ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

আকিল জামান ইনু

দেশ ছাড়ছেন সৌদি নারীরা

প্রকাশিত: ০৬:৪৩, ৩১ মার্চ ২০১৭

দেশ ছাড়ছেন সৌদি নারীরা

গত ফেব্রুয়ারিতে সৌদি আরব দুটি বড় ব্যাংক ও স্টক এক্সচেঞ্জ তথা টাডাউলের প্রধান পদে প্রথমবারের নারী কর্মী নিয়োগ দিয়েছে। এ নিয়োগের মাধ্যমে তারা ধারণা দিতে চাইছে সেখানে নারীদের ক্যারিয়ার গড়ে তোলার পথ একেবারে রুদ্ধ নয়। কিন্তু তার পরও এটি নিশ্চিত নয় সৌদি আরব তাদের নতুন প্রজন্মের নারীদের দেশত্যাগ রোধ করতে পারবে কিনা। সৌদি সমাজের হাজারো বিধিনিষেধের মুখে নীরবে দেশ ছাড়ছেন সে দেশের নারীরা এবং এর হার বর্তমানে আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছেছে কেউবা পারিবারিক ভ্রমণে গিয়ে অন্য দেশে ঠিকানা খুঁজে নিচ্ছেন। আবার অনেক নারী শিক্ষার্থী সরকারী ব্যয়ে বিদেশে আছেন যাদের ফেরাটা অনিশ্চিত। পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে পৌঁছেছে যে অনেক সৌদি নারী অনলাইনে ভিনদেশী পাত্র খুঁজছেন যাতে বিয়ে করে স্বামীর সঙ্গে সে দেশে বসবাস করতে পারেন। ইমান নান্মী রিয়াদের একটি বেসরকারী হাসপাতাল থেকে দেশ ছেড়ে পালানোর পথ হিসেবে বেছে নিয়েছেন। ৪ হাজার ডলারে অস্ট্রেলিয়ার হানিমুন ট্রিপ। সৌদি রাজত্বে নারীরা চালিত হন অভিভাকত্ব ওরা ওয়ালিয়া আইনে যদিও বিশ্বের সামনে বিষয়টি সেভাবে আলোচিত নয়। এই আইনে সৌদি নারীদের জীবন কঠোরভাবে নিয়ন্ত্রিত এমনকি চলাচল পর্যন্ত। কোথাও ভ্রমণ, কাজে, বিদেশে পড়াশোনা, চিকিৎসা সেবা, আইডি কার্ড গ্রহণ এমনকি সাজাভোগ শেষে কারামুক্তির জন্যও একজন পুরুষ অভিভাবকের বা ওয়ালির সম্মতির প্রয়োজন হয়। এক কথায় জন্ম থেকে মৃত্যু পর্যন্ত তারা হাতবদল হয় ওয়ালি থেকে ওয়ালির শুরুতে পিতা তারপর স্বামী দু’জনের অনুপস্থিতিতে কোন নিকটাত্মীয় পুরুষ। এমন কি তাদের টিনএজার সন্তান অথবা ভাইও হয়ে যান ওয়ালি। কারণ একটি ছেলে সে দেশে বয়োসন্ধি থেকেই সাবালক আর নারী সারা জীবনেই অধীনস্থ রয়ে যায়। অন্য এক কর্মজীবী তালাকপ্রাপ্ত নারী যার অভিভাবক তার অর্ধেক বয়সী ১৭ বছরের ছোট ভাই। যে পকেটে পুরে তার মাসিক আয়। বিদেশে উচ্চ শিক্ষার জন্য যেতে চাইলে মারধরের হুমকি দেয়। আর প্রাক্তন স্বামী তাকে বঞ্চিত করেছে। নিজ সন্তানদের দেখার অধিকার থেকে মেয়েটি আদালতে আবেদন করেছে তার প্রতি সহানুভূতি সম্পন্ন বড় ভাইয়ের অভিভাবকত্ব চেয়ে। বিচারক তা প্রত্যাখান করেছে সরাসরি। এই নারীর ভাষায় আমি যখন অন্য কোন মেয়ের মুখে শুনি তাদের পুরুষ অভিভাবক তাদের প্রহার করে না। আমি