ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

পাবনায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’

প্রকাশিত: ০৬:২৬, ৩১ মার্চ ২০১৭

পাবনায় শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’

নিজস্ব সংবাদদাতা, পাবনা, ৩০ মার্চ ॥ মহান স্বাধীনতাযুদ্ধের বীর শহীদদের স্মরণে নির্মিত হলো ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’ স্মৃতি স্মারক। স্বাধীনতার ৪৬ বছর পর এমন একটি মহৎ কাজ মুক্তিযোদ্ধা-জনতাকে আবেগাপ্লুত করেছে। বালিয়াহালট কবরস্থানের অদূরে খোলা প্রান্তরে নির্মাণ করা হয়েছে ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’। এটির মূল পরিকল্পনাকারী পাবনার বর্তমান পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির। তিনি তার স্বপ্নের কথা বলেন ভাগ্নে আর্কিটেকচার জায়েদী আমান অয়নকে, যিনি এটির নক্সা করেছেন। তিনি আহছানউল্লাহ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রভাষক। ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’-এর নক্সা ও নির্মাণশৈলী প্রশংসার দাবি রাখে। লাল ইটের তৈরি বেদির ওপর নির্মিত মধ্যখানে কালো দেয়াল এবং এর দুই পাশে স্টিলের বার। কালো দেয়ালের ভেতরে বা মধ্য বরাবর সুড়ঙ্গ বা প্রকোষ্ঠ। অর্থাৎ ‘আমাদের অধিকার থেকে বঞ্চিত করে যতই অন্ধকার দিয়ে ঘিরে ফেলা হোক না কেন, আমরা ঠিকই সেটা ভেদ করে আলো নিয়ে আসবই।’ শিল্পী অয়ন কালো দেয়ালটিকে অন্ধকারের প্রতীক ও দুই পার্শ্বের স্টিলের বারকে ঐক্যবদ্ধ জনতাকে বুঝিয়েছেন এবং কালো দেয়ালের মধ্যবর্তী প্রকোষ্ঠ পথে যে আলো প্রবেশ করছে তাকে ‘বিজয়ের আলো’ প্রবেশের পথ হিসেবে দেখানো হয়েছে। স্বাধীনতা দিবসে ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’-এর উদ্বোধন করেন সংসদ সদস্য গোলাম ফারুক প্রিন্স। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানের সময় এলাকাবাসী এবং মুক্তিযোদ্ধাদের মধ্যে আনন্দ ও ব্যথা দুটোই লক্ষণীয় ছিল। ছিল অনেকের চোখে আনন্দাশ্রু। স্মারকটি নির্মাণে অর্থ সহায়তা দিয়েছেন পাবনার বিশিষ্ট ব্যবসায়ী সাইফুল ইসলাম স্বপন চৌধুরী। পুলিশ সুপার জিহাদুল কবির পিপিএম পাবনায় যোগদান করেই পাবনার মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাস অন্বেষণ শুরু করেন। ৪৬ বছর পর তিনি পুলিশ লাইনস লেনটির নামকরণ করেন একজন শহীদ পুলিশ সদস্যের নামে। পাবনায় সর্বপ্রথম সকল পাক হানাদার সৈন্যদের পরাজিত করে পাবনার মুক্তিকামী জনতা। ২৬ মার্চ পাক হানাদার সৈন্যরা পাবনার নিরস্ত্র জনতার ওপর নির্বিচারে গুলি চালায়। জনতা দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে প্রতিরোধ গড়ে তোলে। পুলিশ লাইনসে হানাদার পাক সৈন্যরা আক্রমণ করলে পুলিশবাহিনী প্রতিরোধ করে। শুরু হয় দু’পক্ষের মধ্যে যুদ্ধ। হানাদার সৈন্যরা পিছু হটে। পুলিশ-জনতা কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে প্রতিরোধ যুদ্ধ করে ২৮ মার্চ পর্যন্ত। সাহসী যুবকদের হাতে পাবনা পুলিশ লাইনসের ম্যাগজিন খুলে দিয়ে অস্ত্র ও গোলাবারুদ তুলে দেয় দেশপ্রেমিক পুলিশবাহিনী। অস্ত্র হাতে প্রতিরোধ যুদ্ধে পুলিশের সঙ্গে যোগ দেন মুক্তিযোদ্ধারা। ত্রিশজন পাক হানাদারকে হত্যা করে পাবনা শহর প্রায় শত্রুমুক্ত করা হয়। পাকসেনারা বালিয়াহালট সড়কের পার্শ¦বর্তী খালে এবং বালিয়াহালট কবরস্থানে অবস্থান নেয়। নর্দমার মধ্যে এবং কবরস্থানের পাকা কবরের আড়ালে অবস্থান নিয়ে তারা গুলি চালায়। কয়েক পুলিশ সদস্য থ্রিনটথ্রি রাইফেল নিয়ে যুদ্ধে অংশ নেন। তাদের সঙ্গে দোনলা বন্দুক এবং টু টু বোর রাইফেল নিয়ে কয়েক যুবক মুক্তিযোদ্ধা অংশ নেন। সারারাত থেমে থেমে চলে যুদ্ধ। ২৯ মার্চ সকালে পরাজিত হয় হানাদার সৈন্যরা। ওই যুদ্ধে শহীদ হন চার পুলিশ জোয়ান। তারা হলেনÑ রুহুল আমীন, আব্বাস আলী, ঈমান আলী ও আবুল খায়ের। এ ‘বীরত্ব অবিনশ্বর’ উদ্বোধনের মধ্য দিয়ে একটি যুদ্ধ এবং বীর মুক্তিযোদ্ধাদের ত্যাগকে স্বীকৃতি দেয়া হলো বলে মন্তব্য করেন পাবনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান রেজাউল রহিম লাল।
×