ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

বাংলাদেশ ও বিশ্ব পরিচয়;###;মোঃ মনোয়ারুল হক

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

প্রকাশিত: ০৬:৩৬, ২৯ মার্চ ২০১৭

অষ্টম শ্রেণির পড়াশোনা

বি.এস.এস,বি-এড সিনিয়র শিক্ষক, কানকিরহাট বহুমূখী উচ্চ বিদ্যালয় সেনবাগ, নোয়াখালী। পরীক্ষকঃ মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড, কুমিল্লা। মোবাইলঃ ০১৭১৮৮৬৩০৪৫ সুপ্রিয় শিক্ষার্থীরা, আন্তরিক প্রীতি ও শুভেচ্ছা রইল। তৃতীয় অধ্যায়- বাংলাদেশের সাংস্কৃতিক পরিবর্তন ও উন্নয়ন সৃজনশীল প্রশ্ন উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও। যশোরের মেয়ে শামীমা সালোয়ার, কামিজ ও শাড়িতে সুই, সুতা পুঁতি , চুমকি , শামুক-ঝিনুক দিয়ে হাতে নকশা তৈরি করেন। এগুলো ডাকার বিভিন্ন দোকানে সরবরাহ করেন। তিনি এলাকার হতদরিদ্র গৃহিণী ও বিদ্যালয়ের ঝরে পড়া মেয়েদেরকে প্রশিক্ষণ দিয়ে কাজ করান। বর্তমানে তারা সবাই স্বাবলম্বী। ঝরে পড়া মেয়েদেরকে শামীমার স্বামী নৈশ বিদ্যালয়ে ভর্তি করে পড়াশোনার সুযোগ করে দিয়েছেন। ফলে তারা সবাই দেশের শিল্পকলা ও সাংস্কৃতিক উন্নয়নেও ভূমিকা রাখছেন। ক. বাঙালির মননের প্রতীক কি? খ. বাঙালির প্রথম সাহিত্যকর্মের ব্যাখ্যা দাও। গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শামীমার শিল্পকর্মটি বাংলাদেশের কোন শিল্পের অন্ত্রর্ভূক্ত? ব্যাখ্যা কর। ঘ. বাংলাদেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতি উন্নয়নে নারীদের অবদান উদ্দীপকের আলোকে মূল্যায়ন কর। উপরোক্ত প্রশ্নগুলোর উত্তর নীচে দেয়া হলো- ক. বাংলা একাডেমিকে বাঙালি জাতির মননের প্রতীক বলা হয়। খ. বাঙালির প্রথম যে সাহিত্যকর্মের সন্ধান পাওয়া যায় তা চর্যাপদ নামে পরিচিত। পন্ডিত হরপ্রসাদ প্রথম নেপালের রাজদরবার থেকে চর্যাপদের পুথিঁ আবিস্কার করেন।তারই সম্পাদনায় ৪৭ টি পদবিশিষ্ট পুথিঁখানি হাজার বছরের পুরাণ বাঙালা বৌদ্ধগান ও দোঁহা নামে বঙীয় সাহিত্য পরিষদ কর্তৃক প্রকাশিত হয়। পন্ডিতগণ র্চ্যাপদের ভাষাকে ‘আলো আঁধারি’ বা ‘সান্ধ্য ভাষা ‘নামে অভিহিত করেছেন। এ চর্যাগীতির বিখ্যাত রচয়িতাদের মধ্যে লুই পা, কাহ্ন পা, ভুসুক পা, কুক্করি পা, ঢেন্টন পা অন্যতম। গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শামীমার শিল্পকর্মটি বাংলাদেশের দৃশ্যশিল্পের অন্তর্ভুক্ত। যেসব শিল্প বা সংস্কৃতির মাধ্যামে বাংলার চিরাচরিত ঐতিহ্য, নকশা, স্থাপত্য প্রভৃতি ফুটিয়ে তোলা হয় এবং বাংলার মানুষের দক্ষতা ও সৃজনশীলতার বিকাশ ঘটে , তাই দৃশ্যশিল্প নামে পরিচিত। বাংলার ঐতিহ্যবাহী দৃশ্যশিল্পগুলো বেশিরভাগই বস্তুগত শিল্প বা সংস্কৃতি হিসিবে পরিচিত। এ শিল্পের মধ্যে রয়েছে মৃৎশিল্প , তাঁতশিল্প , নকশাশিল্প, স্থাপত্যশিল্প , কারুশিল্প , বাঁশ -বেতের কাজ, নকশিকাঁথা শঙ্খের কাজ, মসলিন ইত্যাদি। এর মাধ্যমে মানুষের সৃজনশীল চিন্তা চেতনার বহি প্রকাশ ঘটে। পাশাপাশি এগুলো মানুষের অর্থনৈতিক স্বাবলম্বীতা অর্জনের সুযোগ করে দেয়। যেমনটি উদ্দীপকের শামীমার ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকের শামীমা সালোয়ার, কামিজ ও শাড়িতে সুই, সুতা, পুতি, চুমকি, শামুক ঝিনুক দিয়ে নকশা ফুটিয়ে তোলেন। তার এ শিল্পকার্যের নকশা শিল্পের বৈচিত্রময়তা প্রকাশ পেয়েছে। এ কাজের মাধ্যামে তিনি যেমন স্বাবলম্বী হচ্ছেন তেমনি আমাদের অতীত ঐতিহ্য রক্ষায় ও অবদান রাখছেন। সুতরাং তার কাজটি দৃশ্যশিল্পের অংশবিশেষ। ঘ.আহমান কাল থেকেই বাংলাদেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে নারীরা তাৎপর্যপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। উদ্দীপকে বর্ণিত নারীদের কর্মকান্ড এবং বাংলার নারীদের ইতিহাস পর্যালোচনায় তা প্রমাণিত হয়। উদ্দীপকের শামীমা এবং তার কাছে প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত নারীরা কুটির শিল্পে নিয়োজিত থেকে এ দেশের শিল্পকলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে অবদান রেখে চলেছেন। একইভাবে প্রাচীন কাল থেকেই বাংলা লোক সংস্কৃতিতেও নারীর রয়েছে মূল্যবান উপস্থিতি ও অবদান।যেমন-লোক-উৎসব এবং এ উৎসবকেন্দ্রিক মেলায় বাঙালির যেসব লোকজ উপকরণের বেচাকেনা হয় তার বেশিরভাগই নারীরা তৈরী করেন। নারীদের তৈরীকৃত এসব শিল্পের মধ্যে রয়েছে সূচিশিল্প, বাঁশ ও বেতশিল্প, মাদুর ও পাখাশিল্প, মৃৎশিল্প, নকশিকাঁথা, পাটশিল্প, নকশি পিঠা তৈরি শিল্প ইত্যাদি। এসব শিল্পে অংশগ্রহণের মাধ্যমে নারীরা সংস্কৃতিকে সমৃদ্ধ করার পাশাপাশি পরিবারে অর্থনৈতিক স্বাবলম্বিতা সৃষ্টিতে সাহায্য করছেন। বাংলার নারীরা নানা কর্মসূচীর মধ্যে যে নকশিকাঁথায় বিভিন্ন ফুল, পাতা,পাখি, হাতি, ঘোড়া, নাগরদোলা, একতারা, বাউলের প্রতিকৃতি ফুটিয়ে তোলেন। এসব সূচিকর্ম দৃশ্যশিল্পের অন্যতম উপাদান হিসেবে ভূমিকা রাখে। হস্তশিল্প ও দৃশ্যশিল্প, এর পাশাপাশি সাহিত্য ও সংগীতেও বাংলার নারীরা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে চলেছেন। এ প্রসঙ্গে বিয়ের গান ও খনার বচনের কত্থা উল্লেখ করা যায়। সেই প্রাচীন কাল থেকেই এ অঞ্চলের বিয়েতে গানের প্রচলন ছিল।আর এটা করত অন্তঃপুরের মহিলারাই। আবার ৮০০ খ্রিষ্টাব্দের লীলাবতী বা খনার সময় থেকেই বাঙালি নারীরা সীমিত পরিসরে হলেওসাহিত্য চর্চা করে আসছেন। আধুনিক সময়েও সংস্কৃতির বিভিন্ন অঙ্গনে নারীর সরব পদচারনা লক্ষ্যণীয়। পরিশেষে বলা যায়, নারীদের উল্লেখিত অংশগ্রহণ ও ভূমিকার পরিসর হয়তো ক্ষুদ্র বলে বিবেচিত হতে পারে, কিন্তু ব্যাপক অর্থে শিল্পকলা ও সংস্কৃতির উন্নয়নে এর গুরুত্ব কিছুতেই ছোট হতে পারে না।
×