু করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন। একই সঙ্গে তিনি বলেন, যারাই অনিয়মের সঙ্গে জড়িত থাকবে তাদের বিরুদ্ধে শাস্তিমূল ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলেন। নির্বাচনে দুদিন আগে ইসি সচিব মোহাম্মদ আবদুল্লা সাংবাদিকদের বলেন, মেসেজ ক্লিয়ার, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু করতে হবে। এর বিকল্প কিছুই ভাবছে না নির্বাচন কমিশন। তবে আগে নির্বাচনগুলো বিএনপির পক্ষ থেকে মাঠের পরিবেশ নিয়ে অব্যাহত অভিযোগ করলে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলটির পক্ষ থেকে ঢালাও অভিযোগ করতে দেখা যায়নি। দলটির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী ইসির বিরুদ্ধে গতানুগতিক ভাষায় সমালোচনা করেন। নির্বাচন অনুষ্ঠানের আগে গত ২৭ মার্চ প্রথম দলের পক্ষ থেকে একটি প্রতিনিধি দল সিইসির সঙ্গে দেখা করতে যায়। প্রায় আধঘণ্টা সিইসির সঙ্গে বৈঠক শেষে রিজভী তার প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে নির্বাচন কমিশকে আশাবাদী মনে হয়েছে। বর্তমান সিইসি একজন আত্মবিশ্বাসী মানুষ। চাকরি জীবনে সর্বোচ্চ পর্যায়ে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি উল্লেখ করেন সিইসি নুরুল হুদা একজন সজ্জন ব্যক্তি। এছাড়াও বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খানও প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করে এই ইসির অধীনে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন ভোট সুষ্ঠু হওয়ার বিষয়ে আশাবাদ ব্যক্ত করেন। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, আমাদের মনে হয়েছে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি রক্ষায় ইসি খুব সিরিয়াস। সুষ্ঠু ভোটের জন্য সব ধরনের ব্যবস্থা নেবেন বলেছেন সিইসি। কমিশন এ পর্যন্ত যেসব কথা বলেছে তার সঠিক বাস্তবায়ন হলে ভোট সুষ্ঠু হবে বলে উল্লেখ করেন। অপর দিকে নির্বাচনের দুদিন আগে ক্ষমতাসী আওয়ামী লীগের একটি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনের সঙ্গে সাক্ষাত করেন। সিইসির সঙ্গে বৈঠকে প্রতিনিধি দলের প্রধান এইচটি ইমাম বলেন, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে বেশি নিরপেক্ষতা দেখাতে গিয়ে ইসি ক্ষমতাসীনদের প্রতি নিষ্ঠুর আচরণ করছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছে দুই দলের প্রতিক্রিয়া থেকেই বোঝা যায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে ইসি প্রথম থেকেই আন্তরিক ছিল। এখানে কোন দলের প্রতি তারা পক্ষপাতিত্ব করেনি। তাদের গৃহীত পদক্ষেপের পরেই অবাধ সুষ্ঠু নিরপেক্ষভাবেই সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচন শেষে সিইসি তার এক প্রতিক্রিয়ায় বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে তারা শতভাগ সফল হয়েছে। যদিও নির্বাচনে বিচ্ছিন্ন কিছু ঘটনা ঘটেছে। তারপর শেষ পর্যন্ত ইসির কঠোর অবস্থানের কারণে কেউ অনিয়ম করতে পারেনি। এদিকে স্বয়ং প্রার্থীরা ফল মেনে নিয়েছেন। নির্বাচনের পর পরাজিত ক্ষমতাসীন দলের প্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা বলেন, কিছু অনিয়ম বাদ দিলে নির্বাচন সুষ্ঠুই হয়েছে। তিনি নির্বাচনের ফল মেনে নেন। অপরদিকে বিজয়ী বিএনপি প্রার্থী মনিরুল ইসলাম সাক্কুও ফল মেনে নিয়ে বলেন, নির্বাচন আরও সুষ্ঠু হলেও তিনি আরও অধিক ভোটের ব্যবধানে জিততে পারতেন।
×