ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

নতুন জঙ্গী আস্তানার খোঁজে মাঠে নেমেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

প্রকাশিত: ০৫:৪১, ১ এপ্রিল ২০১৭

নতুন জঙ্গী আস্তানার খোঁজে মাঠে নেমেছে  আইনশৃঙ্খলা বাহিনী

শংকর কুমার দে ॥ সারাদেশে আরও কত জঙ্গী আস্তানা আছে তার জন্য নতুন করে অনুসন্ধান শুরু করেছে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী। এসব জঙ্গী আস্তানায় আত্মঘাতী জঙ্গীর সংখ্যাই বা কত? জঙ্গী আস্তানাগুলোতে এত বিস্ফোরকের মজুদ ভা-ার গড়ে তুলছে কিভাবে? এর উৎস কোথায়? জঙ্গীদের সুইসাইডাল ভেস্ট এখন নতুন আতঙ্কের নাম। সুইসাইডাল স্কোয়াডে পুরুষ জঙ্গীদের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে নারী জঙ্গীও। জঙ্গীরা যেভাবে মরিয়া হয়ে উঠেছে। তাতে জঙ্গীবিরোধী অভিযানের নতুন কৌশল অবলম্বনের চিন্তাভাবনা করা হচ্ছে। সিলেট ও কুমিল্লায় খুঁজে পাওয়া জঙ্গী আস্তানায় অভিযান শেষ হলেই আবারও দেশব্যাপী জঙ্গীবিরোধী অভিযান পরিচালনা শুরু করা হবে। পুলিশ সদর দফতর ও গোয়েন্দা সংস্থার সূত্রে এ খবর জানা গেছে। পুলিশ সদর দফতর সূত্রে জানা গেছে, মার্চ মাসে রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশে অন্তত ১১টি জঙ্গী অভিযান ও আক্রমণের ঘটনা ঘটেছে যাতে অন্তত ১৮ জন জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে, গ্রেফতার হয়েছে অন্তত ৬ জঙ্গী। এ ছাড়াও আত্মঘাতী বিস্ফোরণে দুই জঙ্গী নিহত হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধে নিহত হয়েছে জঙ্গীরা তাদের আস্তানায়। সিলেটের শিববাড়ির আতিয়া মহলে ৪ জঙ্গী ও মৌলভীবাজারে এক জঙ্গী আস্তানায়ই ৭-৮ জঙ্গী নিহত হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এর আগে সীতাকু-ে এক জঙ্গী আস্তানায় ৪ জঙ্গী নিহত হয়েছে। এসব জঙ্গী আস্তানায় নিহত জঙ্গীদের মধ্যে নারী জঙ্গী ও রয়েছে যারা সুইসাইডাল স্কোয়াডের সদস্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী অভিযান পরিচালনা শুরু করলে তারা নিজেরাই আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে আত্মহত্যা করেছে। এ ছাড়াও রাজধানী ঢাকায় র‌্যাবের অস্থায়ী ক্যাম্পে ও র‌্যাবের চেকপোস্টে দুই জঙ্গী আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটিয়ে নিহত হয়েছে। জঙ্গীদের আত্মঘাতী বিস্ফোরণ ঘটানো, জঙ্গী আস্তানায় বিস্ফোরকের ও ক্ষুদ্রাস্ত্রে মজুদ ভা-ার গড়ে তোলা, সুইসাইডাল ভেস্ট দিয়ে আত্মঘাতী হওয়ার ঘটনা জঙ্গীদের মধ্যে মরিয়া হয়ে উঠার ও নতুন আতঙ্ক সৃষ্টির কৌশল বলে মনে করা হচ্ছে। পুলিশ সদর দফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, মার্চ মাসে জঙ্গীবিরোধী অভিযানে জঙ্গী আস্তানাগুলো থেকে যেসব আলামত পাওয়া গেছে তার মধ্যে জঙ্গীদের প্রতি সাংগঠনিক নির্দেশনা রয়েছে। সাংগঠনিক নির্দেশনার উদ্ধার করা বেশকিছু কাগজপত্রে লেখা আছে বোমা তৈরির পদ্ধতি, এ জন্য ব্যাবহার করা হয়েছে বোমা তৈরির খাতা, বই। বোমা তৈরির সরঞ্জাম যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে কেনা হয়েছে তারও কয়েকটি তালিকা পেয়েছে পুলিশ, পুলিশকে টার্গেট করার বেশকিছু প্রমাণ রয়েছে উদ্ধার করা বই, খাতায়। মৃত্যুর আগে জঙ্গীরা অধিকাংশ সাংগঠনিক কাগজপত্র পুড়িয়ে ফেলে। তারপরও যেগুলো পাওয়া গেছে, তার মধ্যে একটি হচ্ছে, পুলিশ আক্রমণ করলে তাদের করণীয় কি? সেখানে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, পুলিশের হাতে কোনভাবেই ধরা দেয়া যাবে না। আক্রমণের শিকার হলে সঙ্গে সঙ্গে সুইসাইডাল বেস্ট গায়ে জড়িয়ে নিতে হবে। পুলিশের যত কাছাকাছি পার যাও। নিজের সঙ্গে পুলিশকেও উড়িয়ে দিতে হবে। মিথ্যা পরিচয় দিয়ে জঙ্গীদের বাসা ভাড়া নেয়ার দিকনির্দেশনায় রয়েছে, ভুয়া জাতীয় পরিচয়পত্র আর মিথ্যা পরিচয়ের তথ্য দিয়ে বাড়ি ভাড়া নিয়ে জঙ্গী আস্তানা গড়ে তুলতে হবে। সীতাকু-ের প্রেমতলার ছায়ানীড় নামে বাড়িটিতে গড়ে তোলা জঙ্গী আস্তানায় মিলেছে এমন একটি তালিকা, যেখানে রয়েছে, বিস্ফোরক সংগ্রহের তথ্য। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কর্মকর্তারা ছায়ানীড়ে একটি খাতা পেয়েছেন, সেখানে বোমার তৈরির পদ্ধতিটা হাতে লেখা আছে, দুই ধরনের বোমা তৈরির কথা লেখা আছে, একটা হচ্ছে, নিক্ষেপ করলে বিস্ফোরণ ঘটবে। আরেকটা হচ্ছে, সুইচ টিপে বিস্ফোরণ ঘটাতে হবে।
×