ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া নারীর জন্য অপমানের ॥ আইভী

প্রকাশিত: ০৪:৩১, ২৯ মার্চ ২০১৭

সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া নারীর জন্য অপমানের ॥ আইভী

স্টাফ রিপোর্টার ॥ জাতীয় সংসদে নারীদের জন্য সংরক্ষিত আসনের বিধান বাতিলের দাবি জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জ সিটি কর্পোরেশনের মেয়র ডাঃ সেলিনা হায়াত আইভী। তিনি বলেছেন, নারীরা এখন আর পিছিয়ে নাই। জাতীয় ও স্থানীয় সরকারসহ বিভিন্ন নির্বাচনে নারীরা এখন সরাসরি প্রতিদ্বন্দ্বিতার মাধ্যমে বিজয়ী হচ্ছেন। যে নারীরা সত্যিকারের রাজনীতি করেন, সংরক্ষিত আসনে এমপি হওয়া তাদের জন্য অপমানের। বর্তমান সংরক্ষিত আসনের এমপিদের ‘সাজানো শো কেস’ মন্তব্য করে অনেকে টিকা-টিপ্পনী কাটেন। তবে অনেক নারীও সংরক্ষিত আসনের এমপি হয়েই খুশি থাকতে চান। এ দৃষ্টিভঙ্গি পালটানোর সময় এসেছে। মঙ্গলবার রাজধানীর আগারগাঁওয়ের পল্লী কর্ম সহায়ক ফাউন্ডেশন (পিকেএসএফ) ভবনের মিলনায়তনে আয়োজিত এক সেমিনারে সম্মানিত অতিথির বক্তব্যে আইভী এসব কথা বলেন। আন্তর্জাতিক নারী দিবস উপলক্ষে পিকেএসএফ ‘টেকসই উন্নয়নে নারীর ক্ষমতায়ন, সমতা ও বৈষম্যহীনতা’ শীর্ষক এ সেমিনারের আয়োজন করে। পিকেএসএফের চেয়ারম্যান ও বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদের সভাপতিত্বে সেমিনারে স্বাগত বক্তব্য রাখেন পিকেএসএফের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মোঃ আবদুল করিম। বক্তব্য রাখেন কর্মজীবী নারী সংগঠনের সভাপতি ড. প্রতিমা পাল মজুমদার। মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন স্বাবলম্বী উন্নয়ন সমিতির নির্বাহী পরিচালক বেগম রোকেয়া। সেমিনারে পিকেএসএফের ১৩৬ সহযোগী সংস্থার ২৬৯ প্রতিনিধি উপস্থিতি ছিলেন। সেমিনার আইভী বলেন, দেশের অর্ধেক জনগোষ্ঠী নারী। তাদের প্রকৃত ক্ষমতায়ন ছাড়া টেকসই উন্নয়ন সম্ভব নয়। আর নারীর ক্ষমতায়নের মূলে রয়েছে শিক্ষা। সৎ সাহস ও আত্ম প্রত্যয়ের সঙ্গে শিক্ষা যোগ হলে পৃথিবীর কোন শক্তি নাই নারীকে আটকে রাখতে পারে। এক্ষেত্রে পরিবারের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ উল্লেখ করে আইভী বলেন, মেয়ে সন্তানের প্রতি বাবা এবং মায়ের দৃষ্টিভঙ্গি পালটাতে হবে। নিজের জীবনের উদাহরণ দিয়ে তিনি বলেন, আমার বাবা আমাকে মানুষ হিসেবে বড় করেছেন, নারী মনে করে নয়। আশির দশকে সোভিয়েত ইউনিয়নে বৃত্তি নিয়ে পড়াশোনার সুযোগ আসে। আমার পরিবারের অনেক সদস্যই আমার পড়তে যাওয়ার বিষয়ে আপত্তি জানিয়েছিলেন। সেই সময় আমার মা আমার পাশে দাঁড়িয়ে সাহস দিয়েছেন। ২০০৩ সালে নারায়ণগঞ্জ পৌরসভা নির্বাচনে প্রার্থিতার বিষয়ে তার ছোট ভাইয়ের বড় ভূমিকা ছিল বলেও জানান তিনি। এ সময় তিনি সংসদে পাস হওয়া বাল্যবিবাহ নিরোধ আইনের বিশেষ বিধান পুনর্বিবেচনা করে তা বাতিল করার দাবিও জানান। সেমিনারের মূল প্রবন্ধে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে নারীদের বর্তমান অবস্থান, সাফল্য, সম্ভাবনা ও চ্যালেঞ্জ নিয়ে আলোকপাত করা হয় এবং এসডিজি অর্জনে নারীর ক্ষমতায়নের গুরুত্ব তুলে ধরা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতির বক্তব্যে ড. কাজী খলীকুজ্জমান আহমদ বলেন, রাজনৈতিক অঙ্গীকার ও বাস্তবায়ন সব সময় একই গতিতে হয় না। নারীর অধিকার প্রতিষ্ঠায় দেশে অনেক আইন আছে, নীতি ও কর্মসূচী আছে; কিন্তু বাস্তব অগ্রগতি সেই তুলনায় কম। তিনি বলেন, মধ্য আয়ের দেশ হলেই দরিদ্র, বঞ্চনা ও বৈষম্য বিলোপ হয়ে যাবে না। এজন্য নারী-পুরুষের সমতাভিত্তিক উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে। নারীর অর্থনৈতিক ক্ষমতায়নের পাশাপাশি তার সামাজিক মর্যাদাও প্রতিষ্ঠা করতে হবে।
×