ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

অমিত দাস

মানুষ মানুষের জন্য

প্রকাশিত: ০৫:১৬, ৩০ মার্চ ২০১৭

মানুষ মানুষের জন্য

মানুষ এখন অনেকটাই আত্মকেন্দ্রিক। বহু মানুষের মন থেকে মহত্ত্ব, মনুষ্যত্ব মহানুভবতা, মানবিকতার ‘ম’গুলো দিনে দিনে মুছে যাচ্ছে। অথচ অপরের সুখ-দুঃখ অনুভব করাই তো মানুষের মানবীয় গুণাবলি। কিন্তু প্রকৃত সত্য বর্তমানে আমাদের সমাজে আমরা লক্ষ্য করছি ব্যক্তি তার বিবেক মানবিক চেতনা বিচার বুদ্ধিকে বিসর্জন দিয়ে ব্যক্তি স্বার্থের বেড়াজালে বন্দী। চোখের সামনেই ঘটে যাওয়া অনেক মর্মান্তিক ঘটনায় মানুষ চোখ বুজে মুখ ফিরিয়ে পাশ কেটে চলে যায়। এখন প্রতিবেশীর অভাব অনটন দুঃখ কষ্ট প্রতিবেশীকে সেভাবে দুঃখ ভারাক্রান্ত করে না। মানুষের মন এখন অনুভূতিহীন যেন পাথর হয়ে গেছে। সেটা কারও দুঃখে খুব বেশি একটা বিগলিত হয় না। কিন্তু আমি আমার ব্যক্তিগত জীবনে দীনতার মাঝেও সুদীর্ঘ উনিশ বছর ধরে মানবতার মোমবাতিটি জ্বালিয়ে রেখেছি। অনেক ছাত্রকে বিনা পয়সায় পড়িয়ে ময়মনসিংহের চরাঞ্চলে শম্ভুগঞ্জের রঘুরামপুরে একটি হাই স্কুলে নামমাত্র বেতনে তিন বছর তিন মাস শিক্ষকতা করেছি, বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বের হবার পর। জানি না এতে মানবতার কতটুকু কি হয়েছে। তবে মানুষের দুর্দশায় মনটা হু-হু করে কেঁদে উঠে এখনও। এই বিশ্ব সংসারে তাবত মানব সমাজে অর্থ, বিদ্যা, শিক্ষা, শারীরিক শক্তি দিক দিয়ে সকলেই সমান নয়। এই বিশ্ব মানব সমাজে চির অসমতা শাশ্বত কেউ ধনবান-ধনহীন, কেউ বিদ্বান-বিদ্যাহীন, কেউ শারীরিকভাবে সুস্থ সবল কেউ বা শারীরিকভাবে বিকলাঙ্গ বা শারীরিক প্রতিবন্ধী এসব মানুষেরা সমাজের সাহায্য সহযোগিতা না পেলে একেবারেই চলতে পারে না। এরা নিতান্ত অসহায়। এদের আমাদের মনেপ্রাণে ভালবাসতে হবে, দরদ দেখাতে হবে ওরা আমাদের দূরের কেউ নয়। মানুষ মানুষের জন্য আমরা যদি নিজেদের মানুষ দাবি করি বা মানুষ পদবাচ্যে পরিচিত হতে চাই তাহলে আমাদের ভোগবাদী দৃষ্টিভঙ্গি বদলাতে হবে এবং অপরের জন্য কষ্ট স্বীকার করতে হবে। ত্যাগের মহিমায় উজ্জীবিত হতে হবে। এসব প্রতিবন্ধী যারা হাঁটতে পারে না, কথা বলতে পারে না চোখে দেখে না, কানে শোনে না তাদের কোন কোনভাবে সেবা করতে হবে। কেননা সবার উপর মানুষ সত্য তাহার উপর নাই এই অমরবাণী এদেশের সকল সচেতন সমাজবাসী কি বিস্মৃত হয়েছি? এই সমাজে অনেক বিত্তবান, বিদ্ধান, সবল সুঠাম দেহের মানুষ আছেন তারা যদি তাদের বিলাসিতা ব্যয় সংকোচন করে নিজেদের চাহিদাগুলো ছেটে ব্যক্তিগত আরাম আয়েশ বিসর্জন দিয়ে বিদ্যা দিয়ে বিত্ত দিয়ে বুদ্ধি দিয়ে নিজের দেহের শক্তি দিয়ে সাহায্য করেন, সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেন এসব অচল মানুষের পাশে এসে দাঁড়ান তাহলে এসব অক্ষম বিকলাঙ্গ বুদ্ধি প্রতিবন্ধী মানুষের কষ্ট অনেকাংশে মোচন হবে। মানুষের দুঃখে মানুষের মন যদি না কাঁদে যদি কোন সমবেদনা না জাগে তাহলে তাকে মানুষ বলা যায় না। আর এটা গোটা মানব সমাজের জন্য বেশ অবমাননাকর। আমরা মানব সেবার মানব প্রেম মহিমা দেখতে পাই। যখন দেখি মানুষ শীতার্থ বন্যার্ত মানুষের পাশে দাঁড়ায়। আর এটাই মানবতার বিজয়। মানবসেবাকে প্রায় প্রতিটি ধর্মে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। স্বামীজি স্বামীবিবেকানন্দ মানব সেবার মহিমাকে এভাবে প্রকাশ করেছেন ‘জীবে প্রেম করে যেই জন সেই জন সেবিছে ঈশ্বর।’ মানবসেবায় আমাদের মনোনিবেশ করতে হবে। যদি তা না করি সেটা হবে অমার্জনীয় অপরাধ। নেতিবাচক প্রবৃত্তিগুলো রাগ হিংসা দ্বেষ ঘৃণা বাদ দিয়ে সবার জন্য নিজেকে বিলিয়ে দিতে হবে, উজাড় করে দিতে হবে। আত্মঅহমিকায় মানুষকে অবহেলা করা যাবে না। চন্দ্রনাথ ডিগ্রী কলেজ, নেত্রকোনা থেকে
×