ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

দূষিত পানি পানে দেশে বছরে ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ৩০ মার্চ ২০১৭

দূষিত পানি পানে দেশে বছরে ৪৩ হাজার মানুষের মৃত্যু হয়

স্টাফ রিপোর্টার ॥ দূষিত পানি পানের কারণে দেশে প্রতিবছর ৪৩ হাজার লোকের মৃত্যু হচ্ছে। তবে এদের বেশিভাগই মারা যাচ্ছে মূলত আর্সেনিকযুক্ত দূষিত পানি পানের কারণে। আর্সেনিক এমন একটি দূষিত পদার্থ যা ভূগর্ভস্ত পানির সঙ্গে মিশে দূষিত করে ফেলছে। ফলে এই পানি যারা নিয়মিত পান করছেন তারা প্রাথমিকভাবে পানি দূষণের বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছেন না। দীর্ঘ মেয়াদে এই পানি পান করার ফলে নীরবে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এছাড়া পানির বিভিন্ন উৎস দূষিত হওয়ার কারণে দেশের প্রায় ১৩ ভাগ বা ২০ মিলিয়ন মানুষ বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে বলে বুধবার আয়োজিত এক সেমিনারে বক্তারা উল্লেখ করেছেন। রাজধানীর ধানম-ির বিলিয়া মিলনায়তনে বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতি বিশ্ব পানি দিবস উপলক্ষে ‘কেন পানি দূষিত হয়ে পড়ছে’ শীর্ষক সেমিনারের আয়োজন করে। সেমিনারে বক্তারা জানান, বিশ্বে প্রতি বছর নিরাপদ পানির অভাবে ২৪০ মিলিয়ন শিশু মারা যাচ্ছে। এছাড়া ৭৮ কোটি লোক বিশুদ্ধ পানি থেকে বঞ্চিত। বাংলাদেশে নানা কারণে পানির বিভিন্ন উৎস দূষিত হয়ে পড়ছে। এ কারণে গ্রাম ও শহরের জনসংখ্যার একটি বড় অংশ নিরাপদ পানি থেকে বঞ্চিত হচ্ছে। অনুষ্ঠানে পানি নিয়ে একটি কী নোট পেপার উপস্থাপন করেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূগোল ও পরিবেশ বিভাগের অধ্যাপক ড. মিজানুর রহমান। তিনি বলেন, দেশের গ্রামাঞ্চলে এবং শহর এলাকায় বিশুদ্ধ পানি প্রাপ্তিতে ভিন্ন ধরনের সমস্যা বিরাজ করছে। গ্রামাঞ্চলের বিশুদ্ব পানির বড় সমস্যা হয়ে দেখা দিয়েছে আর্সেনিক সমস্যা। মধ্যাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলের আর্সেনিক সমস্যা প্রকট আকার ধারণ করছে। যারা এই পানি পান করছে তারা সহজেই বিষয়টি বুঝে উঠতে পারছে না। বা বুঝলেও তাদের কাছে বিকল্প কোন উপায় নেই। তিনি বলেন, আর্সেনিক এমন একটি সমস্যা যা পানি পানের কারণে তাৎক্ষণিকভাবে একটির লক্ষণ প্রকাশ পায় না। যারা দীর্ঘদিন ধরে এই পানি পান করছে তাদের দেহে ধীরে ধীরে আর্সেনিক সমস্যা প্রকট হয়ে উঠছে। ফলে এক সময় তারা মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়ছে। এ কারণে আর্সেনিক সমস্যা দেশে একটি নীরব ঘাতক হিসেবে চিহ্নিত হচ্ছে। কীনোট পেপারে ড. মিজানুর রহমান আরও উল্লেখ করেন পানি