ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

গ্রেফতার ৪

চবি শিক্ষার্থী আলাওল হত্যার নেপথ্যে সংসার ভাঙ্গা

প্রকাশিত: ০৬:০০, ৩০ মার্চ ২০১৭

চবি শিক্ষার্থী আলাওল হত্যার নেপথ্যে সংসার ভাঙ্গা

মাকসুদ আহমদ, চট্টগ্রাম অফিস ॥ চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের স্নাতকোত্তর শেষ পর্বের শিক্ষার্থী আলাউদ্দিন আলাওল হত্যার ক্লু উদঘাটন করেছে পুলিশ। এ ঘটনায় প্রেমিকাসহ ৪ হত্যাকারীকে গ্রেফতার করেছে বায়েজিদ থানা পুলিশ। গ্রেফতারকৃতরা হত্যাকা-ের কারণসহ ঘটনার বর্ণনা দিয়েছে পুলিশের কাছে। পরিকল্পিত এ হত্যাকা-ের নেপথ্যে ছিল প্রেমঘটিত ঘটনাও অবৈধ মেলামেশার ভিডিও ফুটেজ। উল্লেখ্য, গত ২২ মার্চ গভীর রাতে পশ্চিম শহীদ নগর চারতলা ভবনের তিনতলার একটি বাথরুম থেকে হাত-পা বাঁধা অবস্থায় গলায় রশি লাগিয়ে হত্যাকা-ের ঘটনায় পুলিশ অজ্ঞাতনামা লাশ হিসেবে আলাওলের মৃতদেহ উদ্ধার করে। গ্রেফতারের পর প্রেমিকা রুম্পা পুলিশের কাছে স্বীকার করেছে, ২০০৭ সালে সে হাটহাজারীরা জোবরস্থ টিপি উচ্চ বিদ্যালয়ের ৮ম শ্রেণীতে পড়ত রুম্পা। গৃহশিক্ষক হিসেবে আলাওল তাকে পড়াতে শুরু করে। মাত্র দেড় দু’মাস পর আলাওল তাকে প্রেমের প্রস্তাব দেয়। শেষ পর্যন্ত চাপের মুখে রাজি হয় সে। দীর্ঘ তিন বছরের প্রেমের একপর্যায়ে ২০১০ সালে এসএসসি পরীক্ষার আগেই ওমর সাদেক চৌধুরীর সঙ্গে রুম্পার বিয়ে ঠিক হয়ে যায়। কিন্তু বিষয়টি আলাওল জানত না। ঠিক বিয়ের আগের দিন আলাওল মোবাইলে রুম্পাকে পালিয়ে বিয়ে করার প্রস্তাব দেয়। কিন্তু এতে রুম্পা রাজি না হওয়ায় আলাওল ক্ষিপ্ত হয়। বিয়ের পরও রুম্পার সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করতে মোবাইলে সম্পর্ক সৃষ্টি করে। এমনকি সংসার ভেঙ্গে দেয়ার ভীতি প্রদর্শন করে অবৈধ মেলামেশার সুযোগ নেয় আলাওল। তবে গোপনে আলাওল অন্তরঙ্গ মুহূর্তগুলো ভিডিও করে রাখে। ২০১৬ সালে বিষয়টি জানাজানি হলে রুম্পার সংসার ভেঙ্গে যায়। এরপর ২০১৬ সালের ১৪ ফেব্রুয়ারি আরেক দফায় রুম্পার সঙ্গে অবৈধ মেলামেশা করে আবারও ভিডিও ফুটেজ সংরক্ষণ করে আলাওল। গত বছরের পহেলা বৈশাখের রুম্পাকে নিয়ে আলাওল চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে যায়। সেখানেও শারীরিক সম্পর্ক গড়ে তোলে এমনকি মানসিক নির্যাতন চালায়। এ বিষয়গুলো গোপন করে রেখেছিল রুম্পা। আত্ম সম্মানের ভয় দেখিয়ে আলাওল আবারও কুপ্রস্তাব দিলে রুম্পা সাড়া না দিয়ে অবশেষে গত বছরের ২৬ জুলাই মোঃ ইকবাল হোসেনের সঙ্গে দ্বিতীয় বিয়ে হয় রুম্পার। প্রবাসী স্বামী ইকবাল বিদেশে গেলে আলাওল আবারও রুম্পার মোবাইলের নতুন নাম্বার সংগ্রহ করে পুনরায় যোগাযোগ করার চেষ্টা করে। একপর্যায়ে ওমান প্রবাসী স্বামী ইকবাল বিদেশে অসুস্থ হয়ে পড়লে গত ডিসেম্বরে দেশে ফিরে আসে। গত ফেব্রুয়ারিতে চান্দগাঁও থানাধীন রাস্তার মাথা এলাকায় একটি ভাড়া বাসায় ইকবাল ও রুম্পা শহুরে সংসার জীবন শুরু করে। বিভিন্ন সময় এরপরও আলাওল রুম্পাকে কুপ্রস্তাব দেয়া শুরু করলে তাকে হত্যার পরিকল্পনা করা হয়। গত ১৮ মার্চ বায়েজিদ থানাধীন সৈয়দ পাড়ার শহীদ নগরের চারতলা ভবনের তিনতলায় ভাড়া নেয়া হয় আলাওলকে হত্যার উদ্দেশ্যে। এ বিষয়ে বায়েজিদ থানার ওসি মোঃ মহসিন জনকণ্ঠকে জানান, মূলত প্রথমে আলাওলের সঙ্গে রুম্পার প্রেমের সম্পর্ক থাকলেও পরে বিয়ের কারণে সংসার ভাঙ্গার ভীতি দেখিয়ে দৈহিক সম্পর্ক গড়ে তোলে আলাওল। একপর্যায়ে রুম্পার প্রথম সংসার ভেঙ্গে যায়। এমনকি দ্বিতীয় সংসারেও একই অবস্থার সৃষ্টি হলে হত্যার পরিকল্পনা করে রুম্পা ও তার স্বামী। গ্রেফতারকৃতরা জানিয়েছে, এক সময় আলাওল রুম্পার গৃহশিক্ষক ছিল। সে সুবাদে রুম্পার সঙ্গে আলাওলের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে ওঠে। এরই মধ্যে রুম্পার অন্যত্র বিয়ে হয়ে যায়। কিন্তু আলাওল প্রতিনিয়ত রুম্পাকে মোবাইলে নানা কুপ্রস্তাব দিয়ে ও সংসার ভাঙ্গার ভয়ভীতি দেখিয়ে বিভিন্ন স্থানে রাতযাপনও করে। একপর্যায়ে রুম্পা অতিষ্ঠ হয়ে বিষয়টি তার স্বামী ইকবালকে জানায়। পরে ইকবাল তার সৎ ভাই হেলাল, মাসুদ ও তৈয়বকে নিয়ে হত্যার পরিকল্পনা করে। ঘটনার একমাস পূর্বে ইকবাল ও রুম্পা আলাওলকে খুনের পরিকল্পনা করে বিষয়টি ইকবালের সৎ ভাইকে জানায়। পরিকল্পনা অনুযায়ী ফ্ল্যাটটি ভাড়া নিয়ে রুম্পা, ইকবাল, হেলাল ও তৈয়ব আগেভাগে ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান নেয়। বিকেল ৫টার পর আলাওল ওই ফ্ল্যাটে অবস্থান নিলেই হত্যাকা-ের ঘটনা ঘটে।
×