ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

তাসকিনের হ্যাটট্রিক

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত

প্রকাশিত: ০৫:৫১, ২৯ মার্চ ২০১৭

বাংলাদেশ-শ্রীলঙ্কা দ্বিতীয় ওয়ানডে বৃষ্টিতে পরিত্যক্ত

স্পোর্টস রিপোর্টার ॥ দ্বিতীয় ওয়ানডেতে শ্রীলঙ্কার প্রাপ্তি কুশল মেন্ডিসের সেঞ্চুরি। আর বাংলাদেশের প্রাপ্তি তাসকিন আহমেদের হ্যাটট্রিক। ব্যক্তিগত প্রাপ্তির বাইরে দুদলের কোন প্রাপ্তি নেই। কারণ বৃষ্টির জন্য দ্বিতীয় ওয়ানডে পরিত্যক্ত হয়েছে। আর তাতে কোন দলই হারেনি। কোন দলই জেতেনি। তবে এক হিসেবে বাংলাদেশের অনেক প্রাপ্তি হয়ে গেল। এখন সিরিজের তৃতীয় ওয়ানডেতে ফল যাই হোক, সিরিজে বাংলাদেশ যে হারছে না, তা নিশ্চিত হয়ে গেল। তৃতীয় ওয়ানডে জিতলে সিরিজ জিতবে বাংলাদেশ। আর হারলে সিরিজ ১-১ ড্র হবে। প্রথম ওয়ানডেতে যে জিতে আছে বাংলাদেশ। টস জিতে আগে ব্যাট করে শ্রীলঙ্কা। কুশল মেন্ডিসের ১০২ রানে ৪৯.৫ ওভারে ৩১১ রান করে অলআউট হয় শ্রীলঙ্কা। উপুল থারাঙ্গা ৬৫ রান করেন। পেসার তাসকিন আহমেদ হ্যাটট্রিকসহ ৪ উইকেট শিকার করেন। জবাব দিতে আর নামতেই পারল না বাংলাদেশ। শ্রীলঙ্কার ইনিংস শেষ হতেই যে বৃষ্টি শুরু হলো। তা আর থামল না। শেষ পর্যন্ত আম্পায়াররা ম্যাচটি পরিত্যক্ত করতে বাধ্য হলো। শুরুতেই ১৮ রানে দানুস্কা গুনাথিলাকাকে আউট করে দেন মাশরাফি বিন মর্তুজা। মনে হচ্ছিল, দিনটি বাংলাদেশেরই হতে চলেছে। কিন্তু দ্বিতীয় উইকেটেই ঘুরে দাঁড়ায় শ্রীলঙ্কা। ওপেনার থারাঙ্গা ও মেন্ডিস মিলেই শুরুর ধাক্কা সামলে নেন। দুজন মিলে ১১১ রানের জুটি গড়েন। এই জুটিতেই শ্রীলঙ্কা ১৩০ রানের কাছাকাছি চলে যায়। ১২৯ রানে গিয়ে থারাঙ্গা রানআউট হন। তখন গিয়ে আরেকটি উইকেটের পতন ঘটে। এরপর তৃতীয় উইকেটে গিয়েও দেখা যায় বড় জুটি হয়ে যায়। এবার মেন্ডিস ও চান্দিমাল গড়েন জুটি। এ জুটি দলকে ২১২ রান পর্যন্ত এগিয়ে নিয়ে যায়। এর মধ্যে কুশল ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরিও করে ফেলেন। ১০২ বলে ১০০ রান করেন। চান্দিমালকে এলবিডব্লিউ করেন মুস্তাফিজ। তখন শ্রীলঙ্কা ইনিংসে ৩৬.৪ ওভার শেষ হয়। মনে হয়, এবার বুঝি চাপে পড়বে শ্রীলঙ্কা। কিন্তু উল্টো হয়ে গেল যেন। দ্বিতীয় ও তৃতীয় উইকেট জুটি যখন খেলে তখন যে ৩০০ রান হবে তা মনে হয়েছিল; তাই হয়েছে। কুশলও (১০৭ বলে ৯ চার ও ১ ছক্কায় ১০২ রান) আর বেশিক্ষণ টিকে থাকতে পারেননি। তবে শেষ মুহূর্তে গিয়ে আসেলা গুনারতেœ (৩৯) ও মিলিন্দা সিরিবারদানা (৩০) পঞ্চম উইকেটে ৫৫ রানের জুটি গড়েন। তাতেই দলের স্কোর তিন শ’ রানের কাছাকাছি পৌঁছে যায়। শেষ মুহূর্তে তাসকিন গতির ঝড় তোলেন। হ্যাটট্রিক করেন। নিজের প্রথম, বাংলাদেশের পঞ্চম আর ওয়ানডে ক্রিকেটের ৪১তম হ্যাটট্রিকটি করেন তাসকিন। টানা তিন বলে তিন উইকেট তুলে নিয়ে শ্রীলঙ্কাকে অলআউটও করে দেন। কিন্তু ততক্ষণে শ্রীলঙ্কা ৩১১ রানের বড় স্কোরই দাঁড় করিয়ে ফেলে। এ স্কোর গড়ার পর আর খেলা না হওয়াতে ম্যাচ পরিত্যক্ত হলো। তাতে বাংলাদেশ সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়েই থাকল। তাসকিনের হ্যাটট্রিক ॥ শুরুতে থাকলেন নির্লিপ্ত। ৮ ওভার বল করে ৪২ রান দিয়ে ১ উইকেট তুলে নেন। শ্রীলঙ্কা ইনিংসের শেষ ওভারটি যখন করতে আসেন, তখনও তার করা দ্বিতীয় বলে বাউন্ডারি হয়। কিন্তু এরপর টানা তিনটি বলেই দেখান চমক। এমনই ঝলক দেখান, টানা তিন বলে তিন উইকেট শিকার করে হ্যাটট্রিকই করে ফেলেন। ইতিহাসের পাতায় নিজের নাম লিখিয়ে ফেলেন। টানা তিন বলে আসেলা গুনারতেœ, সুরঙ্গ লাকমাল ও নুয়ান প্রদীপকে আউট করে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন। ইনিংস শেষ হওয়ার এক বল বাকি থাকতে অলআউটও হয় শ্রীলঙ্কা। শেষ পর্যন্ত ৮.