ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ১৭ এপ্রিল ২০২৪, ৩ বৈশাখ ১৪৩১

মৌলভীবাজারের দুটিতে অভিযান শুরু ;###;কুমিল্লার জঙ্গী আস্তানায় অভিযান সিটি নির্বাচনের পর

মৌলভীবাজারে দুটি, কুমিল্লায় একটি ॥ আরও তিন জঙ্গী আস্তানা

প্রকাশিত: ০৫:৩৯, ৩০ মার্চ ২০১৭

মৌলভীবাজারে দুটি, কুমিল্লায় একটি ॥ আরও তিন জঙ্গী আস্তানা

গাফফার খান চৌধুরী/সৈয়দ হুমায়েদ শাহীন/মীর শাহ আলম ॥ একের পর এক জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলছে। সিলেটের পর এবার মৌলভীবাজারে দুটি এবং কুমিল্লায় একটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান মিলেছে। মৌলভীবাজারের আস্তানা দুটিতে অভিযান চালানোর সময় আস্তানার ভেতরে থাকা জঙ্গীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালিয়েছে। আর কুমিল্লায় আবিষ্কৃত হওয়া জঙ্গী আস্তানাটিতে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের আজকের নির্বাচন অনুষ্ঠিত হওয়ায় পরই অভিযান চালানো হবে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার জানিয়েছেন, ভোটের পরই আস্তানায় অভিযান চালানোর নির্দেশনা দেয়া হয়েছে। এতে করে জঙ্গী আস্তানা আবিষ্কৃত হলেও ভোটের ওপর এর কোন প্রভাব পড়বে না। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী বার বার হ্যান্ডমাইকযোগে জঙ্গীদের আত্মসর্মপণ করার আহ্বান জানিয়েছে। কুমিল্লার আস্তানা থেকে জঙ্গীরা কোন সাড়া দেয়নি। তবে মৌলভীবাজারের আস্তানা থেকে জঙ্গীরা মৌখিকভাবে সাড়া না দিলেও পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ও গ্রেনেড হামলা করে অস্ত্রের ভাষায় সাড়া দিচ্ছে। আস্তানায় অভিযান চালাতে পুলিশের বিশেষায়িত বাহিনী সোয়াটসহ অন্যান্য টিম ঘটনাস্থলে গেছে। মৌলভীবাজারের আস্তানা দুটির চারদিকে দুই কিলোমিটারজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। আর কুমিল্লার আস্তানার চারদিকেও প্রয়োজনে ১৪৪ জারি করা হবে। জঙ্গী আস্তানাগুলোর আশপাশের বাসিন্দাদের নিরাপদ দূরত্বে সরে যেতে মাইকিং করা হয়েছে। আস্তানা তিনটি ঘিরে রেখেছে পুলিশ, র‌্যাব ও সোয়াট। আস্তানার আশপাশে বিদ্যুত ও গ্যাস সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হয়েছে। প্রয়োজনে মোবাইল ফোনের নেটওয়ার্কও বিচ্ছিন্ন করে দেয়া হবে। জঙ্গী আস্তানাগুলোতে অভিযান চালাতে প্রয়োজনে সেনাবাহিনী অংশ নেবে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল জানিয়েছেন। মৌলভীবাজারে দুটি জঙ্গী আস্তানার সন্ধান ॥ মঙ্গলবার রাতে মৌলভীবাজার পৌরসভার বড়হাট এলাকার একটি তিন তলা বাড়ি এবং সদর উপজেলার খলিলপুর ইউনিয়নের সরকার বাজারের কাছে নাসিরপুর গ্রামের প্রায় তিন একর জমির ওপর নির্মিত একটি একতলা বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় গোয়েন্দারা। বাড়ি দুটির মালিক সাইফুর রহমান নামের যুক্তরাজ্য প্রবাসী এক বাংলাদেশী। রাত থেকেই আস্তানা দুটি ঘিরে রাখে পুলিশ, র‌্যাব ও পুলিশের কাউন্টার টেররিজম এ্যান্ড ট্রান্সন্যাশনাল ইউনিটের (সিটিটিসি) সদস্যরা। দুটি আস্তানার মধ্যে দূরত্ব প্রায় ২০ কিলোমিটার। মৌলভীবাজারের আস্তানা দুটির চারদিকে ১৪৪ ধারা জারি ॥ আস্তানা দুটির চারদিকে দুই কিলোমিটারজুড়ে ১৪৪ ধারা জারি করা হয়েছে। মৌলভীবাজারের জেলা প্রশাসক মোঃ তোফায়েল ইসলাম জানান, বুধবার দুপুর দুইটা থেকে পরবর্তী নির্দেশ না দেয়া পর্যন্ত উল্লিখিত এলাকায় ১৪৪ ধারা বলবৎ থাকবে। মাইকিং করে এলাকা থেকে মানুষজনকে নিরাপদ দূরত্বে চলে যেতে বলা হয়েছে। অনাকাক্সিক্ষত পরিস্থিতি এড়াতে ওই এলাকায় গণমাধ্যম কর্মীসহ সাধারণ মানুষের চলাচল ও যানবাহন যাতায়াত নিষিদ্ধ করা হয়েছে। বাড়ি দুটির কেয়ারটেকারের বক্তব্য ॥ বাড়ি দুটির কেয়ারটেকার জুয়েল মিয়া বলছেন, রাতে লন্ডন থেকে বাড়ি দুটির মালিক সাইফুর রহমান তাকে ফোন করেন। ফোনেই তিনি বাড়ি দুটি আইনশৃঙ্খলা বাহিনী কর্তৃক ঘেরাও করার খবর পান। খবর পেয়ে দ্রুত তিনি মৌলভীবাজার সদর উপজেলার নাসিরপুর গ্রামের বাড়িটিতে যান। তিনি বাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান। বাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিরা জঙ্গী কিনা জানতে চান তিনি। এর পর পরই ভেতর থেকে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ে মারে। জুয়েল মিয়া আরও জানান, নাসিরপুরের বাড়িটি চলতি বছরের জানুয়ারিতে ভাড়া নেন বর্তমান ভাড়াটিয়ারা। ভাড়া নেয়ার সময় নিজেকে মাহফুজ বলে পরিচয় দেন। তার বাড়ি টাঙ্গাইল বলে জানান। মাহফুজ নিজেকে একটি কোম্পানির ডিলার পরিচয় দেন। সাত হাজার টাকায় বাড়িটি ভাড়া দেয়া হয়। ঘরে আটজন থাকে। আর অপর বাড়িটি বেলাল নামে পরিচয় দিয়ে ভাড়া নিয়েছেন। তিনি নিজেকে একটি কোম্পানির ম্যানেজার পরিচয় দিয়েছেন। পুলিশের ওপর জঙ্গীদের গুলি ও গ্রেনেড হামলা ॥ সকালে পুলিশ ও কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা বাড়িতে অভিযান চালাতে যায়। তারা বাড়ির কাছাকাছি গিয়ে হ্যান্ডমাইকযোগে বাড়ির ভেতরে থাকা ব্যক্তিদের পরিচয় জানতে চান। জবাবে বাড়ির ভেতর থেকে পুলিশকে লক্ষ্য করে গ্রেনেড হামলা ও গুলি চালানো হয়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়িটি জঙ্গীদের আস্তানা বলে আরও নিশ্চিত হয়। একই অবস্থা মৌলভীবাজারের সদর উপজেলায় আবিষ্কৃত হওয়া জঙ্গী আস্তানাটির। এ আস্তানাটিতে অভিযান চালাতে গেলে পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি ও গ্রেনেড হামলা চালানো হয়। বাড়ি দুটি থেকে থেমে থেমে গুলি ও গ্রেনেড ছুড়ছে জঙ্গীরা। পুলিশও পাল্টা গুলি চালায়। দায়িত্বরত আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সংশ্লিষ্টরা বলছেন, দুটি আস্তানায়ই বিপুল পরিমাণ অস্ত্র-বিস্ফোরক রয়েছে বলে ধারণা করা হচ্ছে। জঙ্গী আস্তানায় থাকা জঙ্গীদের হ্যান্ডমাইকযোগে আত্মসর্মপণের বার বার আহ্বান জানিয়েছে পুলিশ। জঙ্গীরা মৌখিকভাবে কোন সাড়া দেয়নি। সাড়া দিয়েছে অস্ত্রের ভাষায়। পুলিশকে লক্ষ্য করে গুলি চালিয়ে ও গ্রেনেড হামলা করে আত্মসর্মপণের আহ্বানের সাড়া দিয়েছে জঙ্গীরা। কুমিল্লায় জঙ্গী আস্তানা ॥ মৌলভীবাজারে দুটি জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের মধ্যেই কুমিল্লার কোটবাড়ী এলাকায় একটি বাড়িতে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পায় পুলিশ। নির্বাচনের আগের দিন জঙ্গী আস্তানার সন্ধান পাওয়ার খবর ছড়িয়ে পড়লে এলাকাবাসীর মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়ে পড়ে। কুমিল্লার পুলিশ সুপার শাহ আবিদ হোসেন জানান, বুধবার দুপুরে পুলিশের কাউন্টার টেররিজম ইউনিটের সদস্যরা ওই বাড়িটি ঘিরে ফেলেন। সারাদেশে জঙ্গী আস্তানার সন্ধান করছে গোয়েন্দারা। অনুসন্ধানের ভিত্তিতেই ওই বাড়িটির সন্ধান মেলে। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্য ॥ বুধবার সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেন, জঙ্গীদের আস্তানা থাকার তথ্যের সূত্র ধরেই আইনশৃঙ্খলা বাহিনী মৌলভীবাজারের ওই বাড়িগুলোতে যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ভেতরে ঢুকতে গেলে জঙ্গীরা বোমার বিস্ফোরণ ও গুলি চালায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী বাড়ি ঘেরাও করে রেখেছে। বাড়িগুলো থেকে গোলাগুলি ও বোমা বিস্ফোরণ হচ্ছে। বিশেষ বাহিনী সোয়াট ও বোমা নিষ্কিয়কারী দল পৌঁছার পর অপারেশন শুরু হবে। খলিলপুরের আস্তানায় দু’একজন মহিলা ও বিশেষ কোন জঙ্গী থাকতে পারে। সিলেট অঞ্চলে জঙ্গীরা শেল্টার নিচ্ছে বলে জানা গেছে। জঙ্গীদের সিলেট অঞ্চলকে বেছে নেয়ার পেছনে ভৌগোলিক সুবিধা ছাড়াও রাজনৈতিক আশ্রয়-প্রশ্রয় আছে কি-না তা জানার চেষ্টা চলছে। জঙ্গীবাদ বাড়তে পারছে না। জঙ্গীদের সংখ্যা খুবই সামান্য। প্রধানমন্ত্রীর ভারত সফরের আগে জঙ্গী দমনে এমন তৎপরতার কোন যোগসূত্র নেই। এটি একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া।
×