ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৫ বৈশাখ ১৪৩১

মনিরুল হক চৌধুরী সমর্থন প্রত্যাহার করায় বেকায়দায় সাক্কু

প্রকাশিত: ০৫:৫৫, ২৯ মার্চ ২০১৭

মনিরুল হক চৌধুরী সমর্থন প্রত্যাহার করায়  বেকায়দায় সাক্কু

আরাফাত মুন্না/মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ রাত পোহালেই কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের ভোট। শেষ মুহূর্তে এখন নানা হিসাব-নিকাশ মেলাতে ব্যস্ত ভোটার ও প্রার্থীরা। প্রধান দুই রাজনৈতিক দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপির সমর্থিত দুই মেয়র প্রার্থীই জয়ের বিষয়ে আশাবাদী। তবে স্থানীয়রা বলছেন বিএনপির সাবেক এমপি মনিরুল হক চৌধুরী তার বিশাল কর্মী বাহিনী নিয়ে নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে দাঁড়ানোয় অনেকটাই বেকায়দায় আছে দলটির মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু। অন্যদিকে আওয়ামী লীগের এমপি আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহারের কন্যা আনজুম সুলতানা সীমার পক্ষে মাঠে নামায় মঙ্গলবার পর্যন্তও ভোটের মাঠ অনেকটা নৌকার অনুকূলেই ছিল। পেছন থেকে যদি কেউ কলকাঠি না নাড়ে তবে ৩০ মার্চ সীমাই শেষ হাসি হাসবেন বলে মনে করছেন অনেকে। এছাড়া কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সদর দক্ষিণাঞ্চলের ৯টি ওয়ার্ডে নগর জীবনের সুযোগ-সুবিধা সঠিকভাবে না পৌঁছানোয় সেখানকার বাসিন্দারা পরিবর্তন চান। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে গত পাঁচ বছর কুমিল্লা নগরীর নিয়ন্ত্রণে ছিলেন মনিরুল হক সাক্কু। তিনি এবারও বিএনপির মনোনীত মেয়রপ্রার্থী। ওই নয় ওয়ার্ডের বাসিন্দাদের অনেকে জানান, গত পাঁচ বছর আমরা বঞ্চিত হয়েছি, মেয়র পরিবর্তন হলে দেখি আমাদের ভাগ্য ফেরে কি না? এদিকে স্থানীয়রা জানিয়েছেন, কুমিল্লার রাজনীতিতে আওয়ামী লীগের আফজল খান ও আ ক ম বাহাউদ্দীন বাহার গ্রুপ বিভক্ত ছিল দীর্ঘদিন। সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আগেও সেই বিভেদ দেখা গিয়েছে। তবে দলীয় সভানেত্রী প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ ও কেন্দ্রীয় নেতাদের চেষ্টায় সে দূরত্ব অনেকটা নিরসন হয়েছে। ফলে আওয়ামী লীগ প্রার্থীর অবস্থান আগে যে কোন সময়ের চেয়ে ভাল বলে মনে করছেন দলের নেতাকর্মীরা। কুমিল্লা আওয়ামী লীগের একাধিক নেতা জনকণ্ঠকে বলেন, দলের সকল পর্যায়ের নেতাকর্মী এখন ঐক্যবদ্ধ। ব্যক্তি স্বার্থের চেয়ে তারা ‘নৌকা’ নিয়েই এখন ভাবছেন। সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত নেতারা ছুটেছেন ভোটারদের বাড়ি বাড়ি। গত শনিবার থেকে সদর আসনের এমপি আ ক ম বাহারউদ্দীন বাহারের মেয়ে তাহসিন বাহার সূচনা আওয়ামী লীগ প্রার্থী সীমার সঙ্গে নৌকার প্রচারণায় মাঠে নেমে প্রচার-প্রচারণা চালিয়েছেন। তবে দলের সাধারণ নেতাকর্মীরা এমন অবস্থা ভোটের দিনসহ পরবর্তী সময়ে অব্যাহত থাকবে আশা করছেন। এ বিষয়ে আওয়ামী লীগের মেয়রপ্রার্থী আনজুম সুলতানা সীমা জনকণ্ঠকে বলেন, সকল ভেদাভেদ ভুলে নৌকার প্রশ্নে কুমিল্লার মানুষ এখন ঐক্যবদ্ধ। ইনশাআল্লাহ জয় আমাদের আসবেই। অন্যদিকে, বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও বিএনপির সাবেক সংসদ সদস্য মনিরুল হক চৌধুরী গত শনিবার তার দলের মেয়রপ্রার্থী সাক্কুর নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা থেকে নিজেকে প্রত্যাহার করে নেয়ার পর দলটির বিরোধ সামনে আসে। মনিরুল হক চৌধুরী নগর ছাড়ার আগে নিজের নেতাকর্মীদেরও সাক্কুর পক্ষে মাঠে নামা থেকে বিরত থাকতে বলে গেছেন বলে জানা গেছে। ফলে এ মনিরুল হক চৌধুরী চলে যাওয়ার ঘটনাটি বিএনপির মেয়রপ্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জন্য অস্বস্তির বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। গত শনিবার নগরীর নোয়াগ্রামের বাসায় মনিরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের বলেন, বিএনপির প্রার্থী মেয়র মনিরুল হক সাক্কু আজ পর্যন্ত নির্বাচনের বিষয়ে আমার সঙ্গে কোন কথা বলেননি। আমি সাক্কুর প্রচারণায় মাঠে নামলে তার