ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

বিউটি পারভীন

অনন্য উচ্চতায় তামিম ইকবাল

প্রকাশিত: ০৬:৩০, ২৯ মার্চ ২০১৭

অনন্য উচ্চতায় তামিম ইকবাল

বাংলাদেশ দলকে একের পর এক ভাল কিছু উপহার দিয়ে যাচ্ছেন। সমৃদ্ধ করছেন নিজের ক্যারিয়ারকেও। তামিম ইকবাল অনেক আগেই তিন ফরমেটে বাংলাদেশ ক্রিকেট দলের অন্যতম সেরা ব্যাটসম্যান হয়ে গেছেন। আর এখন গড়ছেন রেকর্ড, ইতিহাসের পাতায় ঠাঁই করে নিচ্ছেন। এবার শ্রীলঙ্কা সফরের প্রথম ওয়ানডেতে সেঞ্চুরি হাঁকিয়ে প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে তিনি তিন ফরমেট মিলিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে ১০ হাজার রানেই মাইলফলক পেরিয়েছেন। এই অর্জনকে ক্যারিয়ারে বিশেষ কিছু মনে করছেন তিনি এবং গর্বিতও বোধ করছেন। তার ১২৭ রানের ইনিংসটি ডাম্বুলার রনগিরি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত ইনিংস। এর আগে ১২৪ রানের সেরা ইনিংসটি ছিল পাকিস্তানের শহীদ আফ্রিদির। প্রথম ওয়ানডে শেষে ওয়ানডে ক্রিকেটে তামিমের রান হয়েছে ৫২৪৭। আর এ মাধ্যমে ওয়ানডেতে রান করার দিক থেকে তিনি ছাড়িয়ে গেছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের কিংবদন্তি গর্ডন গ্রীনিজ, পাকিস্তানের মিসবাহ-উল-হক, শ্রীলঙ্কার রোশান মহানামা ও ভারতের গৌতম গাম্ভীরদের। আরও উচ্চতায় উঠেছেন তিনি। কিন্তু ক্যারিয়ারে অনেক সেঞ্চুরির কাছে গিয়েও তা করতে না পারায় কিছুটা হতাশ তামিম। কিন্তু তেমন ভুলের ফাঁদে না জড়িয়ে আরও সেঞ্চুরি হাঁকাতে চান তিনি। ক্যারিয়ারে অনেকবারই সেঞ্চুরির দ্বারপ্রান্তে গিয়ে আর ম্যাজিক ফিগারে পৌঁছতে পারেননি। একেবারেই সাবলীল খেলে আশি উর্ধ ইনিংস খেলেছেন, উইকেটে থিতু হয়েছেন- কিন্তু সামান্য ভুলে সাজঘরে ফিরে গেছেন। ২০০৭ সালে অভিষেকের পর এখন পর্যন্ত ১৬৩ ম্যাচ খেলেছেন তামিম। যেখানে তার সেঞ্চুরি ৮। আর হাফসেঞ্চুরি ৩৪। তামিমের সামনে সুযোগ ছিল বেশ কয়েকটি হাফসেঞ্চুরিকে সেঞ্চুরিতে রূপ দেয়ার। কিন্তু অতীতে ব্যর্থ হয়েছেন, এখন সব সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিন অঙ্কে পৌঁছতে প্রত্যয়ী তামিম। ডাম্বুলায় ম্যাচ জয়ের পর তিনি বলেন, ‘চাওয়ার তো কোন শেষ নেই। আশা করব যে এ রকম যত সুযোগ আসবে, তত বেশি যেন সদ্ব্যবহার করতে পারি। আমার শেষ যে রেকর্ডগুলো ছিল, ওটার দিকে তাকালে দেখবেন, আমি হয়ত ৫-৬টা সেঞ্চুরিতে রূপ দিতে পারতাম। কিন্তু পারিনি। এখন থেকে এটা সবসময় চেষ্টা থাকবে। হয়ত সেটা প্রতিদিন সম্ভব হবে না। তবে বেশিরভাগ দিনে সেটা যেন কাজে লাগাতে পারি।’ ডাম্বুলায় ভুল করেননি, আশির ঘরে গিয়ে নয়- আরও আগেই কিছুটা অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। ৪০ পেরোতেই কেমন যেন উল্টাপাল্টা হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু সে সময় অধিনায়ক মাশরাফি বিন মর্তুজা ও কোচ চান্দ্রিকা হাতুরাসিংহের বার্তা তাকে মানসিকভাবে দৃঢ় করেছে। সে বিষয়েও তামিম বললেন, ‘একটা সময় আমি কিছুটা সংগ্রাম করছিলাম। উইকেট শুরু থেকে খানিকটা মন্থর ছিল। কিছু বল স্কিড করছিল, কিছু বল থামছিল। মনে হচ্ছিল আমি স্ট্রাইক রেট বাড়াতে পারছিলাম না। সময়টা এমন ছিল যে, ওই সময় যদি আমরা একটা উইকেট হারাতাম, তাহলে হয়ত বড় স্কোর করা সম্ভব হতো না। ওই সময় ড্রেসিংরুম থেকে কোচ ও অধিনায়ক বার্তা পাঠান। মাশরাফি ভাই বার বার বাইরে বেরিয়ে এসে আমাকে বুঝাচ্ছিলেন বড় ইনিংস খেলার। সেটা আমি সফলভাবে করতে পেরেছি, আমি খুব খুশি।’ বাঁহাতি ওপেনার তামিম বাংলাদেশের ক্রিকেট ইতিহাসে ইতোমধ্যেই সর্বকালের সেরা ব্যাটসম্যান হিসেবে স্বীকৃত হয়ে গেছেন। অনেক রেকর্ডেই তিনি বাংলাদেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে নাম লিখিয়েছেন। সবমিলিয়ে সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও ফিফটি হাঁকানোর দিক থেকেও বাংলাদেশের সেরা ব্যাটসম্যান বাঁহাতি ওপেনার তামিম। তিন ফরমেটেই বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক রান সংগ্রাহক তিনি। সাম্প্রতিক সময়ে ব্যাট হাতে দুর্দান্ত সময় কাটছিল তার। কিন্তু গত অক্টোবর থেকে অবশ্য বড় কোন ইনিংস পায়নি বাংলাদেশ তার ব্যাট থেকে। গত বছর ১ অক্টোবর আফগানিস্তানের বিপক্ষে ঢাকার মিরপুর শেরেবাংলা জাতীয় স্টেডিয়ামে খেলেছিলেন ১১৮ রানের ইনিংস। এরপর ৬ ইনিংসে মাত্র একটি অর্ধশতক, ইনিংসগুলো ছিল- ১৭, ১৪, ৪৫, ৩৮, ১৬ ও ৫৯। তামিমের নামের সঙ্গে এই ইনিংসগুলো যেন ঠিক মিল ছিল না। দেশের মাটিতে ৫ শতক হাঁকানো তামিম বিদেশের মাটিতে হাঁকাতে পেরেছিলেন মাত্র দুটি সেঞ্চুরি। আর শুধু পাকিস্তানের বিপক্ষেই ছিল দুটি সেঞ্চুরি। আর কোন দেশের বিপক্ষে দুটি শতক হাঁকাতে পারেননি ২৮ বছর বয়সী তামিম। কিন্তু ডাম্বুলায় সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে শনিবার তার দিকে তাকিয়ে ছিল পুরো বাংলাদেশ। তামিমও মুখিয়ে ছিলেন দারুণ কিছু করার জন্য। কারণ ১ রান দূরে ছিলেন একটি রেকর্ড গড়ার ক্ষেত্রে। শুরুতেই সেই রানটি পেয়ে যান এবং প্রথম বাংলাদেশী হিসেবে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তিন ফরমেট মিলিয়ে ১০ হাজার রান পূর্ণ করেন। তার অনেক নিচে থাকা সাকিব ২৭৩ ম্যাচে করেছেন ৯৩৬০ রান। এদিনের সেঞ্চুরি তামিমকে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের ৭৪তম আর দেশের প্রথম ব্যাটসম্যান হিসেবে ১০ হাজার রানের ক্লাবে সদস্য বানিয়েছে। এ বিষয়ে তামিম বলেন, ‘১০ হাজার রান আমার কাছে খুব স্পেশাল। যত রান করতে পারি, সেই চেষ্টাই থাকবে। এই ১০ হাজার রানের জন্য আমি গর্বিত এবং খুশি।’ শুরুতেই ওপেনিং সঙ্গী সৌম্য সরকারকে হারিয়েছিলেন তামিম। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটে ৯০ রানের দারুণ এক জুটি গড়ে দলকে একটি মজবুত ভিত গড়ে দেন। মুশফিকুর রহীম দ্রুত বিদায় নিলে অবশ্য কিছুটা বেকায়দায় পড়ে দল। কিন্তু বন্ধু সাকিবের সঙ্গে চতুর্থ উইকেটে একেবারে জমাট বেঁধে উইকেটে থেকে রানের গতিটা সচল রাখেন। শেষ পর্যন্ত এই জুটিতে ওঠে ১৪৪ রান। বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কার ওয়ানডে সিরিজে এর আগে চতুর্থ উইকেটে ১৩৯ রানের জুটিই ছিল সেরা, সেটি ছিল শ্রীলঙ্কার পক্ষে। এবার নতুন রেকর্ড গড়লেন তামিম-সাকিব। সাকিব বিদায় নেয়ার আগেই সেঞ্চুরি পেয়ে গেছেন তামিম। ক্যারিয়ারের অষ্টম, বিদেশের মাটিতে তৃতীয় এবং শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে দ্বিতীয় সেঞ্চুরি হাঁকালেন তিনি। এর আগে পাকিস্তানের বিপক্ষে দুটি শতক হাঁকাতে পেরেছিলেন, দ্বিতীয় কোন দেশের বিপক্ষে দুটি শতকের মালিক হলেন তামিম। আরেকটি বিস্ময়কর বিষয়ে হচ্ছে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হাঁকানো দুটি শতকই তিনি তাদের মাটিতেই হাঁকালেন। শেষ পর্যন্ত তামিম থেমেছেন ১২৭ রানে গিয়ে। বাংলাদেশ দলকে বড় একটি সংগ্রহে তুলে দিয়ে বিদায় নেন তামিম। এর ফলে ১৬৩ ম্যাচের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে তার রান দাঁড়াল ৫২৪৭। এর মাধ্যমে তিনি পেছনে ফেলেছেন গাম্ভীর (১৪৭ ম্যাচে ৫২৩৮), জিম্বাবুইয়ের এ্যালিস্টার ক্যাম্পবেল (১৮৮ ম্যাচে ৫১৮৫), স্যামুয়েলস (১৮৭ ম্যাচে ৫১৮০), মহানামা (২১৩ ম্যাচে ৫১৬২), গ্রীনিজ (১২৮ ম্যাচে ৫১৩৪), রোহিম (১৫৩ ম্যাচে ৫১৩১) ও মিসবাহ (১৬২ ম্যাচে ৫১২২)। এ ম্যাচটির আগে তামিমের রান ছিল ৫১২০। সবমিলিয়ে তিন ফরমেটে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তার রান এখন ১০ হাজার ১২৬। টেস্টে ৮, ওয়ানডেতে ৮ এবং টি২০ ম্যাচে ১ সেঞ্চুরির মালিক তিনি। সবমিলিয়ে ১৭ সেঞ্চুরি তার ব্যাট থেকে এসেছে বাংলাদেশ দলের জন্য। বিশ্বের অন্যতম সেরাদের কাতারেও পৌঁছে যাচ্ছেন দিনের পর দিন।
×