ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ১৮ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

অপারেশন টোয়াইলাইট

প্রকাশিত: ০৫:১৪, ৩০ মার্চ ২০১৭

অপারেশন টোয়াইলাইট

মুহুর্মুহু বিস্ফোরণ, গ্রেনেড, বোমা, গুলির শব্দে কেঁপে ওঠেছিল সুরমা নদী তীরের সিলেট শহর। টানা পাঁচ দিন ধরে অভিযান চালানো হয় জঙ্গী আস্তানায়। গত বৃহস্পতিবার মাঝ রাত থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত চলে অভিযান। আত্মসমর্পণের আহ্বানেও সাড়া দেয়নি জঙ্গীরা। বরং পাল্টা গুলি ও বোমা নিক্ষেপ করে তারা আতঙ্ক ছড়িয়েছে। এরা মূলত আতঙ্কবাদী। আতঙ্ক ছড়ানো শুধু নয়, নির্বিচারে মানুষ হত্যায় তারা শক্তিমত্তা প্রদর্শন করে আসছে। জঙ্গীরা বেশ কৌশলী বলেই এই অভিযান দীর্ঘতর হলো। বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসে সিলেটের দক্ষিণ সুরমায় ‘আতিয়া মহল’ জঙ্গীমুক্ত করতে বাংলাদেশ সেনাবাহিনী, পুলিশ একযোগে অভিযান চালায়। তৃতীয় দিনে পাল্টা আক্রমণ চালিয়ে পুলিশ খতম করেছে দুই জঙ্গীকে। তার আগে ঘটনাস্থলের কাছাকাছি দু’দফা বিস্ফোরণে দুই পুলিশ কর্মীসহ ছয় জন নিহত হয়। আহত হয় র‌্যাব পুলিশের তিন কর্মকর্তা, সাংবাদিকসহ ৪৩ জন। ‘আতিয়া মহল’ এর নিচতলায় জঙ্গীরা যে আস্তানা গেড়েছে তা মহলের অন্য ২৮টি ফ্ল্যাটের বাসিন্দাদের অজানা ছিল, ভাবতেই বিস্ময় জাগে। এত বিস্ফোরক দ্রব্য, গোলাবারুদ বাড়িটির নিচতলায় এনে জমা করেছে অথচ কেউ ঘুণাক্ষরে টের পায়নি। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর একের পর এক অভিযানে যখন অনেকটাই স্বস্তি ফিরে এসেছে জনমনে, তখন দেশের বিভিন্ন স্থানে জঙ্গী আস্তানা গড়ে ওঠা আতঙ্ক বাড়ায় বৈকি! জঙ্গীরা নতুনভাবে সংগঠিত শুধু নয়, তাদের মধ্যে আত্মঘাতী প্রবণতাও বাড়ছে। এমনকি আত্মঘাতী নারী জঙ্গীও সৃষ্টি হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ব্যাপক তৎপরতায় জঙ্গীরা চাপে থাকায় আর কোথাও সন্ত্রাসী হামলা চালাতে পারছিল না। সাধারণের মনে এমন ধারণা তৈরি হয়, দেশে জঙ্গী হানা এবার বন্ধ করা গেল। তাই নিরাপত্তাহীনতা থেকে মানুষ বেরিয়ে আসতে পেরেছিল। একের পর এক জঙ্গীদের আস্তানা গুঁড়িয়ে দেয়ায় স্বস্তি ফিরে আসে দেশবাসীর মনে। কিন্তু যখনই হরকাতুল জিহাদ নেতা ফাঁসির দ-প্রাপ্ত হান্নানও তার সহযোগীদের দ- কার্যকরের পদক্ষেপ শুরু হয়েছে, তখনই জঙ্গীদের তৎপরতা বেড়েছে। কারাগারে নেয়ার সময় হান্নানকে ছিনিয়ে নিতে প্রিজন ভ্যানেও হামলা চালিয়েছিল। পুলিশ তা প্রতিহত করে। চলতি মার্চ মাসে যে কয়টি ঘটনা ঘটেছে, তাতে জঙ্গীদের বিষয়ে নতুন করে ভাবার সময় এসেছে। বিশেষত কৌশলগত দিকগুলোয়। রাজনৈতিক দলের ছত্রছায়ায় বেড়ে ওঠা এই জঙ্গীরা আগামী সংসদ নির্বাচনকে সামনে রেখে যে তৎপর হয়ে উঠতে চায়, এটা বোঝা যায় বিএনপি নেতাদের কথাবার্তা, বক্তৃতা ও বিবৃতিতে। এই জঙ্গীরা পাকিস্তানে ও পশ্চিমবঙ্গে প্রশিক্ষিত। বাংলাদেশে সন্ত্রাস চালিয়ে ওরা সীমান্ত পাড়ি দেয়। পশ্চিমবঙ্গে এদের ঘাঁটিগুলো নির্মূলে রাজ্য সরকার তেমন কোন তৎপরতা দেখাতে পারেনি। অসম ও মনিপুরেও জঙ্গীদের আস্তানা রয়েছে। সিলেটে জঙ্গী আস্তানা যে একটাই তা হয়ত নয়। শায়খ রহমানও সিলেটের এক বাড়িতে সপরিবারে আশ্রয় নিয়েছিল। তার সমর্থক ও অনুসারীরা ব্যাপকভাবে যে তৎপর রয়েছে, তা নানাভাবে উন্মোচিত। এমনিতে এই উপমহাদেশে সন্ত্রাসে উত্তরোত্তর দীর্ণ হচ্ছে। হিংসা-সন্ত্রাসের ভৌগোলিক বিস্তার ঘটছে খুব দ্রুত। পাকিস্তান আর আফগানিস্তান জঙ্গীবাদ সৃষ্টির উর্বর ক্ষেত্র। সেখান থেকে প্রশিক্ষিতরা বাংলাদেশকে রক্তাক্ত করে তুলছে প্রায়। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার জঙ্গী মোকাবেলায় চেষ্টার কোন ত্রুটি নেই। হিংসা ও সন্ত্রাসের দিকে বাংলাদেশী যুব সমাজের বিপথগামী হওয়ার প্রবণতা হ্রাসে চাই যথাযথ পদক্ষেপ। জনগণকে ব্যাপকভাবে সচেতন করা না গেলে, জঙ্গীরা আশ্রয়-প্রশ্রয় পাবে অনায়াসে। সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে বাংলাদেশের দ্ব্যর্থহীন অবস্থান রয়েছে বলেই জঙ্গী আস্তানা নির্মূল সম্ভব হচ্ছে। অপারেশন টোয়াইলাইট জঙ্গীবাদকে নির্মূল করার ক্ষেত্রে একটি মাইলফলক হয়ে থাকবে। সব জঙ্গী আস্তানা সমূলে উৎপাটন করার পাশাপাশি জনগণকেও উদ্বুদ্ধ করা আজ একান্ত আবশ্যক।
×