এমনি একটি উপাদান যা পান করা ছাড়াও আবার দৈনন্দিন প্রয়োজনে ব্যবহার করা হচ্ছে। এ কারণে পানির ব্যবহার দৃশ্যমান অদৃশ্যমান উভয়ই রয়েছে। মূলত উন্নত দেশের লোকজনের পানি ব্যবহার অনেক বেশি। তবে অনুন্নত দেশগুলোতে পানির অপচয় হচ্ছে বেশি। তিনি বলেন, বিশ্বে যে পরিমাণ পানি রয়েছে তার ৯৭. ৬ ভাগ পানি লবণাক্ত সমুদ্রের পানি। এর বাইরের ব্যবহারযোগ্য বা পানযোগ্য পানি রয়েছে মাত্র ২.৪ ভাগ। এই পরিমাণ পানির মধ্যে আবার ৮৭ ভাগ পানিই বরফ বা তুষারযুক্ত। যেগুলোর আমরা ব্যবহার করতে পারছি না। পানযোগ্য পানির মধ্যে ১৩ ভাগ পানি লিকুইড এবং ব্যবহারযোগ্য। ব্যবহারযোগ্য তরল পানির মধ্যে ৯৫ ভাগই আসছে ভূগর্ভস্থ স্তর থেকে। বাকি পানি পাওয়া যাচ্ছে লেক জলাশয় বা ভূ-উপরিভাগের কোন উৎস থেকে। তিনি বলেন নগরায়নের কারণে পানির অপচয় ও পানি দূষিত হয়ে পড়ার হার বাড়ছে। এক সময় বুড়িগঙ্গা আমাদের প্রাণ ছিল। কিন্তু এখন তা একটি শহরের বর্জ্যসহ পানির বড় ড্রেনে পরিণত হয়ে গেছে। ফলে বুড়িগঙ্গা নিয়ে আমরা গর্ব করতে পারি না। আবার ট্রিটমেন্ট ছাড়াই দূষিত পানি প্রায় ৮০ ভাগ প্রকৃতিতে চলে যাচ্ছে। এ কারণে গ্রাউন্ড ওয়াটার দূষিত হয়ে পড়ছে। মাত্র ২০ ভাগ পানি ট্রিটমেন্ট হয়ে যাচ্ছে। তিনি বলেন রিসাইকেল করে পানি দূষিত হওয়ার হাত থেকে রক্ষা করা যায়। তিনি পরিসংখ্যান উল্লেখ করে বলেন, বাংলাদেশে তিনদিকে তিনটি অববাহিকা থাকার কারণে বন্যায় প্লাবিত হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে ৫৩ ভাগ পানি আসছে ব্রহ্মপুত্র অববাহিকা হয়ে। ২৮ ভাগ পানি আসছে পদ্মা অববাহিকা হয়েছে এবং মেঘনা অববাহিকা হয়ে দেশের ভেতরে আসছে ১৪ ভাগ পানি। আর বৃষ্টির মাধ্যমে আমরা পাচ্ছি মাত্র ৭ ভাগ পানি। কিন্তু এই পানি বন্যার জন্য দায়ী নয়। অন্যের পানি দ্বারাই আমরা বন্যায় আক্রান্ত হয়ে পড়ছি। তবে তিনি বলেন দেশে পানি ব্যবস্থাপনা ক্ষেত্রে সরকারের বিভিন্ন পদক্ষেপের কারণে সচেতনতা বাড়ছে। বিশেষ করে ১৯৯০ সালে দেশের গ্রামাঞ্চলের প্রায় ৩৪ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করত। পানি ব্যবহারে তারা সতর্ক ছিল না। বর্তমানের হিসেবে মাত্র ১ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে। এটা একটা সরকারের বড় অর্জন। এখনও ভারতে ৪৪ ভাগ মানুষ খোলা জায়গায় পায়খানা করে। ৮ ভাগ মানুষ সুপেয় পানি থেকে বঞ্চিত। তবে তিনি উল্লেখ করেন পানি ব্যবস্থাপনায় এখনই সচেতন না হলে ২০৩০ সালের মধ্যে দারিদ্র্য দূরীকরণের অন্যতম সমস্যা হয়ে দাঁড়াবে বিশুদ্ধ পানির যোগান। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন বাংলাদেশ জাতিসংঘ সমিতির সহ-সভাপতি সেলিনা খালেক।
×