ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অলিম্পিক সাঁতার ॥ হুমকির মুখে আফগান নারীরা

প্রকাশিত: ০৫:৫৭, ৩১ মার্চ ২০১৭

অলিম্পিক সাঁতার ॥ হুমকির মুখে আফগান নারীরা

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ আফগানিস্তানে মাত্র ৩০টি ভাল মানের পুল আছে সাঁতারের জন্য। এর মধ্যে শুধু একটি পুলে আফগান নারীরা সুযোগ পান অনুশীলনের। কিন্তু সেখানে যেসব নারী সাঁতার শেখে তাদের হুমকি-ধামকির মুখে পড়তে হয়। তবে এসবকে পাশ কাটিয়েও অনেক আফগান তরুণী এই পুলটিতে নিয়মিত সাঁতারের অনুশীলন করেন। কিন্তু এই অনুশীলন হয়ত সেই পুলেই সীমাবদ্ধ থাকবে। আফগান নারী সাঁতারুরাও স্বপ্ন দেখেন কোন একদিন অলিম্পিকে যাওয়ার। কিন্তু দেশটির ইসলামী জঙ্গী সংগঠনগুলো বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে সে স্বপ্ন পূরণের পথে। এমন হতাশা প্রকাশ করেছেন বেশ কয়েকজন আফগান নারী সাঁতারু। ২৫ বছর বয়সী এলেনা সাবুরি। নিজের সাঁতার দক্ষতা নিয়ে দারুণ আত্মবিশ্বাসী। কারণ একইসঙ্গে তিনি অন্যদের সাঁতার প্রশিক্ষকও। আফগানিস্তানে সম্প্রতি গড়ে তোলা হয়েছে সুইমিং কমিটি। এলেনা সেটারও প্রধান। কিন্তু রক্ষণশীলতা, ধর্মীয় অনুশাসনের বেড়াজাল পেরিয়ে নিজেকে আন্তর্জাতিকভাবে মেলে ধরা বেশ কঠিন। দেশটিতে নারীদের যে কোন ধরনের ক্রীড়ায় অংশগ্রহণের ক্ষেত্রে অনুৎসাহিত করা হয় এবং বাধা প্রদানও করা হয়। এলেনা যখন সাঁতার শুরু করেছিলেন, তিনি ইন্টারনেট থেকে সাঁতারের বিভিন্ন ভিডিও এবং নির্দেশনা ডাউনলোড করে অনুশীলন চালিয়ে গেছেন। কাবুলের একটি পুলে এভাবেই নিজেকে সাঁতারু হিসেবে গড়েছেন এলেনা। এ বিষয়ে তিনি বলেন, ‘প্রথমদিকে আমি ডুবে যাওয়ার ভয়ে ভিত ছিলাম। কিন্তু পরে আমি ভেবেছি এখানে মেয়েরা জানে না কিভাবে সাঁতরাতে হয়, তাই আমি শিখতে পারলে ভাল একজন কোচও হতে পারব।’ কিন্তু এলেনা পরে বুঝেছেন সাঁতার কাটতে নেমে ডুবে যাওয়ার ভয়টা কিছুই নয়, এরচেয়ে বড় ঝুঁকির ব্যাপার হচ্ছে একজন নারী হিসেবে আফগানিস্তানে সাঁতরানো। অনুশীলন শুরুর কিছুদিন পরই বড় ধরনের হুমকি পেয়েছিলেন এলেনা, তাকে পুল থেকে দূরে থাকতে বলা হয়েছিল। এছাড়া তার দলটিকেও ভয়ানক হুমকি দেয়া হয়েছিল এলেনাকে সাঁতরানোর অনুমতি দেয়ায়। এ বিষয়ে এলেনা বলেন, ‘আমরা কয়েক ধরনের হুমকি পেয়েছিলাম। আমি অনুভব করলাম নিরাপত্তার বিষয়টি বেশ তিক্ততাপূর্ণ এবং হুমকির পর এতটা ভিত আমি আর কখনও হইনি। কিন্তু আমি জানি যে একটি গোত্রের নিয়ম আমি ভেঙ্গেছি এবং একটি সাঁতার দল গড়ে ভীষণ ঝুঁকি নিয়েছি।’ তালেবানদের আগ্রাসন অনেক বেশি ক্ষতিগ্রস্ত করেছে আফগানিস্তানকে। এরপর ইসলামিক স্টেট গ্রুপ সক্রিয় হয়েছে। দেশের অধিকাংশ গোত্রই মনে করে মেয়েদের বাসায় বসে থাকা উচিত এবং শুধু সাংসারিক কাজই করে যাওয়া উচিত। এ কারণে সাধারণ যে সুইম স্যুট সেসব পরিধান করেও এলেনা ও তার দল সাঁতরাতে পারেন না। তাদের হাত-পা ও পিঠ ঢেকে রাখা পোশাকে সাঁতারে নামতে হয়। ব্রাজিলিয়ান এক প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে উপযুক্ত সুইমস্যুট তৈরির বিষয়ে কাজ করছে এলেনার দল। সেটা প্রস্তুত হওয়ার আগ পর্যন্ত বর্তমানে টাইটস, লাইক্রা, একপিসের সুইম স্যুটের নিচে ফুল-হাতা টপস ও মাথা ঢেকে রাখা ক্যাপ পরিধান করে সাঁতারে নামতে হচ্ছে আফগান নারীদের। আফগান ফেডারেশন ও সুইমিংয়ের প্রেসিডেন্ট ইহসান তাহেরি এ বিষয়ে বলেন, ‘আমাদের মূল বাধা হচ্ছে সাঁতারুদের নিরাপত্তার বিষয়টি নিশ্চিত করা। আমরা ২০২০ টোকিও অলিম্পিকের দিকে দৃষ্টি রেখেছি। এলেনার সাহসিকতা এক্ষেত্রে আমাদের স্বপ্ন দেখাচ্ছে। আমরা অন্তত দুইজন পুরুষ ও একজন নারীর সমন্বয়ে পরের অলিম্পিকে দল পাঠাতে চাই।’
×