ভোট কমবে বলেও তার কিছু নেতা মাঠে অপপ্রচার চালিয়েছেন। তাই আমি সাক্কুর নির্বাচনের বিজয়ের স্বার্থে প্রচার ও গণসংযোগ থেকে সরে দাঁড়ালাম। এর আগে শুক্রবারও সাক্কু তার নির্বাচনী ইশতেহার ঘোষণার সময় দলের কেন্দ্রীয় নেতাদের সঙ্গে মনিরুল হক চৌধুরীও উপস্থিত ছিলেন। কিন্তু হঠাৎ করে শনিবার বিএনপির এই কেন্দ্রীয় নেতার প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় সাক্কুর ভোটের মাঠে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে বলে সচেতন মহলের অভিমত। তবে সাক্কু বিষয়টি ঠিক এমন ভাবে দেখছেন না। তিনি বলেন, এখানে ব্যক্তির চেয়ে প্রত্যকই বড়। আমি গত পাঁচ বছর মানুষের সেবায় নিয়োজিত ছিলাম। সামনে আমার কিছু কাজ বাকি রয়েছে এবং কিছু চলমান আছে। ভোটাররা উন্নয়নের ধারা অব্যাহত রাখতে ধানের শীষ প্রতীকে ভোট দেবেন বলে আমি আশা করছি। সদর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডের মানুষ পরিবর্তন চায় ॥ এলাকায় গত পাঁচ বছরে উন্নয়ন কম হওয়ায় এবার মেয়র পদে সাক্কু নয়, নতুন কাউকে দেখতে চায় কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের সদর দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডের মানুষ। এ বিষয়ে এখানকার বিএনপির এক নেতা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, নতুন করে সদর দক্ষিণ উপজেলা গঠনের পর এ এলাকায় যে সকল রাস্তাঘাট তৈরি করা হয়েছিল, নতুন সিটি কর্পোরেশন গত পাঁচ বছরে এ এলাকায় কোন নতুন রাস্তা নির্মাণ করেনি। বরং সংস্কারের অভাবে পুরোনো রাস্তাগুলোও নষ্ট হয়ে গেছে। গত পাঁচ বছর বিএনপি নেতা মনিরুল হক সাক্কুই মেয়র ছিলেনÑ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের। এবার নতুন কেউ মেয়র নির্বাচিত হলে এই এলাকায় উন্নয়নের ছোঁয়া লাগবে বলেই আশা এ বিএনপি নেতার। এদিকে সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন ওই উপজেলার দৈয়ারা গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার জসিম উদ্দিন জনকণ্ঠকে জানান, আমাদের দাবির প্রেক্ষিতে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মোস্তফা কামাল সিটি কর্পোরেশনের সদর দক্ষিণ এলাকার উন্নয়নের জন্য প্রায় ৮৪ কোটি টাকা বরাদ্দ এনে দিয়েছেন। এ টাকা দিয়ে উত্তর রামপুর, শ্রীমন্তপুর, শাকতলা, দৈয়ারা এলাকায় ড্রেনের কাজ করা হয়। এছাড়া দক্ষিণের ৯ ওয়ার্ডে তেমন উল্লেখযোগ্য কোন উন্নয়ন কাজ গত পাঁচ বছরে হয়নি। তিনি বলেন, আমরা গত পাঁচ বছরের সাক্কুর কার্যক্রম দেখেছি এখন আমরা পরিবর্তন চাই। নতুন মেয়র আমাদের বঞ্চিত এলাকার উন্নয়ন কাজে মনোনিবেশ করবেন বলে আমরা আশাবাদী। একই গ্রামের আবদুল মমিনও সুর মিলিয়েছেন ইঞ্জিনিয়ার জসিমের সঙ্গে। তিনি বলেন, গত পাঁচ বছর যে মেয়র ছিলেন তিনি আমাদের এলাকায় তেমন কোন উন্নয়ন কাজ করেননি। সিটি কর্পোরেশন হলেও মূলত আমরা গ্রামেই আছি। তাই পরিবর্তন চাই। উল্লেখ্য, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন বাংলাদেশের একটি সিটি কর্পোরেশন প্রশাসন ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান। প্রশাসন কুমিল্লা জেলার কেন্দ্রে অবস্থিত কুমিল্লা মহানগরীর উন্নয়ন ও রক্ষণাবেক্ষণ কর্মকা- পরিচালনা করে থাকে। এই সিটি কর্পোরেশনের কার্যক্রম প্রায় ৫৩ দশমিক ০৪ বর্গ কিলোমিটার আয়তনের ২৭টি ওয়ার্ডজুড়ে। কুমিল্লা মেগাসিটির মধ্যে বিস্তৃত, যার আওতায় পাঁচ লক্ষাধিক মানুষ বসবাস করে। এ প্রতিষ্ঠানটিতে আগে কুমিল্লা পৌরসভা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ পৌরসভা নামে দুটি পৌরসভা ছিল। ২০১১ সালের ১০ জুলাই তারিখে বাংলাদেশের স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয় এক অধ্যাদেশ জারি করে পৌরসভা দুটিকে একটি সিটি কর্পোরেশনের মর্যাদা দেয়। পরে ২০১২ সালের ৫ জানুয়ারি কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশনের প্রথম নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়। ওই নির্বাচনে মনিরুল হক সাক্কু নির্বাচনে অংশ নেয়ায় তাকে বিএনপি থেকে বহিষ্কার করা হয়। পরে তিনি নির্বাচনে জয়লাভ করলে তাকে আবার দলে নেয়া হয়।
×