ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করার দাবি

প্রকাশিত: ২০:১২, ৩১ মার্চ ২০১৭

ঈশ্বরদী বিমানবন্দর চালু করার দাবি

তৌহিদ আক্তার পান্না, ঈশ্বরদী ॥ ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে অনেকবার যাত্রীবাহী বিমান চালুর পর হঠাৎ করে একাধিকবার বন্ধ খেলায় মেতে ওঠায় এলাকাবাসী ক্ষুব্ধ হয়ে উঠেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানগুলোর বিমান যাত্রীদের মধ্যে বিরাজিত হতাশা দিন দিন প্রকট আকার ধারণ করতে শুরু করেছে । বর্তমান সরকার আমলে বিমান বন্দরটি বেসরকারী ইউনাইটেড এয়ার ওয়েজের ৪০ সীটের বিমানের মাধ্যমে চালু করা হলেও মাত্র ছয় মাস চলাচলের পরই নানা অজুহাত দেখিয়ে বন্ধ করে দেওয়া হয়। প্রায় তিন বছর বছর পার হলেও বিমানবন্দরটি চালুর কর্তৃপক্ষের কোন জোড়ালো উদ্যোগ আছে বলে মনে হচ্ছে না । বিমানে ভ্রমনের জন্য প্রয়োজন যাত্রী। আর যাত্রীর জন্য প্রয়োজন এলাকার গুরুত্ব এবং গুরুত্বপূর্ণ নানা প্রকার প্রতিষ্ঠান। সেদিক থেকে ঈশ্বরদী অনেক এগিয়ে রয়েছে। ইপিজেড, পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন প্রকল্প, ক্রপ গবেষণা ইনষ্টিটিউট, বেশ কয়েকটি গবেষণা প্রতিষ্ঠান, দেশের একমাত্র পাবনা মানসিক হাসপাতাল,প্রযুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়,মেডিকেল কলেজ ও রেলওয়ে বিভাগীয় অফিসসহ নানা প্রতিষ্ঠান,পাশ্ববর্তী কুষ্টিয়া জেলার ভেড়ামারা বিদ্যুত কেন্দ্র,নর্থবেঙ্গল চিনি মিল এবং বিভিন্ন বিদেশী সংস্থা থাকায় এখানে প্রায় পাঁচ শতাধিক বিদেশী এলাকার বিভিন্ন প্রকল্পে কর্মরত আছেন । ঈশ্বরদীতে আরও প্রায় সাড়ে তিন হাজার রাশিয়ান শীঘ্রই ঈশ্বরদীতে আসার অপেক্ষায় আছে। এ কারণে সকল প্রতিষ্ঠানে কর্মরত ও ইপিজেডের বিভিন্ন কোম্পানীর বায়ারদের চলাচলের জন্য ঈশ্বরদীতে বিমানের বিশেষ প্রয়োজন দেখা দিয়েছে। এসব প্রতিষ্ঠানে দেশী-বিদেশী বিশেষজ্ঞদের প্রায়ই আসা যাওয়া করতে হচ্ছে । বিশেষ করে বিমানের অনিয়মে ইপিজেডের কার্যক্রম মারাÍকভাবে ব্যাহত হচ্ছে ।কারণ দেশী-বিদেশী বিনিয়োগকারী এবং বায়ার এখানে আসতে আগ্রহ প্রকাশ করেন না শুধুমাত্র আকাশ পথে যোগাযোগের কারণে । রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুত উৎপাদন কেন্দ্র,ক্রপস গবেষণা ইনষ্টিটিউট ও ইপিজেডের জন্য আকাশ পথের যোগাযোগ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ । বিমানবন্দরটি চালু না থাকায় পূর্ণাঙ্গ রূপ লাভ করছে না ঈশ্বরদী ইপিজেড। অন্য প্রতিষ্ঠান গুলোও ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছে । সর্বশেষ ১৯৯৬ সাল থেকে বিমান বন্দরটিতে ফ্লাইট বন্ধ থাকার পর ২০১৩ সালে ৩০ অক্টোবর তৎকালীন বিমান ও পর্যটনমন্ত্রী কর্ণেল(অবঃ)ফারুক খান আনুষ্ঠানিকভাবে বিমানবন্দরটিতে যাত্রীবাহী ফ্লাইট চলাচল উদ্বোধন করেন । এ সময় সপ্তাহে দুটি ফ্লাইট শনিবার ও সোমবার ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটে চলাচল শুরু করে। এ সময় মন্ত্রী সর্বস্তরের জনসাধারণের সাথে মতবিনিময়ে পর্যায়ক্রমে সপ্তাহে চার দিন বিমান চলাচলের ব্যাপারে আশ্বস্তকরেন। কিন্তু গত ২৯ মে ২০১৪ থেকে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটিতে নানা অজুহাতে আবার ফ্লাইটবন্ধ হয়ে যায় । বিমান চলাচলের প্রয়োজনীয় সুযোগ সুবিধা থাকা সত্ত্বেও সরকারী -বেসরকারী বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান ও প্রকল্পে কর্মরত গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিবর্গ যাদের জন্য বিমানে ভ্রমণ করা জরুরি । বিমান বন্দরে ফ্লাইট চলাচল বন্ধ থাকায় আকাশপথে চলাচলকারী যাত্রী সাধারণ সুযোগ সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে । এতে করে ঈশ্বরদীর উন্নয়ন ব্যহত হচ্ছে । ঈশ্বরদীসহ,পাবনা,নাটোর,কুষ্টিয়াবাসীর মধ্যে ক্রমেই ক্ষোভ বৃদ্ধি পাচ্ছে। সর্বপরি সরকার মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয় থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। অন্য দিকে লৌহ সম্পাদসহ কোটি কোটি টাকার স্থাপনা মাটিতে মিশে যাচ্ছে। আবার রক্ষনা বেক্ষনের নামে লোপাটেরও অভিযোগ প্রায়ই শোনা যায়। ১৯৬০ সালে ৪১২ একর জমির ওপর ঈশ্বরদী বিমানবন্দরের প্রাথমিক কাজ শুরু হয়। তখন প্রায় ২২ লাখ টাকা ব্যয়ে রানওয়ে তৈরি করে ডাকোটা ডিসি-৩ বিমান চালু করা হয়। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি ক্ষতিগ্র¯্থ হয়। ১৯৭২ সালে এ বিমানবন্দরটি মেরামত করে আবারো ঈশ্বরদী-ঢাকা-ঈশ্বরদী রুটে প্রথমে ডাকোটা ডিসি-৩ এবং পরে ফকার এফ-২৭ বিমান চালু করা হয়। এরপর লোকসানসহ নানা অজুহাতে ১৯৮৭ সালে ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি বন্ধ করে দেয়া হয়। বিএনপি সরকার বিমানবন্দরটি সংস্কার করে ১৯৯৪ সালের ১৭ জুলাই আবার চালু করে। এরপর নানা অজুহাত দেখিয়ে ১৯৯৬ সালের ৩ নবেম্বর তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার অনির্দিষ্টকালের জন্য ঈশ্বরদীতে বিমান চলাচল বন্ধ ঘোষণা করে। ঈশ্বরদী ব্যবসা-বাণিজ্য ও শিল্পের ক্ষেত্রে চরম সম্ভাবনাময়ী একটি অঞ্চল। এই সম্ভাবনাকে কেন্দ্র করে গড়ে উঠেছে শিল্প কেন্দ্র, ইপিজেডসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান। বিমান বন্দরটি চালু করা হলে দেশী ও বিদেশী শিল্প কো¤পানিগুলো এই ইপিজেডে কারখানা স্থাপনা করতে আগ্রহী হবে। কারণ শুধু যোগাযোগের ক্ষেত্রে রেলওয়ে ও স্থলপথ ছাড়া আকাশপথে কোনো ব্যবস্থা না থাকায় ইপিজেডে বিদেশী কো¤পানিগুলো বিনিয়োগ করতে আগ্রহ হারাচ্ছে। বিমানবন্দরটি বন্ধ থাকায় ঈশ্বরদী ধীরে ধীরে গুরুত্বহীন হয়ে পড়েছে। ঈশ্বরদী সারা দেশের মধ্যে কৃষি পণ্য তথা সবজি উৎপাদনের বিপ্ল¬ব ঘটিয়েছে। প্রধান সবজি চাষ এলাকা হিসেবে ইতোমধ্যে দেশীয় বাজারেসুখ্যাতিও অর্জন করেছে। এখানে সারা বছর বাণিজ্যিক ভিত্তিতে নানা রকম সবজি উৎপাদন হয় ৷এ অবস্থায় সরকার যদি ঈশ্বরদী বিমানবন্দরে যাত্রীবাহী বিমানসহ কৃষি পণ্যবাহী বিমান সার্ভিস চালু করেন তাহলে কৃষিতে আবারো প্রাণ সঞ্চালন ঘটবে। দেশের চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও তা রফতানি করে বাড়তি আয় করতে পারবেন কৃষক। আর এ থেকে দেশবাসী লাভবান হওয়ার পাশাপাশি সরকারও প্রচুর পরিমাণে রাজস্ব পাবেন।ঈশ্বরদী ইপিজেড, পাবনা বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, পাবনা মেডিক্যাল কলেজ, পাবনা টেক্সটাইল ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজ, বাংলাদেশ সুগারক্রপ গবেষণা ইনস্টিটিউট , বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (বিএটিআই), রুপপুর পারমাণবিক বিদ্যুৎ শক্তি প্রকল্প, ডাল গবেষণা কেন্দ্র, বেনারসি পল্লী শিল্প, রেশম বীজাগার, আবহাওয়া অধিদফতর, পাকশী পেপার মিলস ,ঈশ্বরদীতে অবস্থিত পাবনা সুগার মিলস লিমিটেড, দ্বিতীয় বৃহত্তম রেলওয়ে জংশন, পাবনা মানসিক হাসপাতাল, বাংলাদেশ রেলওয়ে বিভাগীয় অফিস ও পাবনা জেলা এই বিমান বন্দরের আওতায় । এ ছাড়াও অনেক গুরুত¦¡পূর্ণ অফিস আদালত ঈশ্বরদীতে অবস্থিত । সার্বিক বিবেচনায় ঈশ্বরদী বিমানবন্দরটি জাতীয় প্রয়োজনে জরুরি ভাবে চালু করার প্রয়োজনীয়তা গুরুত্বসহকারে অনুভব করছে ঈশ্বরদীসহ নিকটবর্তী জেলার সুশিক্ষিত,বিজ্ঞ রাজনীতিবিদসহ আন্তর্জাতিক মান সম্পন্ন ব্যবসায়ীমহল। ঈশ্বরদীসহ নিকটস্থ জেলাগুলোর সাথে রাজধানী ঢাকার আকাশ পথে ভ্রমণের সুযোগ সৃষ্টির মাধ্যমে বর্তমান সরকার এলাকার বাধাগ্রস্থ’ উন্নয়ন তরান্বিত করাসহ মোটা অঙ্কের রাজস্ব আয়ের লক্ষ্যে শীঘ্রই ঈশ্বরদী বিমান বন্দরটি চালুর প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন এটাই দেশী বিদেশী সকল মহলের জোরদাবি।
×