ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ম্যাকডোনাল্ড

ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হবে

প্রকাশিত: ০৫:৫২, ২৯ মার্চ ২০১৭

ইইউ থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে সম্পর্ক গভীর হবে

কূটনৈতিক রিপোর্টার ॥ সন্ত্রাস ও জঙ্গীবাদ প্রতিরোধে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্য অগ্রাধিকার দিচ্ছে। এ লক্ষ্যে দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করবে। এছাড়া ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে ব্রিটেন বেরিয়ে গেলেও বাংলাদেশের সঙ্গে দেশটির সম্পর্ক আরও গভীর হবে। এদিকে বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যে সম্পর্ক আরও গভীর করতে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে। এ লক্ষ্যে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী তেরেসা মে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে একটি চিঠি দিয়েছেন। মঙ্গলবার ঢাকায় সফররত ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড এসব তথ্য জানিয়েছেন। মঙ্গলবার রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক ও আন্ডার সেক্রেটারি স্যার ম্যাকডোনাল্ড প্রতিবছর কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠানের বিষয়ে একটি সমঝোতা স্মারক সই করেন। এ সময় সাইমন ম্যাকডোনাল্ড সাংবাদিকদের বলেন, আমি আজ সকালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রীর পাঠানো একটি চিঠি বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর কাছে হস্তান্তর করেছি। এই প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্য কৌশলগত সংলাপ করতে যাচ্ছে। এটা কোন ব্রিটিশ আন্ডার সেক্রেটারির প্রথম সফর। এ জন্য আমি সত্যিই আনন্দিত। বেক্সিটের প্রভাব বাংলাদেশের পড়বে কিনা- এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, আগামীকাল (২৯ মার্চ) আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়ন কর্তৃপক্ষকে আনুষ্ঠানিকভাবে ইইউ ত্যাগের বিষয়টি জানাব। এর পরবর্তী দুই বছরের মধ্যে আমরা ইইউ ত্যাগ করব। এটা কোন আকস্মিক ঘটনা নয়। আজ আমি ঢাকায় এসেছি। আমরা জানি আপনারা শুল্কমুক্ত ও কোটামুক্ত বাজার সুবিধা চান। আজ এ বিষয় নিয়ে আমরা আলোচনা করব। তবে ব্রেক্সিট হলেও আমি নিশ্চিত করতে চাই আগের থেকে আরও দুই দেশের মধ্যে গভীর ও ভাল সম্পর্ক হবে। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন মেঘনায় বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে প্রথমবারের মতো কৌশলগত সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। এতে বাংলাদেশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্বে দেন পররাষ্ট্র সচিব এম শহীদুল হক। আর ব্রিটিশ প্রতিনিধি দলের নেতৃত্ব দেন দেশটির পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি স্যার সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। এতে নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা এজেন্ডার অধীনে সন্ত্রাসবাদ ও উগ্রবাদ, বিমানবন্দর নিরাপত্তা, সামরিক সরঞ্জাম ক্রয় ও প্রশিক্ষণ এবং মানবপাচার বিষয়ে আলোচনা হয়। সূত্র জানায়, কৌশলগত সংলাপে দ্বিপক্ষীয় বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়। রাজনীতি ও দ্বিপক্ষীয় ইস্যু, অর্থনীতি ও উন্নয়ন, নিরাপত্তা ও প্রতিরক্ষা এবং বৈশ্বিক ইস্যু প্রাধান্য পায়। এছাড়া যুক্তরাজ্যের জটিল ভিসা প্রক্রিয়া নিয়েও আলোচনা হয়। ভিসা আবেদন প্রক্রিয়া দিল্লী থেকে নিয়ন্ত্রণের ফলে বাংলাদেশীদের ভিসা কঠিন হয়ে পড়েছে বলেও যুক্তরাজ্যকে জানানো হয়েছে। উল্লেখ্য, যুক্তরাজ্যে যেতে ইচ্ছুক বাংলাদেশীরা ভিসার আবেদন বাংলাদেশে করলেও এর মূল্যায়ন করা হয় ভারতে। যে কারণে বাড়ছে জটিলতা এবং অভিযোগ। ভারতে ভিসা মূল্যায়ন হওয়ার পর থেকে অনেক যোগ্য ব্যক্তি ভিসা পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ রয়েছে। তাই বিষয়টি সংলাপে তোলা হয়। এছাড়া ২০৩০ উন্নয়ন এজেন্ডা নিয়েও আলোচনা হয়েছে। কৌশলগত সংলাপে বিমানবন্দরের নিরাপত্তার বিষয়ে জোর দেয় যুক্তরাজ্য। কেননা নিরাপত্তার কারণ দেখিয়ে গত বছরের মার্চে হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে সরাসরি কার্গো ফ্লাইট পরিচালনার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে যুক্তরাজ্য। এরপর যুক্তরাজ্যের পরামর্শে শাহজালাল বিমানবন্দরের নিরাপত্তার দায়িত্ব পায় ব্রিটিশ প্রতিষ্ঠান রেড লাইন। প্রতিষ্ঠানটি সিভিল এভিয়েশনের নিরাপত্তা কর্মীদের প্রশিক্ষণের পাশাপাশি যাত্রীদের ব্যাগ তল্লাশিসহ বিভিন্ন আধুনিক যন্ত্র সংযোজনের পরামর্শ দিচ্ছে। বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের ৪৫ বছরের কূটনৈতিক সম্পর্ক রয়েছে। এর মধ্যে প্রথমবারের মতো এই কৌশলগত সংলাপের আয়োজন করা হয়। সংলাপে আগামী বছর কমনওয়েলথ সম্মেলন নিয়েও আলোচনা হয়। বাংলাদেশ কমনওয়েলথের ওই সম্মেলনে অংশ নিতে আগ্রহী বলেও জানানো হয়। এদিকে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে পাঠানো এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, মঙ্গলবার পররাষ্ট্রমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলীর সঙ্গে সাক্ষাত করেছেন ব্রিটিশ পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের আন্ডার সেক্রেটারি সাইমন ম্যাকডোনাল্ড। তারা দুই দেশের মধ্যে কৌশলগত সংলাপের সাফল্য কামনা করেন। সংলাপে দুই দেশের দ্বিপক্ষীয় ইস্যু সফলভাবে আলোচনা হবেও বলেও প্রত্যাশা করেন।
×