ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৯ মার্চ ২০২৪, ১৫ চৈত্র ১৪৩০

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমার কোন লক্ষণই নেই

প্রকাশিত: ০৪:৩০, ২৯ মার্চ ২০১৭

ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমার কোন লক্ষণই নেই

ফিরোজ মান্না ॥ ইন্টারনেট ব্যান্ডউইথের দাম কমছে না। ডাক ও টেলিযোগাযোগ মন্ত্রণালয় ইন্টারনেটের দাম কমানোর জন্য বিদেশী পরামর্শক নিয়োগ করার কয়েক দিনের মাথায় ইন্টারনেট সার্ভিস প্রোভাইডার প্রতিষ্ঠানগুলোর (আইএসপি) লাইসেন্সের ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে বিটিআরসি। লাইসেন্স ফি বাড়ালে কম দামে ইন্টারনেট সুবিধা পাবে না ব্যবহারকারীরা। এছাড়া লাইসেন্স ফি বাড়ালে প্রতিযোগিতার বাজারে ছোট আইএসপিগুলোও হারিয়ে যাবে। বড় আইএসপিগুলো আরও বড় হবে বলে মনে করছেন মন্ত্রণালয়। কেন কি কারণে লাইসেন্স ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করা হয়েছে তা নিয়ে মন্ত্রণালয় বিটিআরসির কাছে জানতে চাইবে। অন্যদিকে বিটিআরসি বলছে, তারা লাইসেন্স ফি বাড়ানোর প্রস্তাব করেছে- আইএসপিগুলোর দেয়া প্রস্তাবের ভিত্তিতে। মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, দেশের সব মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে দেয়ার জন্য ইন্টারনেটের দাম কমানোর উদ্যোগ নেয়া হয়েছে। মোবাইল অপারেটর, আইএসপিসহ সংশ্লিষ্টদের নিয়ে ইতোমধ্যে কয়েক দফা বৈঠকও করেছে মন্ত্রণালয়। ইন্টারনেটের দাম কিভাবে কমানো যায় তার জন্য বিদেশী একটি প্রতিষ্ঠানকে সার্ভে করার দায়িত্ব দেয়া হয়েছে। বিদেশী ওই প্রতিষ্ঠান কাজ শুরু করার আগেই টেলিযোগাযোগ নিয়ন্ত্রণ কমিশন (বিটিআরসি) আইএসপি লাইসেন্স বাড়িয়ে দেয়ার প্রস্তাব করেছে। এমন প্রস্তাবের পর ছোট আইএসপিগুলো প্রতিবাদে মানববন্ধনসহ নানা কর্মসূচী পালন করেছে। এরপরও বিটিআরসি লাইসেন্স বাড়ানোর প্রস্তাব প্রত্যাহার করেনি। যে লাইসেন্স ফি ছিল এক লাখ টাকা, বিটিআরসি সেই ফি বাড়িয়ে প্রস্তাব করেছে ১০ লাখ টাকা। লাইসেন্স ফি বাড়লে অবশ্যই ব্যান্ডউইথ বিক্রি করে গ্রাহকের কাছ থেকেই তা আদায় করা হবে। ফলে ইন্টারনেটের দাম তো কমবেই না, বরং বাড়বে। ইন্টারনেট সেবা দেয়ার নানা ক্যাটাগরির লাইসেন্স রয়েছে। আইএসপির লাইসেন্সিং ফি হচ্ছে, নেশনওয়াইড আইএসপির বার্ষিক লাইসেন্স ফি এক লাখ টাকা, সেন্ট্রাল জোন ৫০ হাজার ও জোনালের ১০ হাজার টাকা। ছোট আইএসপিগুলো হচ্ছে ‘এ’ ক্যাটাগরির ফি ৫ হাজার টাকা, ‘বি’ ক্যাটাগরির ২ হাজার ৫শ’ এবং ‘সি’ ক্যাটাগরির লাইসেন্সের জন্য বার্ষিক লাইসেন্স ফি দিতে হয় ৫শ’ টাকা। