ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দিনেশ মাহাতো

যে কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশী সিরিয়াল

প্রকাশিত: ০৬:৩৯, ৩০ মার্চ ২০১৭

যে কারণে জনপ্রিয় হচ্ছে বিদেশী সিরিয়াল

প্রত্যেকটি মানুষের জীবনে বিনোদনের প্রয়োজন রয়েছে । তবে বয়স, পরিবেশ , সময় ও সস্কৃতিভেদে বিনোদনের ধরন ভিন্ন হয়ে থাকে। যুগের সাথে তাল মিলিয়ে বিনোদনের মাধ্যমও পরিবর্তন ঘটে থাকে। আকাশ সংস্কৃতির এ্ই যুগে বিনোদন এখন হাতের কাছেই। তাই বিনোদন জগৎটিও এখন চরম প্রতিযোগিতার মধ্যে রয়েছে। বাংলাদেশেও এর ব্যতিক্রম নয়। একসময় দেশে টেলিভিশন চ্যানেল ছিল মাত্র একটি তা হলো বাংলাদেশ টেলিভিশন। সেখানে যে নাটকগুলো প্রচার করা হতো সেগুলো ছিল অত্যান্ত মানসম্মত। বিদেশি যে সিরিয়ালগুলো প্রচার হতো তার মধ্যে আলিফ লাইলা , সিন্দাবাদ, টিপু সুলতান ছিল অন্যতম। এই সিরিয়ালগুলোও ব্যাপক সাড়া ফেলেছিল দর্শকদের মাঝে। সেই সময় একটি মাত্র টেলিভিশন সমগ্র দেশের মানুষের বিনোদনের খোরাক জুগিয়েছে মানসম্মত নাটক, সিনেমা ম্যাগাজিনসহ নানা অনুষ্ঠান দিয়ে। কিন্তু সেই বাংলাদেশ টেলিভিশন এখনো আছে তবে খুব অল্প মানুষ তা দেখে থাকেন। তার প্রধান কারণ অনুষ্ঠানের মান সেই সময়ের মতো আর নেই। তাছাড়া রয়েছে বিজ্ঞাপনের বিড়ম্বনা। শুধু বাংলাদেশ টেলিভিশন নয় দেশে আরও প্রায় ২৫/২৬ টি টিভি চ্যানেল রয়েছে । কিন্তু তারপরেও বাংলাদেশের বেশিরভাগ দর্শক ভারতীয় ও অন্যান্য বিদেশি চ্যানেলের প্রতি আসক্ত। একসময় বাংলাদেশের নাটক দেখার জন্য কোলকাতার মানুষ মুখিয়ে থাকত । বাংলা নাটকের কাহিনী, সংলাপ, অভিনয় ছিল অত্যান্ত উচু মানের। কিন্তু এখনকার নাটক বা ছবিগুলোতে ভাল কাহিনী সংলাপের অভাব রয়েছে। এখনকার নাটকগুলোতে বিভিন্ন আঞ্চলিক ভাষার ব্যবহার বেশি লক্ষ্য করা যায়। অনেক ক্ষেত্রে দেখা যায় যে উঠতি বয়সী ছেলেমেয়েরা সেসব নাটকের ভাষা ব্যবহার করছে পাশাপাশি ফেসবুকেও বিকৃত সেসব ভাষার সংলাপ দিয়ে কমেন্ট করা ও স্টাটাস পর্যন্ত লিখছে। এমনকি ছোট ছোট শিশুরা সেসব ভুল উচ্চারণকেই সঠিক বলে মনে করছে অনেক ক্ষেত্রে। তাই বাংলা নাটক ও চলচ্চিত্র বাংলাদেশের দর্শকদের মনের খোরাক যোগাতে না পারার কারণেই দর্শকরা ভিনদেশি সিরিয়ালের প্রতি আকৃষ্ট হচ্ছে। ভাল ছবি তৈরী না হওয়া ও সিনেমা হলের পরিবেশ ভাল না থাকায় রুচিশীল দর্শক সিনেমা হলে খুব কম যায় এখন। মাঝে মাঝে কিছু ভাল নাটক সিনেমা হচ্ছে সেগুলো ভালো দর্শক সাড়া পাচ্ছে। তাছাড়া অতিরিক্ত বিজ্ঞাপনের কারণে অনেকে টেলিভিশনে নাটক না দেখে ইউটিউবে নাটকগুলো দেখে থাকে। অর্থাৎ ভাল নাটক বা সিনেমা হলে দর্শক যে দেখবে তার প্রমান কিছুদিন আগে মুক্তি পাওয়া আয়নাবাজি ছবিটি। তবে বাংলাদেশে বর্তমানে বিদেশী সিরিয়ালের চাহিদা বাড়ছে নানা কারণে। তাই জনপ্রিয় টিভি চ্যানেলগুলোর মধ্যে অনেকেই এক বা একাধিক বিদেশী সিরিয়াল প্রচার করছে। সুলতান সুলেমান, ‘ইউসুফ-জুলেখা’ এসব সিরিয়ালের মধ্যে অন্যতম। বিশেষকরে দীপ্ত টেলিভিশনে প্রচারিত সুলতান সুলেমান নামে তুরস্কের একটি ধারাবাহিক প্রচার শুরু হওয়ার পর থেকেই ভালো সাড়া পাচ্ছে। তুরস্কের অটোম্যান সাম্রাজ্যের কাহিনী অবলম্বনে এটি তৈরী। বিভিন্ন কারণেই এই বিদেশী সিরিয়ালগুলো বেশ জনপ্রিয় হচ্ছে। তার মধ্যে অন্যতম কারণ হলো মধ্যপ্রাচ্যভিত্তিক এই সিরিয়ালগুলোতে মুসলমান শাসক ও মধ্যপ্রাচ্যের মুসলিম সমাজের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে। সেই সময়কার রাজা বাদশার শাসন কেমন ছিল,কিভাবে তাদের পতন ঘটল, এই বিষয়গুলো দর্শকদের আকৃষ্ট করে। অন্যদিকে এই সিরিয়ালগুলোর বিষয়বস্তু ও সংলাপের মধ্যে ইসলামী ভাবধারা বর্তমান। মধ্যপ্রাচ্যে মুসলিম সম্প্রদায়ের মানুষ বাস করে আর বাংলাদেশও মুসলিম প্রধান দেশ। ফলে এক ধরনের মনস্তাত্ত্বিক নৈকট্য তারা বোধ করেন। সেটা থেকে এক ধরনের আগ্রহ তৈরী হয় বলে অনেকে তা মনে করেন। তাছাড়া এগুলো সিরিয়াল পরিবারের সবাই একসাথে বসে দেখার মতো। তবে এভাবে যদি বিদেশী সিরিয়াল একের পর এক চলতে থাকে। তাহলে আমরা সাংস্কৃতিকভাবে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হব পাশাপাশি বাংলাদেশের শিল্পীও কলা-কুশলীগণও ক্ষতিগ্রস্ত হবে এতে কোন সন্দেহ নেই। আমাদের নিজস্ব সংস্কৃতিও অত্যান্ত সমৃদ্ধ সেই আলোকে ভাল গল্প কাহিনী নিয়ে অনুষ্ঠান তৈরী করলে দর্শক আরো ভালো সাড়া দেবে। দেশি বিদেশী সুস্থ ধারার বিনোদন দর্শক উপভোগ করুক এটাই আমাদের প্রত্যাশা।
×