ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

আলোচনায় বক্তারা

শহীদুল্লাহ কায়সার এখনও জীবন্ত কর্মে, আদর্শে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ১ এপ্রিল ২০১৭

শহীদুল্লাহ কায়সার এখনও জীবন্ত কর্মে, আদর্শে

স্টাফ রিপোর্টার ॥ শহীদুল্লাহ কায়সার একাধারে সাংবাদিক, সাহিত্যিক ও রাজনীতিবিদ ছিলেন। তিনি ছিলেন সাংবাদিকদের সবচেয়ে বড় ভরসার জায়গা। ভাষা আন্দোলনের সময় নিষিদ্ধ বাম পার্টির সঙ্গে সম্পৃক্ত থাকলেও বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে যোগাযোগ রাখতেন। তার উপন্যাসে উঠে এসেছে বাঙালী জীবনের দর্শন, লড়াই ও সংগ্রামের চিত্র। তার জীবন থেকে তরুণ প্রজন্মের অনেক কিছু শেখার রয়েছে। শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সার এখনও জীবন্ত তার আদর্শ ও কর্মে। শুক্রবার বিকেলে বাংলা একাডেমির কবি শামসুর রাহমান সেমিনার কক্ষে শহীদ সাংবাদিক, সাহিত্যিক শহীদুল্লাহ কায়সারের ওপর নির্মিত প্রামাণ্যচিত্র ‘শহীদুল্লাহ কায়সার-সংশপ্তক’র উদ্বোধনী প্রদর্শনী উপলক্ষে আলোচনায় বক্তারা এসব কথা বলেন। ৫৮ মিনিটের প্রমাণ্যচিত্রটিতে উঠে এসেছে শহীদুল্লাহ কায়সারের বেড়ে ওঠা, কলকাতায় তারুণ্যে উদ্দীপ্ত এক তরুণের পথচলা। আরও আছে যৌবনে প্রতিবাদী যুবকের দর্শনসহ রাজনৈতিক, সাংবাদিকতা ও সাহিত্যের অজানা অনেক তথ্য। উদ্বোধনী প্রদর্শনীতে দেখানো ৩৮ মিনিটের প্রমাণ্যচিত্রে শহীদ শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্তান শমী কায়সার যখন বাবার স্মৃতি তুলে আনতে কলকাতার অলিগলিতে ঘুরে বেড়াচ্ছিলেন, সেই দৃশ্য শিহরণ জাগিয়েছে দর্শকসারিতে বসা প্রত্যেকের। প্রদর্শনীর পূর্বে আলোচনায় অংশ নিয়ে প্রধান অতিথির বক্তব্যে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সারের আমি একটি বই পড়েছি। সংশপ্তক বইটি পড়ে মনে হয়েছে এ এক বিশাল ক্যানভাস। তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সারকে আমি ব্যক্তিগতভাবে কোনদিন দেখিনি। তিনি আরও বলেন, শহীদ বুদ্ধিজীবীদের চেতনা, আদর্শ ও জীবনের খুঁটিনাটি যাতে তরুণ প্রজন্ম জানতে পারে, তাদের নিয়ে যাতে আরও বেশি বেশি লেখালেখি হয়, প্রামাণ্যচিত্র নির্মিত হয়; সে জন্য একটি ফান্ড গঠন করা হবে। অনুষ্ঠানে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, অনেকের মতোই শহীদুল্লাহ কায়সারকে আমরা শহীদ ভাই বলেই ডাকতাম। ’৬৯-এর গণঅভ্যুত্থানে যে দুজন সাংবাদিক আমাদের বুদ্ধি-পরামর্শ দিয়ে সহায়তা করেছেন তাদের একজন শহীদুল্লাহ কায়সার। তিনি বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সারের সংশপ্তক ও সারেং বৌ উপন্যাস দুটি অনবদ্য সৃষ্টি। একুশে পদকপ্রাপ্ত ও দেশবরেণ্য সাংবাদিক দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক তোয়াব খান বলেন, শহীদুল্লাহ কায়সারকে শহীদ ভাই বলে ডাকতাম। যখন সংবাদে কাজ করেছি তখনকার অবস্থাটা আমি বলতে পারি। সংবাদ শুধু পত্রিকা ছিল না, রাজনীতিবিদদের আশ্রয়স্থল ছিল। সংবাদ গণতন্ত্রকামী রাজনীতিবিদ ও বামপন্থীদের অভয়স্থলে পরিণত হয়েছিল। সংবাদের নির্বাহী সম্পাদক মনিরুজ্জামান বলেন, শহীদ ভাই এবং সংবাদ অবিচ্ছিন্ন সত্তা। উনি যখন সংবাদে ছিলেন তখন আমি একটি সাহিত্য পত্রিকার সঙ্গে সংযুক্ত। আজ সাংবাদিকরা যে জিনিসটির অভাব অনুভব করে তা হচ্ছে ভরসা। শহীদ ভাই ছিলেন সাংবাদিকদের ভরসার জায়গা। শহীদুল্লাহ কায়সারের স্ত্রী অধ্যাপিকা পান্না কায়সার বলেন, রায়েরবাজারে আমি একটা একটা করে লাশ উল্টে দেখেছি, খুঁজেছি। কোন স্ত্রীর ভাগ্যে যেন এমনটি না ঘটে। শহীদল্লাহ এখনও আমার কাছে জীবন্ত, যেন প্রতিরাতেই তার সঙ্গে আমার কথা হয়। তিনি বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় সিগারেটের সাদা কাগজে সে কিছু কথা লিখত, যা পরবর্তীতে অক্ষরে অক্ষরে মিলে যেত। শহীদুল্লাহ কায়সারের সন্তান শমী কায়সার বলেন, প্রামাণ্যচিত্রটি নির্মাণ করতে গিয়ে আমি অনেকের সাক্ষাতকার নিয়েছি। সব সাক্ষাতকার নিয়ে যখন এডিটিং করতে বসেছি তখন মনে হয়েছেÑ আমি এই ছোট্ট ফ্রেমে কীভাবে শহীদুল্লাহ কায়সারকে জায়গা দেব। তিনি বলেন, বাবার ডায়রি পড়ে নিজেকে নতুনভাবে চিনেছি। মনে হয়েছে এ কাজটি কেন আগে শুরু করিনি। আলোচনায় আরও অংশ নেন, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির নির্বাহী সভাপতি লেখক সাংবাদিক শাহরিয়ার কবির, মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘরের ট্রাস্টি ড. সারোয়ার আলী, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খান ও প্রজন্ম একাত্তরের শাহীন রেজা নূর। এর আগে খেলাঘরের শিশু সদস্যদের গানের পরিবেশনার মাধ্যমে অনুষ্ঠান শুরু হয়।
×