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের এক কর্মকর্তা বলেন, এ ধরনের প্রস্তাব যৌক্তিক হয়নি। এতে করে বড় কোম্পানিগুলো আরও বড় হবে। ছোট আইএসপিগুলো প্রতিযোগিতায় টিকতে না পারবে না। তাদের ব্যবসা গুটিয়ে নিতে হবে। ইন্টারনেট সেবায় বৈষম্য তৈরি করে বড় আইএসপিগুলো এককভাবে ব্যবসা করে যাবে। ছোট ছোট আইএসপিগুলোর পাড়া মহল্লায় ইন্টারনেট সেবা দিয়ে যাচ্ছে। বড় আইএসপিগুলো পাড়া মহল্লায় ইন্টারনেট সার্ভিস দিতে আগ্রহী হবে না। তারা বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সেবা দিলেই হয়ে যাবে। তখন সাধারণ গ্রাহকরা ইন্টারনেট সেবা পেতে বড় আইএসপিদের কাছে ধর্না দিতে হবে। কিন্তু মন্ত্রণালয় চায়, দেশের সব মানুষ ইন্টারনেট সুবিধার আওতায় আসুক। সরকারের ভিশন ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার। ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়তে হলে ইন্টারনেট সুবিধা হাতের নাগালে থাকতে হবে। হঠাৎ করে বিটিআরসির এমন প্রস্তাব বড় বড় আইএসপিদের পক্ষেই যাবে। ছোট আইএসপিগুলো এতে বড় ধরনের ক্ষতির মুখে পড়বে। এই প্রস্তাব ভাল করে যাচাই বাছাই করা জরুরী। পাড়া-মহল্লার ছোট ছোট আইএসপিগুলোর অনেক ভাল। বড় আইএসপি প্রতিষ্ঠানগুলো গ্রাহকদের প্রতি উদাসীন। কারণ তাদের গ্রাহক থাকলেই কি না থাকলেই কি। তারা তো বড় বড় প্রতিষ্ঠানকে ইন্টারনেট সেবা দেয়। সাধরণ গ্রাহক না হলেও চলে। ছোট আইএসপিগুলো নিজেদের অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতেই ভাল সেবা দেয়। ডাক ও টেলিযোগাযোগ বিভাগের একটি সূত্র জানিয়েছে, লাইসেন্স ফি বাড়ানোর প্রস্তাবের সঙ্গে মূলত ডিটিএইচ (ডাইরেক্ট টু হোম) ও আইপি (ইন্টারনেট প্রটোকল) টিভির মধ্যকার প্রতিযোগিতা। তাদের সুবিধার জন্য এমন একটি প্রস্তাব করা হয়েছে। আইপি টিভি ভাল চললে ডিটিএইচ ব্যবসা মার খেতে পারে। এ কারণে লাইসেন্স ফি ও লাইসেন্স নবায়ন ফি বাড়িয়ে ডিটিএইচকে টিকিয়ে রাখার চেষ্টা হতে পারে বলে অভিযোগ রয়েছে। এর আগে ইন্টারনেটের মূল্যসীমা বেঁধে দিতে বিটিআরসিতে প্রস্তাব পাঠিয়েছিল আইএসপিএবি। ওই প্রস্তাবে ইন্টারনেটের মূল্যসীমা কার্যকর হলে ঢাকায় ইন্টারনেটের দাম না কমলেও গতি বাড়বে। তবে ঢাকার বাইরে ইন্টারনেটের কমবে- গতি বাড়বে। উল্লেখ্য, আইএসপি লাইসেন্স ক্যাটাগরিতে ৬ ধরনের লাইসেন্স রয়েছে। নেশনওয়াইড ১২৯, সেন্ট্রালজোন ৭০ ও জোনাল ৭৬টি লাইসেন্স রয়েছে। এছাড়া ক্যাটাগরি এ, বি ও সিতে যথাক্রমে ২২৮, ৩১ ও ৯১টি লাইসেন্স আছে। এর মধ্যে এ, বি ও সি ক্যাটাগরির লাইসেন্সে আইএসপিএবি ও সাইবার ক্যাফের জন্য দেয়া হয়েছিল।
×