বিশ্বাস করি না তা এই দেশে ছেড়ে যাওয়া নারীদের নিয়ে রিয়াদের ইমাম মাহমুদ ইরন সাউদ বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানী মনসুর আল আসকার জানান। প্রতিবছর অন্তত এক হাজার নারী দেশ ছেড়ে যাচ্ছে চিরতরে। আর যাদের দেশ ছেড়ে যাওয়ার সামর্থ্য নেই তারা কিছুটা সহজ জীবনের আশায় রিয়াদ ছেড়ে পালিয়ে যাচ্ছে। যদিও সৌদি স্কলাররা বলছেন এই ওয়ালি আইন ইসলাম নয় সেই পূর্বের বেদুইন প্রথা থেকে উদ্ভূত। বরং ইসলাম নারীদের মুক্তি দিয়েছে দাসত্বের জীবন থেকে। বিয়ের ব্যাপারেও নারীর সম্মতি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ওয়ালিয়ার বিরুদ্ধে মত প্রকাশ করায় সৌদি আরব গত ডিসেম্বরে এক জনকে সাজা দিয়েছে এক বছরের। এক পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে এই ওয়ালি আইন আখেরে সৌদি আরবকেই দুর্বল করছে। প্রতিবছর সৌদি সরকার যে ১ লাখ ৫০ হাজার শিক্ষার্থী বিদেশে প্রেরণ যার চার ভাগের এক ভাগ নারী। তাদের পেছনে সরকারের বার্ষিক ব্যয় ৫ বিলিয়ন ডলার। এদের বেশিরভাগের দেশে ফেরা অনিশ্চিত। ব্রিটেনে বসবাসরত সৌদি নারী শিক্ষাবিদ নাজা আল ওসাইমি বলেন সৌদি আজ তার মেধা স্বদেশে ধরে রাখার যুদ্ধে হেরে যাচ্ছে। অবাক করা বিষয় এই যে, ওয়ালিয়া আইনের কট্টর সমর্থকদের অনেকেই নারী। বিশেষ করে রক্ষণশীল দক্ষিণাঞ্চলের আসিবে। সৌদি নারীদের দাসীত্বে পরিণত বন্ধ কর ও আমি নিজেই নিজের অভিজ্ঞতা প্রচারণায় স্বাক্ষর করছে মাত্র ১৪ হাজার নারী। সৌদি আরবের বর্তমান নেতৃত্ব নারীদের জন্য পরিবেশ সহজ করার কথা ভাবছে। ইতোমধ্যেই বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ছাত্রীদের উপস্থিতি ছাত্রদের চেয়ে বাড়ছে। আবার এখন অনেক পুরুষ স্ত্রীর চাকরির জন্য প্রেরিত জীবন বৃত্তান্তে নিজের ছবি ব্যবহার করেন এমন কি ইন্টারভিউতেও নিজে উপস্থিত থাকেন। ২০১৩তে নারীদের জন্য চার ধরনের কাজে যোগদান অভিভাবকদের অনুমতির প্রয়োজন নেই বলে প্রজ্ঞাপন জারি হয়েছে যার মধ্যে আছে কাপড়ের দোকানের সহকারী। বাবুর্চি ও বিনোদন পার্কে এস্টেনজান্ট। কিন্তু এই পরিবর্তন যথেষ্ট নয় আর গতিও ধীর। সৌদি নারীরা সাধ্যের মধ্যে প্রতিবাদ জানাচ্ছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে। সমাজবিজ্ঞানীরা বলছেন নির্যাতনকারী পুরুষদের আইনের আওতায় আনতে হবে। কিন্তু বাস্তবতার শিকার অস্ট্রেলিয়ার হানিমুনের নামে দেশত্যাগের অপেক্ষায় থাকা ইমান বলেন, ‘পরিস্থিতির উন্নতির কোন সম্ভাবনাইÑ নেই তাই বিকল্প দেশত্যাগ। সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট
×