ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ৩০ মার্চ ২০২৪, ১৬ চৈত্র ১৪৩০

পাকিস্তানের ধৃষ্টতা!

প্রকাশিত: ০৪:১৬, ২৯ মার্চ ২০১৭

পাকিস্তানের ধৃষ্টতা!

তাদের আঁতে চরম ঘা লেগেছে। একাত্তরের ২৫ মার্চ ওই বর্বরেরা স্বাধীনতাকামী বাঙালীর ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছিল মারণাস্ত্র নিয়ে। চালিয়েছিল ইতিহাসের স্মরণযোগ্য গণহত্যা। এবার বাংলাদেশ দিনটি গণহত্যা দিবস হিসেবে পালন করে এবং এটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতির জন্য তৎপরতা শুরু করে। ফলে মাথা খারাপ হওয়ার যোগাড় হয় পাকিস্তান সরকারের। তারই প্রতিক্রিয়া দেখা গেল নিউজিল্যান্ডে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে পাকিদের বাধা দেয়ার মাধ্যমে। এটি তাদের চরম ধৃষ্টতা। ১৯৭১ এর আগে বর্তমান বাংলাদেশ তথা তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানকে অর্থনৈতিক শোষণের মধ্য দিয়ে পশ্চিম পাকিস্তান আরাম-আয়েশে থাকত। একাত্তরে স্বাধীনতাযুদ্ধে পরাজয়ের কষ্ট তারা মন থেকে মুছতে পারেনি। অবশ্য পঁচাত্তরে বঙ্গবন্ধু হত্যাকা-ের পর পাকিস্তানের কিছুটা স্বস্তি ফিরে আসে। কারণ, এরপর পাকিস্তানপন্থী সরকারই রাষ্ট্রক্ষমতায় ছিল। কিন্তু বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার নেতৃত্বে সরকার গঠিত হলে এবং দেশের চাকাকে আবারও সঠিক রাস্তায় নিয়ে এসে গতিশীলতা দানের পর থেকেই পাকিস্তানের ফের গাত্রদাহ শুরু হয়। বর্তমানে পাকিস্তানের সামাজিক অবস্থার মতো অর্থনৈতিক অবস্থাও করুণ। অন্যপক্ষে বাংলাদেশ ক্রমান্বয়ে উন্নতি করে চলেছে। ডলারের বিপরীতে পাকিস্তানের মুদ্রার মান পড়ে গেছে, অথচ বাংলাদেশ স্থিতিশীলতা বজায় রেখে চলেছে। পাকিস্তানে নিত্যপণ্যের মূল্য বাংলাদেশের তুলনায় যথেষ্ট বেশি। এ জাতীয় সুস্পষ্ট ব্যবধান পাকিস্তানের জন্য বিপুল মর্মপীড়ার কারণ হয়ে উঠেছে। কিছুতেই তারা বাংলাদেশকে সহ্য করতে পারছে না। ফলে মাঝেমধ্যেই তারা উন্মাদের মতো আচরণ করছে, পাগলের মতো প্রলাপ বকছে। তারই সর্বশেষ উদাহরণ নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে বাধা প্রদান। স্মরণ করা যেতে পারে একাত্তরের মহান মুক্তিযুদ্ধ ও গণহত্যাকে পাকিস্তানের অস্বীকারের পাশাপাশি গণহত্যার জন্য উল্টো মুক্তিবাহিনীর ওপর দোষ চাপানোর মতো বিকৃত তথ্য-চিত্র সংবলিত ‘ক্রিয়েশন অব বাংলাদেশ : মিথস এক্সপ্লোডেড’ নামে একটি বই লিখে সম্প্রতি প্রকাশ করেছেন পাকিস্তানের জনৈক নাগরিক। বাংলাদেশের সৃষ্টি নিয়ে লেখা বিভ্রান্তিমূলক বইটি পাকিস্তানী গোয়েন্দা সংস্থা-আইএসআই পাকিস্তানে বাংলাদেশের হাইকমিশনারকে পাঠিয়ে এটি ‘মূল্যবান দলিল’ হিসাবে সংরক্ষণের জন্য রীতিমতো চিঠি লিখে অনুরোধ জানিয়েছিল। এই অনুরোধ করেন পাকিস্তানের ডিরেক্টর জেনারেল অব ইন্টেলিজেন্স। সে সময়ে সংসদে এর তীব্র নিন্দা জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছিলেন, ‘লাখো শহীদের রক্ত ও মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে অর্জিত এই বাংলাদেশ নিয়ে এই ধরনের অপপ্রচার অত্যন্ত দুর্ভাগ্যের। এই স্পর্ধা ও সাহস ওরা পেল কোথায়?’ পাকিস্তান একের পর এক ধৃষ্টতা দেখিয়ে চলেছে। সর্বশেষ একাত্তরের যুদ্ধাপরাধী জামায়াত নেতা মীর কাশেমের ফাঁসির পর তাদের পেয়ারা পাকিস্তান চরম ঔদ্ধত্য দেখিয়েছিল। ইসলামাবাদের প্রতিক্রিয়ার কড়া প্রতিবাদ জানায় ঢাকা। একাত্তরে বাংলার মাটিতে নারকীয় গণহত্যা চালানোর পরও পাকিস্তানের ভেতর সামান্যতম অনুতাপ পরিলক্ষিত হয়নি। বরং বিভিন্ন সময়ে তারা আমাদের অভ্যন্তরীণ বিষয়ে নাক গলানোর ঔদ্ধত্য দেখিয়েছে। একের পর এক যুদ্ধাপরাধীর ফাঁসি হওয়ায় সন্ত্রাসবাদের স্বর্গ পাকিস্তান আর নিশ্চুপ থাকতে পারেনি। প্রতিটি ফাঁসির পর দেশটির প্রতিক্রিয়া তারই বহির্প্রকাশ। গণহত্যায় নিজেদের সম্পৃক্ততা এভাবেই স্পষ্ট করেছে পাকিস্তান। আমরা আশা করব, বাংলাদেশের ইতিহাস সম্পর্কিত বক্তব্য প্রকাশে পাকিস্তান সর্বদা সতর্ক ও সংযত থাকবে। এর অন্যথা হলে তাদের দাঁতভাঙ্গা জবাব দিতে হবে। সন্ত্রাসী রাষ্ট্র হিসেবে ইতোমধ্যেই আন্তর্জাতিক পরিচিতি লাভ করেছে পাকিস্তান। এবার গণহত্যাকারী দেশ হিসেবেও তারা ঘৃণিত হবে এমনটা আশা করা যায়।
×