ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

এবার ব্যবস্থা নেবে তারা ॥ মুহিত

বাচ্চুর ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট দুদকে জমা দেয়া হয়েছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৮, ৩০ মার্চ ২০১৭

বাচ্চুর ঋণ কেলেঙ্কারির তদন্ত রিপোর্ট দুদকে জমা দেয়া হয়েছে

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বেসিক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আব্দুল হাই বাচ্চু ব্যাংকটির ঋণ কেলেঙ্কারির সঙ্গে সংশ্লিষ্ট বলে তদন্ত প্রতিবেদন দিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়। অর্থ মন্ত্রণালয়ের অনুসন্ধান প্রতিবেদনটি দুর্নীতি দমন কমিশনে (দুদক) জমা দেয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। তিনি বলেন, এখন যে কোন উপায়ে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেবে দুদক। বুধবার দুপুরে শিল্পকলা একাডেমির জাতীয় নাট্যশালা অডিটরিয়ামে ‘শ্রেষ্ঠ দুর্নীতি প্রতিরোধ’ কমিটির সদস্যদের মাঝে পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি একথা জানান। অনুষ্ঠানটির আয়োজন করে দুদক। অনুষ্ঠানে ঢাকা, ময়মনসিংহ ও সিলেটের সেরা দুর্নীতি প্রতিরোধ কমিটির সদস্যদের পুরস্কার দেয়া হয়। অর্থমন্ত্রী বলেন, এ বিষয়ে একটি তদন্ত রিপোর্ট দুদকে দেয়া হয়েছে। ইনভেস্টিগেশন রিপোর্টে হি (আব্দুল হাই বাচ্চু) হ্যাজ বিন ব্লেমড। তবে এ বিষয়ে আর কোন তথ্য দেননি অর্থমন্ত্রী। প্রসঙ্গত, আব্দুল হাই বাচ্চু বেসিক ব্যাংকের চেয়ারম্যান থাকাকালে ২০০৯ থেকে ২০১২ সালের মধ্যে ব্যাংকটির দিলকুশা, গুলশান ও শান্তিনগর শাখা থেকে নিয়মবহির্ভূতভাবে সাড়ে ৪ হাজার কোটি টাকা উত্তোলন ও আত্মসাতের ঘটনা ঘটে। ঋণপত্র যাচাই না করে জামানত ছাড়াই জাল দলিলে ভুয়া ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানকে ঋণ দেয়াসহ নিয়ম না মেনে অনুমোদনের অভিযোগ ওঠে তখনকার পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে। এ বিষয়ে ২০১০ সাল থেকে অনুসন্ধান শুরু করে দুদক। প্রায় চার বছর অনুসন্ধান শেষে ২০১৫ সালে রাজধানীর তিনটি থানায় ১৫৬ জনকে আসামি করে ৫৬ মামলা করে কমিশন। এছাড়া বেসিক ব্যাংক কেলেঙ্কারির মামলাগুলোর ১৫৬ আসামির মধ্যে বেসিক ব্যাংকের কর্মকর্তা ২৬। বাকি ১৩০ আসামি ঋণগ্রহীতা ৫৪ প্রতিষ্ঠানের স্বত্বাধিকারী ও সার্ভে প্রতিষ্ঠানের। এর মধ্যে ব্যাংকের সাবেক এমডি কাজী ফখরুল ইসলামকে ৪৮, ডিএমডি ফজলুস সোবহানকে ৪৭, কনক কুমার পুরকায়স্থকে ২৩ এবং ডিএমডি এ মোনায়েম খানকে ৩৫টি মামলায় আসামি করে দুদক। তবে আসামির তালিকায় বাচ্চু বা পরিচালনা পর্ষদের কাউকে সেখানে রাখা হয়নি। শুধু তাই নয়, ’১৪ সালের সেপ্টেম্বরে বেসিক ব্যাংকে ঋণ জালিয়াতির ঘটনায় ব্যাংকটির সাবেক চেয়ারম্যান ও তখনকার পর্ষদ সদস্যদের নাম দুদকের মামলায় অন্তর্ভুক্ত করার আদেশ চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট মামলা দায়ের করেছিলেন নোয়াখালীর হারুনুর রশীদ। এর পরিপ্রেক্ষিতে বিচারপতি রুহুল কুদ্দুস ও বিচারপতি মাহমুদুল হকের হাইকোর্ট বেঞ্চ গত বছরের ১০ ফেব্রুয়ারি দুদক, বেসিক ব্যাংক ও বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে ওই ঋণ জালিয়াতির তদন্ত প্রতিবেদন চেয়ে পাঠান। তিনটি প্রতিষ্ঠানই তাদের প্রতিবেদন আদালতে জমা দিয়েছে। এ নিয়ে উচ্চ আদালত এখনও কোন রায় দেননি। এদিকে দুদকের বক্তব্য, ঋণ কেলেঙ্কারির ঘটনায় বাচ্চুর সংশ্লিষ্টতা পাওয়া যায়নি। তাই তাকে আসামির তালিকায় রাখা হয়নি। তবে দুদকের ওই তদন্তে অর্থ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি অসন্তোষ প্রকাশ করে। বাংলাদেশ ব্যাংক থেকে আলাদাভাবে এই বিষয়টি অনুসন্ধানও করা হয়। সেই প্রতিবেদনে বাচ্চুকে দায়ী করার কথা জানিয়ে মুহিত বলেন, এখন দেখা যাক কি হয়। পরবর্তীতে কি পদক্ষেপ নেয়া যায়। এ সময় দুদকের চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ, প্রতিষ্ঠানটির কমিশনার এএফএম আমিনুল ইসলাম ও সচিব আবু মোহাম্মদ মোস্তফা কামাল উপস্থিত ছিলেন। তবে এ বিষয়ে দুদক চেয়ারম্যান ইকবাল মাহমুদ বলেন, এখনও প্রতিবেদনটি কমিশনে আসেনি। সেটি পেলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেব কি নেব না সেটি বোঝা যাবে।
×