৫ ওভার বল করে ৪৭ রান দিয়ে ৪ উইকেট নেন তাসকিন। এর আগে ৪০ বার হ্যাটট্রিক হয়েছে। তাসকিন হ্যাটট্রিক যখন করলেন, তখন ৪১তম বার হ্যাটট্রিক করা হয়ে গেল। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে পঞ্চম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন তাসকিন। সবার আগে পেসার শাহাদাত হোসেন রাজিব করেন হ্যাটট্রিক। ২০০৬ সালের ২ আগস্ট জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রথম বোলার হিসেবে হ্যাটট্রিক করেন শাহাদাত হোসেন। জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষেই ২০১০ সালের ৩ ডিসেম্বর বাংলাদেশের দ্বিতীয় হ্যাটট্রিকটি করেন স্পিনার আব্দুর রাজ্জাক। এরপর নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে ২০১৩ সালের ২৯ অক্টোবর পরপর তিন বলে উইকেট নেয়ার কৃতিত্ব দেখান পেসার রুবেল হোসেন। তাসকিনের আগে ২০১৪ সালের ১ ডিসেম্বর জিম্বাবুইয়ের বিপক্ষে হ্যাটট্রিক করেন স্পিনার তাইজুল ইসলাম। তিনি অভিষেকেই হ্যাটট্রিক করে বিশ্বরেকর্ড গড়েন। মঙ্গলবার শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে তাসকিন হ্যাটট্রিক করেন। তাসকিন বিশ্বের ৪১তম ওয়ানডে হ্যাটট্রিকটি করেন। বিশ্বের ৪০তম ওয়ানডে হ্যাটট্রিকটিও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষেই ছিল। সেটি করেন অস্ট্রেলিয়ার পেসার জেমস ফকনার। গত বছর করেন তিনি। আন্তর্জাতিক ওয়ানডেতে সর্বপ্রথম হ্যাটট্রিক করেন পাকিস্তানের জালাল-উদ-দিন। ১৯৮২ সালে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে রেকর্ডটি গড়েন তিনি। এছাড়া সবচেয়ে কম বয়সী হিসেবে আরেক পাকিস্তানী আকিব জাভেদ হ্যাটট্রিক করেছিলেন। ১৯৯১ সালে ভারতের বিপক্ষে ১৯ বছর ৮১ দিনে কীর্তিটি গড়েন আকিব। তবে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ তিনবার হ্যাটট্রিক করার নজির গড়েছেন শ্রীলঙ্কার ফার্স্ট বোলার লাসিথ মালিঙ্গা। এছাড়া ২০০৭ সালে দক্ষিণ আফ্রিকার বিপক্ষে টানা চার বলে চারটি উইকেট নিয়েছিলেন তিনি। তাসকিন আহমেদ মঙ্গলবার টানা তিন বলে তিন উইকেট নেয়ার নজির গড়লেন। দিনের শুরুটা খারাপ গেলেও শেষ বেলায় নায়ক হয়ে উঠলেন যেন তাসকিনই। হ্যাটট্রিক করার মতো কঠিন কাজটি যে করেছেন। তাতেই ইতিহাসের পাতাতেও ঢুকে গেছেন। বাংলাদেশ বোলারদের মধ্যে এ মুহূর্তে সবচেয়ে গতিময় বোলার হচ্ছেন তাসকিন। তার গতির সামনে এবার শ্রীলঙ্কা শেষ মুহূর্তে ধসে পড়ল। আগেই জানিয়েছিলেন, এমন কিছু করতে চান; যা দলের জন্য উপকার হয়। জানিয়েছিলেন, ‘প্রতিযোগিতা থাকবেই। প্রতিযোগিতা যত বেশি থাকবে, বাংলাদেশের পেস বিভাগ তত শক্তিশালী হবে। কে খেলবে, কে খেলবে না, সেটা নিয়ে ভাবছি না। আমরা চেষ্টা করছি নিজেদের সেরাটা দিতে। সুযোগ পেলে আমরা আমাদের সেরাটা ঢেলে দেব।’ সঙ্গে যোগ করেছিলেন, ‘সত্যি কথা বলতে আমি খুব ভাগ্যবান। ইনজুরি জিনিসটা এমন, সিঁড়িতে হাঁটার সময়ও পা মচকে যেতে পারে। হ্যাঁ, আমি অনেক হার্ডওয়ার্ক করছি। তবে মূল ব্যাপার আল্লাহর রহমত। আল্লাহ পাকের অশেষ রহমতে সুস্থ আছি। এটাই মূল ব্যাপার। এখন আমি ইনজুরি নিয়ে কমই চিন্তা করি। মানসিকভাবে শক্ত থাকাটা জরুরী। এই ক্ষেত্রে মাশরাফি ভাই আমার পথ প্রদর্শক। তিনি বলছেন, এটা নিয়ে বেশি ভাবতে না করছেন। আমার সবকিছুতে মাশরাফি ভাই-ই আমার মেন্টর। আমার লাইফ স্টাইল, সবকিছুতে। আমি সেরাটাই দিতে চাই।’ তাসকিন সেই সেরাটা দিলেনও। হ্যাটট্রিক করলেন।
×