ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নকল ও ভেজাল ওষুধ

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৯ মার্চ ২০১৭

নকল ও ভেজাল ওষুধ

বাজারে ভেজাল ও নিষিদ্ধ ওষুধের ছড়াছড়ি সংক্রান্ত একটি প্রতিবেদন জনকণ্ঠে প্রকাশিত হয়েছে শুক্রবার। কয়েক মাস পরপরই জনস্বার্থে এ ধরনের সংবাদ ও প্রতিক্রিয়া সংবাদমাধ্যমে প্রকাশিত হয়। সরকারের ঔষধ প্রশাসন অধিদফতর সাময়িকভাবে সক্রিয় হয়ে ওঠে। ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স বাতিল করা হয়। আইনানুগ দণ্ড দেয়া হয় অপরাধীদের। তারপর আবার শুরু হয় একই বিপজ্জনক পরিস্থিতির পুনরাবৃত্তি। বাজারে থেকে যায় নিষিদ্ধ ওষুধ। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের জন্য নিয়মিত মনিটরিং এবং বিশেষ সক্রিয়তার ধারাবাহিকতা জরুরী। দেশে এ পর্যন্ত মোট ৮৬ ওষুধ কোম্পানির লাইসেন্স সাময়িক বাতিল করা হয়েছে। কিন্তু কোম্পানিগুলোর ওষুধ বাজার থেকে তুলে নেয়ার দায়িত্ব কেউ পালন করেনি বলে অভিযোগ করেছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলছেন, লাইসেন্স বাতিলকৃত কোম্পানি ও ওষুধের বিষয়ে সাধারণ মানুষ তো দূরের কথা, অনেক চিকিৎসক ও খুচরা ওষুধ বিক্রেতা কোন ধারণা রাখেন না। বাতিলকৃত কোম্পানির ওষুধ বাজারে রয়েছে কিনা তা দেখার দায়িত্ব ওষুধ প্রশাসন অধিদফতরের। অপরদিকে তালিকা না থাকায় রোগীদের ব্যবস্থাপত্রে নিষিদ্ধ ওষুধ লিখে যাচ্ছেন অনেক চিকিৎসক। ওষুধের অভ্যন্তরীণ বাজারটি বিশালÑ প্রায় ১২ হাজার কোটি টাকার। তাই মুনাফালোভী কোম্পানিগুলোর অনৈতিক কাজ করতে বাধছে না। তারা দেদার উৎপাদন করে চলেছে মানহীন ওষুধ। অথচ জীবন রক্ষার জন্য ওষুধ সেবন করতে গিয়ে সে ওষুধ জীবন সংহারে সক্রিয় হয়ে উঠছে! পক্ষান্তরে এটাও সত্যি যে, বাংলাদেশেরই অনেক ওষুধ কোম্পানি বিদেশে মানসম্পন্ন ওষুধ রফতানি করে আসছে সুনামের সঙ্গে। তার পরিমাণও নিহায়ত কম নয়। প্রায় ৯০টি দেশে বাংলাদেশের ওষুধ রফতানি হয়। স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি বুধবার এক সভায় দেশের ২০টি ওষুধ প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠানের লাইসেন্স বাতিলসহ মোট ৫৪টি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রকম শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করে। ওই সব কারখানার বিরুদ্ধে প্রধান অভিযোগÑ বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ১৯৭৬ সালের জিএমপি (গুড ম্যানুফ্যাকচারিং প্র্যাকটিস) নীতিমালা অনুসরণ করে মানসম্পন্ন উপায়ে ওষুধ প্রস্তুত না করা। এর আগেও একই সংসদীয় কমিটি একই ধরনের সুপারিশ করেছিল। যদিও কোম্পানিগুলোর বিরুদ্ধে যথেষ্ট কার্যকর ব্যবস্থা গৃহীত হয়নি। ফলে অভিযুক্ত ওষুধ কোম্পানিগুলো দ্বিগুণ উৎসাহে একই ধরনের অপকর্ম করে গেছে। ভেজাল এবং নিম্নমানের ওষুধ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো চিহ্নিত করতে ২০১৪ সালে স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি পাঁচ সদস্যের একটি বিশেষজ্ঞ তদন্ত কমিটি গঠন করে। পরিতাপের বিষয় হলো ২০১৪ সালে গঠিত বিশেষজ্ঞ তদন্ত দলের রিপোর্ট পাওয়া গেছে ২০১৬ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে। এ দীর্ঘসূত্রতা কাম্য নয়। বাজার থেকে চিহ্নিত মানহীন ওষুধগুলো প্রত্যাহার করা, এগুলোর বিক্রি কঠোরভাবে রোধ করা দরকার। নকল-ভেজাল ওষুধের বিরুদ্ধে বাজারে ভ্রাম্যমাণ অভিযান অব্যাহত রাখাও জরুরী।
×