ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

মিস্টার বাংলাদেশ- খাবার খরচই মাসে ৩৫ হাজার টাকা!

প্রকাশিত: ০৬:২৯, ৩০ মার্চ ২০১৭

মিস্টার বাংলাদেশ- খাবার খরচই মাসে ৩৫ হাজার টাকা!

রুমেল খান ॥ একজন বডিবিল্ডারের দৈনিক খাবারের চার্ট মোটামুটি কেমন হতে পারে? এই ধরুন এক কেজি মুরগি, ১২-১৪টা ডিম (ডিমের শুধু সাদা অংশ, কুসুম খাওয়া যাবে না), প্রোটিন শেক (ডায়েটিং সাপলিমেন্ট, এক ধরনের প্রোটনি ট্যাবলেট) ... সব মিলিয়ে খাবারের পেছনেই খরচ আছে মাসে কমপক্ষে ৩০ থেকে ৩৫ হাজার টাকা। শরীর গঠন করতে গেলে ৭০ শতাংশই ডায়েট এবং বাকি ৩০ শতাংশ ওয়ার্কআউট (কায়িক পরিশ্রম বা ব্যায়াম) করতে হয়। ঢাকায় (জাতীয় ক্রীড়া পরিষদে) চলছে মিস্টার ঢাকা এবং মাস্টার ঢাকা (বর্ষীয়ান) উন্মুক্ত শরীর গঠন প্রতিযোগিতা। সোমবার সেখানে গিয়ে দেখা গেল হরেক রকমের বডিবিল্ডারকে। চমৎকার শরীরের গঠন। দেখতে দারুণ। বিচারকদের সামনে বিভিন্ন ওজন শ্রেণীর বডিবিল্ডাররা ফ্রন্ট ও ব্যাক ডাবল বাইসেপ, ফ্রন্ট ও ব্যাক ল্যাড স্প্রেড, এ্যাবস এ্যান্ড থাই, মোস্ট মাসকুলার ... বিভিন্ন পোজ দিচ্ছেন। আর সেটা দেখে বিচারকরা নম্বর দিচ্ছেন। মঞ্চে গিয়ে বডিবিল্ডিং করাটা সহজ। কিন্তু তার আগে অনেক সাধনা করতে হয়। সেই সাধনারই নাম ডায়েট এবং ওয়ার্কআউট। এই প্রসঙ্গের অবতারণা করার কারণÑ এদেশে বডিবিল্ডিংয়ের অপার সম্ভাবনা এবং উজ্জ্বল ভবিষ্যত আছে। কিন্তু এই খরচের কারণেই সব শ্রেণীর ছেলেরা এই খেলাটিতে সম্পৃক্ত হতে পারে না ইচ্ছা থাকলেও। তবে এই খেলাটিতে এখনও আগের চেয়ে অনেক বেশি ছেলে আসছে এবং তাদের দ্বারা আন্তর্জাতিক পর্যায়ে পদক জেতা সম্ভব বলে জানিয়েছেন আনোয়ার হোসেন। তার পরিচয় হচ্ছে তিনি হচ্ছেন টানা তিনবার অর্থাৎ হ্যাটট্রিক ‘মিস্টার বাংলাদেশ’ খেতাব জেতা বডিবিল্ডার (২০১৪, ১৫ ও ১৬ সালে)। আর্নল্ড শোয়ার্জনিগার এবং ফিল হিথের ভক্ত ৩২ বছর বয়সী আনোয়ার জনকণ্ঠকে বলেন, ‘এ খেলায় প্রচুর খরচ। অনেকেই খেলাটি শুরু করলেও পরে পৃষ্ঠপোষকের অভাবে হারিয়ে যায়। এক্ষেত্রে ফেডারেশন এবং বিভিন্ন পৃষ্ঠপোষক যদি সাহায্য করে, তাহলে এদেশের বডিবিল্ডাররা অবশ্যই দেশের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে স্বর্ণ জিততে সক্ষম। সেক্ষেত্রে আমাদের মূল প্রতিপক্ষ হচ্ছে ভারত। যদিও এবারের মিস্টার ঢাকা বডিবিল্ডিংয়ে প্রতিযোগী হিসেবে অংশ নেননি আনোয়ার। তবে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী দলের কোচ হিসেবে আছেন। এই দলে তার ১৪ ছাত্র আছে। যাদের মধ্যে ৭০ কেজি ক্যাটাগরিতে গোলাম মোস্তফা সোমবার চূড়ান্ত পর্বে উন্নীত হন। আজ মঙ্গলবার মোস্তফা স্বর্ণ জিততে পারেন বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন আনোয়ার। যমুনা ফিউচার পার্কের জিমের ইন্সট্রাক্টর হিসেবে কাজ করা আনোয়ারের নিবাস নবাবগঞ্জের দোহারে। আগে থাকতেন ধানম-িতে। ২০০৭ সালে বডিবিল্ডিং শুরু করেন। ২০১৪ সাল থেকে খেলেন বাংলাদেশ আনসারের হয়ে। ২০০৮ সাল থেকে অংশ নিয়ে আসছেন মিস্টার বাংলাদেশ প্রতিযোগিতায়। সেবার পঞ্চম হন। এরপর ২০০৯ ও ১১ সালে দ্বিতীয় হন। ২০১৩ সালে বাংলাদেশ গেমসেও হন দ্বিতীয়। তারপরই হ্যাটট্রিক চ্যাম্পিয়ন হবার পালা। ‘বডিবিল্ডিং শুধু একটি খেলাই নয়, এটা একটা জীবনদর্শনও বটে। সর্বোপরি সুস্থ দেহের অধিকারী হওয়া, মাদক ও বাজে অভ্যাস থেকে দূরে থাকার জন্য এই খেলার ব্যাপক গুরুত্ব আছে।’ বড় ভাইয়ের অনুপ্রেরণায় বডিবিল্ডিং শুরু করে আনোয়ার ২০১০ সালে নিজেই একটি ছোট জিম খোলেন। সেখানে এখন ২০-২৫ জন ছাত্র আছে তার। এ ব্যাপারে তার অভিমত, ‘আশেপাশে দেখতাম আমার বয়সী ছেলেদের ড্রাগ ও ফেসবুকে আসক্ত। এগুলো দেখে হতাশ লাগতো। পরে ভাবলাম তাদের এ পথ থেকে ফেরানোর জন্য কিছু করা উচিত।’ সে দায়বদ্ধতা থেকেই জিমটি চালু করেন। এমনকি আর্থিকভাবে অসচ্ছল ছেলেদের বিনামূল্যে এবং কিছু ক্ষেত্রে নামমাত্র মূল্যে জিমে ভর্তি করান তিনি। বডিবিল্ডারদের ফ্যাটলেস বডি এবং আকর্ষণীয় লুককেই মূলত বিচারকরা প্রাধান্য দিয়ে থাকেন। এগুলো দিয়েই টানা তিনবার মিস্টার বাংলাদেশ হয়েছেন আনোয়ার। তবে আক্ষেপও আছে তার। এখনও দেশের বাইরে খেলতে যাওয়া হয়নি তার। ‘ফেডারেশন তো দেশে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতার আয়োজন করে না বললেই চলে। সেক্ষেত্রে দেশের বাইরে গিয়ে আন্তর্জাতিক প্রতিযোগিতায় অংশ নিয়ে পদক জয়ের কোন বিকল্প দেখছি না। সেটাই আমার পরবর্তী লক্ষ্য।’
×