ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

বিচারের জন্য ১৯৫ পাক সেনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ৩০ মার্চ ২০১৭

বিচারের জন্য ১৯৫ পাক সেনাকে ফেরত চাইবে বাংলাদেশ

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবসের আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভে জনমত গড়ে তুলতে হবে। সেদিন বাংলাদেশে ঘটে যাওয়া অমানবিক গণহত্যাকা-ের স্বীকৃতি দিলে মানবতার জন্য বিশ্বে তা বড় নজির হবে। এছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও ষড়যন্ত্র করে চলেছে। বুধবার বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ইন্টারন্যাশনাল এ্যান্ড স্ট্র্যাটেজিক স্টাডিজ (বিআইআইএসএস) মিলনায়তনে ‘২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস’ শীর্ষক সেমিনারে এসব কথা বলেন বক্তারা। সেমিনারে আইনমন্ত্রী বলেছেন, পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর ১৯৫ সদস্য যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল, তাদের দেশে এনে বিচারের জন্য ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। সেমিনারের আয়োজন করে বিআইআইএসএস। বিআইআইএসএসের চেয়ারম্যান মুন্সী ফয়েজ আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী। সমাপনী পর্বের প্রধান অতিথি ছিলেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। এছাড়াও সেমিনারের বিভিন্ন পর্বে বক্তব্য রাখেন একাত্তরের ঘাতক-দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আনোয়ার হোসেন, সমাজসেবক জুলিয়ান ফ্রান্সিস, পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের সচিব (দ্বিপক্ষীয়) মাহবুবুজ্জামান, বিআইআইএসএসের মহাপরিচালক মেজর জেনারেল একেএম আব্দুর রহমান প্রমুখ। সেমিনারে টেলিকনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. পায়াম আখভান। সেমিনারের উদ্বোধনী পর্বে পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী বলেন, বর্তমান সরকারের অধীনে বাংলাদেশ শান্তি ও সমৃদ্ধির পথে এগিয়ে যাচ্ছে। এর পেছনে ২৫ মার্চের আত্মত্যাগের ফলে আসা স্বাধীনতা শক্তি যুগিয়েছে। সরকার ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে। এখন সময় জাতিসংঘের স্বীকৃতি আদায়। তিনি বলেন, বিশ্বে বাংলাদেশ এখন উন্নয়নের রোল মডেল। কিন্তু স্বাধীনতার ৪৬ বছর পরও মুক্তিযুদ্ধের পরাজিত শক্তি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে এখনও ষড়যন্ত্র করে চলেছে। এদের বিরুদ্ধে আমাদের রুখে দাঁড়াতে হবে। সেমিনারে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক বলেন, ১৯৭১ সালে পাকিস্তান সামরিক বাহিনীর যে ১৯৫ জন সদস্য যুদ্ধাপরাধের সঙ্গে জড়িত ছিল তাদের দেশে এনে বিচারের জন্য ফেরত চাইবে বাংলাদেশ। ১৯৭৪ সালে বাংলাদেশ, ভারত ও পাকিস্তানের মধ্যে ত্রিপক্ষীয় চুক্তিতে বলা হয়, সামরিক বাহিনীর ১৯৫ সদস্যকে পাকিস্তানে বিচার করা হবে। এজন্য তাদের পাকিস্তানে পাঠানো হয়। কিন্তু তাদের বিচার করা হয়নি। ফলে এ চুক্তি লঙ্ঘিত হয়েছে। সেজন্য বাংলাদেশ ওই ১৯৫ জনের বিচার করতে চায়। আইনমন্ত্রী আরও বলেন, আমরা জানি ১৯৫ জনের অনেকেই বেঁচে নেই। কিন্তু যারা জীবিত আছে তাদের ফেরত চাই। এজন্য আমরা চেষ্টা করব। তিনি জানান, আন্তর্জাতিক যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনাল স্থানীয় মানবতাবিরোধীদের বিচার করার পর এই ১৯৫ জনের যুদ্ধাপরাধের বিষয়টি তদন্ত করে দেখছে। আনিসুল হক বলেন, ২৫ মার্চ কাল রাতের হত্যাকা- ভুলে যাওয়া, ক্ষমা করা সম্ভব নয়। বিচারের ভিত তৈরি, আমরা আন্তর্জাতিক আদালতে যাব। আমি আইনমন্ত্রী থাকা অবস্থায় ওই সেনা সদস্যদের বিচারের পক্ষে শক্ত অবস্থান নেব। ২৫ মার্চ আন্তর্জাতিক গণহত্যা দিবসের স্বীকৃতির জন্য সর্বস্তরের মানুষের জনমত গড়ে তোলারও আহ্বান জানান আইনমন্ত্রী। একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটির সভাপতি শাহরিয়ার কবির বলেন, ইসলামের নামে ১৯৭১ সালে পাকিস্তানের সেনাবাহিনী বিশেষ করে জামায়াতে ইসলামীর সহযোগিতায় গণহত্যা চালিয়েছে। বর্তমানে আলকায়েদা ও আইএসও একই ধরনের অপরাধ করছে। আমরা যদি বাংলাদেশের গণহত্যার রাজনৈতিক দর্শনের সঙ্গে বর্তমান আল কায়েদা ও আইএসের গণহত্যার রাজনৈতিক দর্শনের সাদৃশ্য তুলে ধরতে পারি, তাহলে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়কে বোঝানো আরও সহজ হবে। একই সঙ্গে বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি আদায় করাও দ্রুত সম্ভব হবে বলে তিনি অভিমত ব্যক্ত করেন। সমাজ সেবক জুলিয়ান ফ্রান্সিস বলেন, ১৯৭১ সালে ভারতে বাংলাদেশী শরণার্থী ক্যাম্পে কাজ করেছিলাম। সেই সময়ের দুঃসহ স্মৃতি আমি কখনোই ভুলতে পারি না। সে সময়ে প্রায় এক কোটি শরণার্থী ভারতে আশ্রয় নিয়েছিলেন। তবে পাকিস্তান বলেছে, প্রায় বিশ লাখ। সেটা সত্য নয় বলে তিনি জানান। সেমিনারে কানাডা থেকে টেলিকনফারেন্সে যোগ দেন আন্তর্জাতিক গণহত্যা বিশেষজ্ঞ ড. পায়াম আখভান। তিনি বলেন, বাংলাদেশের গণহত্যার স্বীকৃতি বিভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকে দেখতে হবে। সেভাবে উদ্যোগও নিতে হবে। সুশীল সমাজ থেকে বিষয়টি তুলতে হবে। আবার জাতিসংঘেও তুলতে হবে। বিভিন্ন ফোরামে এটি তুলতে হবে। এভাবে বিভিন্ন উদ্যোগের মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক গণহত্যার স্বীকৃতি আসবে বলেও তিনি আশা প্রকাশ করেন। সেমিনারে বক্তারা বলেন, পাকিস্তান হানাদার বাহিনীর নৃশংস গণহত্যার আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি লাভের জন্য বাংলাদেশের উদ্যোগগুলো তুলে ধরার পাশাপাশি এসব বর্বরতার ক্ষেত্রে জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পর্যায়ে বৃহত্তর সচেতনতা গড়ে তোলার বিষয়ে পরামর্শ দেন বক্তারা।
×