ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

ময়মনসিংহের সালামসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন

প্রকাশিত: ০৫:৫৪, ৩০ মার্চ ২০১৭

ময়মনসিংহের সালামসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে ময়মনসিংহের আব্দুল সালামসহ ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে চূড়ান্ত প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। এটি তদন্ত সংস্থার ৫০ তম প্রতিবেদন। বুধবারই ওই প্রতিবেদন প্রসিকিউশনে দাখিল করা হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, আটক,অপহরণ, অগ্নিসংযোগসহ মোট আট অভিযোগ পাওয়া গেছে। ৯ রাজাকারের মধ্যে মোঃ আব্দুল সালাম, সুরুজ আলী ফকির, মোঃ ময়েন উদ্দিন ফারুকী, মোঃ আব্দুর রহিম ওরফে মোঃ আব্দুর রহিম মাস্টার ওরফে নুর বিএসসি, মোঃ জালাল উদ্দিন ও মোঃ রুস্তম আলী গ্রেফতার হয়ে কারাগারে আটক রয়েছে। অন্যদিকে পলাতক রয়েছে তিন রাজাকার । তদন্ত সংস্থার সমন্বয়ক সানাউল হক বলেন, এই ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে ২০১৬ সালের ১৭ মে থেকে তদন্ত শুরু হয়। ধানম-ি তদন্ত সংস্থার কার্যালয়ে সংবাদ সম্মেলনে সানাউল হক এ কথা বলেছেন। এদিকে ফরিদপুরের মুসা বিন শমসেরের যুদ্ধাপরাধের বিষয়ে অনুসন্ধান চলছে বলে জানিয়েছে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের তদন্ত সংস্থা। প্রমাণ পেলে তার বিরুদ্ধে মামলার কথাও জানিয়েছে সংস্থাটি। সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক সানাউল হক এসব কথা বলেন। সম্প্রতি মুসার বিরুদ্ধে যুদ্ধাপরাধে জড়িত থাকার অভিযোগ নিয়ে প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। যে প্রতিবেদনে ফরিদপুরের কয়েক মুক্তিযোদ্ধা ও একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে নির্যাতিতের বক্তব্য রয়েছে। তাদের কেউ কেউ ট্রাইব্যুনালে মানবতাবিরোধী অপরাধের অন্য মামলায় সাক্ষ্য দিয়েছেন। ওইসব সাক্ষীর দাবি, ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় মুসা ফরিদপুরে যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল। সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে সমন্বয়ক বলেন, তার (মুসা) বিরুদ্ধে অভিযোগ আসেনি। তদন্ত সংস্থার সাত বছর অতিক্রম হয়েছে। অভিযোগ আসেনি। যে দু’জন সাক্ষী বক্তব্য দিয়েছেন সে দু’জন আমাদেরই সাক্ষী। তাদের সম্পর্কে কথা বলতে চাই না। তিনি বলেন, আমরা একটা কথা বলতে পারি, কোন রাজনৈতিক পরিচয়, সামাজিক পরিচয়, অর্থনৈতিক পরিচয় কোন সময়েই আমাদের কোন মামলার ব্যবস্থা গ্রহণের ক্ষেত্রে বিরত রাখতে পারেনি। ওই দুই সাক্ষী পরিচিত। তারা অন্য দুই মামলার সাক্ষী। কাজেই তারা যেহেতু বলেছেন, এ মামলা অনুসন্ধানে তো আছেই। আমরা অনুসন্ধানকারী কর্মকর্তাদের তাদের (সাক্ষী) সঙ্গে যোগাযোগ করে দ্রুত ব্যবস্থা নেয়ার কথা বলব। এবং ফলাফল যদি কিছু হয় আপনারা জানবেন। তদন্ত শুরু করবেন কি-না এমন প্রশ্নের জবাবে সানাউল হক বলেন, ‘অনুসন্ধান চলছে’। অনুসন্ধানের কোন অগ্রগতি আছে কি-না এ প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, যখন অগ্রগতি হবে তখন মামলা দায়ের করব। অনুসন্ধান শুরুর সময়ের বিষয়ে তিনি বলেন, অনেক আগে থেকে শুরু হয়েছে। মুসার বিরুদ্ধে অভিযোগ ফাইলে তালিকাভুক্তির বিষয়ে তিনি বলেন, অনুসন্ধান পর্যায়ে তালিকাভুক্ত হয় না। প্রমাণ পেলে মামলা হিসেবে অন্তর্ভুক্ত হবে। অনুসন্ধান কবে শেষ হবে সাংবাদিকদের এ প্রশ্নের জবাবে বলেন, আমরা ভবিষ্যদ্বাণী করি না। স্পেকুলেটও করি না। আমরা ফ্যাক্টস অনুসারে আগাই। যখন ফ্যাক্টস আসবে তখন আগাব। এ ব্যাপারে টাইমলাইন দেয়ার অধিকার আমার নেই। আমরা আরও অনেকের বিরুদ্ধে অনুসন্ধানে আছি। তার মধ্যে হামদর্দের একজন ট্রাস্টিও রয়েছেন। এদিকে ময়মনসিংহের ৯ রাজাকারের বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধের সময় হত্যা, গণহত্যা, ধর্ষণ, নির্যাতন, অপহরণ, আটক, অগ্নিসংযোগসহ আট ধরনের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগের তদন্ত ২০১৬ সালের ১৭ মে থেকে শুরু হয়ে চলতি ২৯ মার্চ শেষ হয়েছে। পৃথক চার খ-ে ৪২৯ পৃষ্ঠার তদন্ত প্রতিবেদনে মুক্তিযুদ্ধের সময় ১০১ জনকে হত্যা, ১১০-১১২ বাড়িতে অগ্নিসংযোগ, একজনকে ধর্ষণ ও ১২-১৩ জনকে নির্যাতনে গুরুতর আহত করার তথ্য-প্রমাণ পাওয়া গেছে। সংবাদ সম্মেলনে সমন্বয়ক সানাউল হক জানান, ট্রাইব্যুনালের তদন্ত কর্মকর্তা রুহুল আমিন মামলাটি তদন্ত করেছেন। এর পর তাদের গত বছর ৮ আগস্ট বিভিন্ন এলাকা থেকে গ্রেফতার করে পুলিশ। আসামিরা মুক্তিযুদ্ধের সময় আলবদর ও রাজাকার বাহিনীর সদস্য ছিল। তাদের মধ্যে একজন আওয়ামী লীগের সমর্থক রয়েছে বলে জানান তিনি।
×