ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

জলি রহমান

স্বেচ্ছাসেবক এক নারী

প্রকাশিত: ০৬:৪৪, ৩১ মার্চ ২০১৭

স্বেচ্ছাসেবক এক নারী

যুগ যুগ ধরে নারীরা অবহেলিত ও নিগৃহীত। কিছু সমাজের ধারণা নারীদের দিয়ে উন্নয়ন সম্ভব নয়। কিছু বাবা-মা তাদের কন্যাসন্তানকে বোঝা মনে করেন। কিছু দম্পতি একাধিক সন্তান নিচ্ছে পুত্র সন্তানের আশায়। এসব সামাজিক কুসংস্কার ভেঙ্গে দিতে নারীদের হতে হবে স্বাবলম্বী। থাকতে পারে বাবার অনেক কিছু বা স্বামীর তারপরও নিজের কিছু করার অভিপ্রায় ও জরুরী। একটি গ্র্যাজুয়েট মেয়ে স্বাবলম্বী হলে তাকে দেখে আরও অনেক মেয়ে অনুপ্রাণিত হতে পারে। মনিরা নাহার ফাহমিদা এমনই এক স্বেচ্ছাসেবক নারী। সম্পদ ও ঐশ্বর্যের মাঝে বড় হয়েও তার মাঝে ছিল না কোন অহঙ্কার। শৈশবকাল থেকেই বিভিন্ন সামাজিক কাজে জড়িয়েছেন নিজেকে। উচ্চশিক্ষা নিয়ে সবার মাঝে শিক্ষার আলো ছড়িয়ে দেয়ার অভিপ্রায় ছিল তার। অনার্স অধ্যয়নকালীন বিয়ে হলেও পড়াশোনা চালানোর পাশাপাশি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান কিংবা মহিলা কল্যাণ সমিতি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ২০০৫ সালে ৪৬ জন মহিলাকে ফ্রি প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তাদের অনেকেই এখন স্বাবলম্বী। পোশাক তৈরি, বিউটি ফিকেশন, এ্যাম্বুশ, সাধারণ মোম তৈরি, মোমের সোপিচ, কাপড়ের ফুল, পুতুল, ব্লক বাটিক, আর্টিফিশিয়াল ঝর্ণা, ল্যাম্প শ্যাড, স্কিন প্রিন্ট, টাইডাই, বার্থ-ডে কেক, মিষ্টি এবং থাই-চায়নিজসহ নানাগুণের অধিকারী তিনি। পরিবারের ওপর নির্ভরশীল না হয়ে নিজের আলাদা পরিচয় তৈরি করতে লোন নিয়ে ঘরে বসে শুরু করেছেন ক্ষুদ্র ব্যবসা। বর্তমানে তার অধীনে ১২ জন নারী-পুরুষ কাজ করছেন যারা এখন স্বাবলম্বী। যুব প্রশিক্ষণ নেয়া নারীদের তৈরি পোশাক দিয়ে একটি বুটিক হাউস দিয়েছেন। যাতে তারাও স্বাবলম্বী হতে পারে। গরিব অসহায়দের মাঝে বিনামূল্যে বই, খাতা, কলম, শীতার্তদের মাঝে শীতবস্ত্র, কম্বল বন্যার্তদের মাঝে ত্রাণ বিতরণ, ফ্রি হেলথ ক্যাম্প, ডায়বেটিকস ক্যাম্পে সহযোগিতা করা, রানা প্লাজার ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য তহবিল সংগ্রহ এবং নতুন উদ্যোক্তাকে বিনা সুদে লোন দেয়াসহ তার রয়েছে নানা অবদান। নিজে রক্তদান করে হয়েছেন সন্ধানীর সদস্য। কেরানীগঞ্জ যুব নারী সম্প্রদায়কে স্বাবলম্বী করতে তার প্রচেষ্টা অপরিসীম। মনিরা নাহার ফাহ্মিদা কেরানীগঞ্জ উপজেলার শুভাঢ্যা ইউনিয়নের শুভাঢ্যা গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। বাবা বীর মুক্তিযোদ্ধা ও কেরানীগঞ্জ উপজেলার অবসরপ্রাপ্ত হিসাবরক্ষণ কর্মকর্তা ও পরিবার কল্যাণ সহকারী ফেরদৌস আরা বেগমের একমাত্র কন্যা এবং স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিসিএস কর্মকর্তা শহীদুল ইসলামের সহধর্মিণী তিনি। নিজের ধৈর্য, বুদ্ধি, প্রচেষ্টা, অধ্যবসায়, পরিশ্রম কাজে লাগিয়ে আরও অনেক কিছু করার স্বপ্ন তার। সচ্ছল পরিবারের সন্তান এবং গৃহবধূ মনিরা নাহার ফাহমিদার চেয়ে সামাজিক কর্মী ‘ফাহমিদা মনি’ পরিচয়ে বেশি গর্ববোধ করেন তিনি। পরিবারের বাইরে নিজের আলাদা একটা পরিচয় তৈরি করতে পেরেছেন তিনি। এবং জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত সামাজিক কাজ করে যাওয়া তার ইচ্ছা। বিভিন্ন কাজের জন্য পুরস্কৃত করা হয়েছে তাকে। আন্তর্জাতিক নারী নির্যাতন প্রতিরোধ ও বেগম রোকেয়া দিবস ২০১৬ উদযাপন উপলক্ষে ‘জয়িতা অঙ্গনে বাংলাদেশ’ কার্যক্রমের আওতায় ২০১৬ সালের ৯ ডিসেম্বর জয়িতাদের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে ফাহমিদা মনি পেয়েছিলেন জয়িতা পুরস্কার। এভাবে শিক্ষিত নারীদের সমাজ সংস্কার করতে হবে। সমাজের কুসংস্কার ধারণা পরিবর্তন করতে এগিয়ে আসতে হবে সবাইকে। বর্তমান অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক, সামাজিক সকল উন্নয়নে নারীর ভূমিকা কম নয়। জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বলেছিলেন, ‘বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি চির কল্যাণকর অর্ধেক তার করিয়াছে নারী অর্ধেক তার নর।’ নিজেকে গুটিয়ে রাখলে সমাজের অন্ধকার তাকে গ্রাস করে। দুর্বলের ওপর সবলের নির্যাতন যুগ যুগ ধরে হয়ে আসছে, আর এটাই স্বাভাবিক। তাই নিজেকে প্রমাণ করতে হবে আমি দুর্বল নই। দেশ পরিচালনা থেকে শুরু করে মাঠে কাজ করা সকল ক্ষেত্রে নারীরা সফলতার পরিচয় দিয়েছে। সেখানে নিজেকে দুর্বল ভাবা যাবে না। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে সখের বসে গৃহিণী হয়ে থাকার চেয়ে নিজের যোগ্যতাকে কাজে লাগানোর মাঝেই আছে সফলতা।
×