ঢাকা, বাংলাদেশ   মঙ্গলবার ২৩ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

ডাম্বুলায় শ্রীলঙ্কা-বাংলাদেশ দিবারাত্রির দ্বিতীয় ওয়ানডে শুরু বেলা ৩টায়

আজই সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় টাইগাররা

প্রকাশিত: ০৬:২৮, ২৮ মার্চ ২০১৭

আজই সিরিজ নিশ্চিত করতে চায় টাইগাররা

মোঃ মামুন রশীদ ॥ এমন বেকায়দায় আগে কখনও পড়েনি শ্রীলঙ্কা। বাংলাদেশ দলের বিরুদ্ধে আগে খেলা ৬টি সিরিজে কোনবারই প্রথম ম্যাচ হেরে ১-০ ব্যবধানে পিছিয়ে থাকেনি। স্বাভাবিকভাবেই ৩ ম্যাচের প্রথম ওয়ানডে জিতে বেশ উজ্জীবিত বাংলাদেশ সুবিধাজনক অবস্থানে আছে। কারণ আজ স্বাগতিক লঙ্কানদের হারাতে পারলেই প্রথমবারের মতো তাদের বিরুদ্ধে সিরিজ জিতে যাবে টাইগাররা। লড়াইয়ের মাঠ সেই ডাম্বুলা রনগিরি আন্তর্জাতিক স্টেডিয়াম। এ ভেন্যুতেই গত শনিবার প্রথম ওয়ানডেতে ৯০ রানে লঙ্কানদের পর্যুদস্ত করেছে সফরকারী বাংলাদেশ। মাশরাফি বিন মর্তুজার দল এখন সুযোগটা কাজে লাগিয়ে আজকের ম্যাচ জিতে সিরিজ নিশ্চিত করতে চায়। অপরদিকে স্বাগতিক লঙ্কানদের এখন সিরিজ বাঁচানোর লড়াই। সেজন্য দলে কিছু পরিবর্তন আনার পাশাপাশি ঢালাও পরিকল্পনা করেছে তারাও। দিবারাত্রির এ ময়দানী লড়াই বাংলাদেশ সময় বেলা ৩টায় শুরু হবে। ডাম্বুলায় অত্যধিক গরম, সেটা পুরো শ্রীলঙ্কাজুড়েই। প্রতিপক্ষ হিসেবে তাই লঙ্কানদের সঙ্গে আছে পরিবেশটাও। তবে উভয় প্রতিপক্ষকেই পরাজিত করেছে বাংলাদেশ দল টানা দুটি ম্যাচে। এরমধ্যে দেশের ঐতিহাসিক শততম টেস্ট ম্যাচটাও জিতে নেয় বাংলাদেশ। আবার সিরিজের প্রথম ওয়ানডেও খুব সহজেই নিজেদের পক্ষে নিয়েছে মাশরাফির দল। এ ভেন্যুর উইকেট বেশ কঠিন হয়ে থাকে ব্যাটসম্যানদের জন্য। খুব কমই বড় রানের ইনিংস আছে। প্রথম ওয়ানডেতে বাংলাদেশের করা ৩২৪ এ মাঠের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ দলীয় ইনিংস। এর আগে অবশ্য ২০১০ সালের এশিয়া কাপে বাংলাদেশের বিরুদ্ধে পাকিস্তানের করা ৩৮৫ রান আছে। তবে ওই সময়কার বাংলাদেশের সঙ্গে বর্তমানে মাশরাফির দলটির আছে অনেক ফারাক। সবমিলিয়ে এ ভেন্যুতে হয়েছে ৯৮ ওয়ানডে। এরমধ্যে মাত্র তিনবার তিন শতাধিক রান হয়েছে। বরাবরই লো-স্কোরিং ম্যাচ হওয়ার ঘটনা আছে এখানে। প্রথম ম্যাচেও শুরুরদিকে উইকেট বেশ কঠিন ছিল। সেঞ্চুরিয়ান তামিম ইকবালও পরে সেটা বলেছেন। তবে সেখানেই দুর্দান্ত ব্যাটিং নৈপুণ্য দেখিয়েছেন বাংলাদেশের ব্যাটসম্যানরা। টস হারলেও পরিস্থিতি সফরকারীদের পক্ষে গেছে এবং বড় সংগ্রহ পেয়েছে বাংলাদেশ। আজ আরেকবার সেটা করার লক্ষ্যেই নামবে বাংলাদেশ দল। ওয়ানডে সিরিজ শুরুর আগেই দলের ম্যানেজার খালেদ মাহমুদ সুজন ঘোষণা দিয়েছিলেন, ‘আমরা সিরিজ জিততে চাই। সেজন্য যা যা করার প্রয়োজন, সবই করব।’ সুজনের কথার প্রতিফলন প্রথম ম্যাচে বেশ ভালভাবেই মাঠে করে দেখিয়েছেন মাশরাফিরা। সার্বিক পরিস্থিতি যেমনই হোক এবার লঙ্কানদের বিরুদ্ধে সিরিজ জয়ের স্বপ্নটা শুরু থেকেই ছিল। সেই স্বপ্ন পূরণের পথটা আরও প্রশস্ত হয়েছে প্রথম ম্যাচে দুর্দান্ত জয়ের পর। মাশরাফিবাহিনীর কাছে অসহায় আত্মসমর্পণ করেছে লঙ্কানরা। এরআগে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ৬টি সিরিজ খেলেছে বাংলাদেশ দল। যার মধ্যে ৫টি সিরিজই জিতেছে শ্রীলঙ্কা এবং একটি সিরিজ হয়েছে ড্র। ড্র সিরিজটি সর্বশেষবার শ্রীলঙ্কা সফরে ২০১৩ সালে হয়েছিল। তবে ওই সিরিজের পরই বাংলাদেশ সফরে ২০১৪ সালের জানুয়ারিতে এসে বাংলাদেশকে ৩-০ ব্যবধানে হোয়াইটওয়াশ করে লঙ্কানরা। সর্বশেষ টানা পাঁচবারের মোকাবেলায়ই লঙ্কানদের কাছে পরাস্ত হয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু এবার সিরিজের শুরুতেই জিতে সুবিধাজনক অবস্থানে চলে গেছে মাশরাফির দল। প্রথমবারের মতো মোক্ষম সুযোগ এসেছে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জেতার। তাহলে ৭টি টেস্ট খেলুড়ে দেশের বিরুদ্ধে ওয়ানডে সিরিজ জেতার স্বাদ নেবে বাংলাদেশ দল। বাকি থাকবে শুধু অস্ট্রেলিয়া ও ইংল্যান্ড। আত্মবিশ্বাস এখন তুঙ্গে মাশরাফিদের। এ বিষয়ে তিনি বলেছেন, ‘জয়টা খুব গুরুত্বপূর্ণ ছিল। বিশেষ করে তিন ম্যাচ সিরিজে প্রথম ম্যাচের জয় সবসময়ই গুরুত্বপূর্ণ। আমরা প্রায় পারফেক্ট ম্যাচ খেলেছি। আমরা বিশ্বাস করি, যদি নিজেদের সেরাটা খেলতে পারি তাহলে আমাদের হারানো কঠিন। এই স্পিরিট ধরে রাখলে সিরিজ জয় আমাদেরই হবে।’ অবশ্য প্রথম ম্যাচে বিনা প্রতিদ্বন্দ্বিতায় হেরে যাওয়ার পর এখন সতর্ক হয়েছে শ্রীলঙ্কা। সিরিজ পরাজয় এড়াতে এখন মরিয়া তারা। দলের শক্তি বাড়াতে সে কারণে পেসশক্তি বাড়িয়েছে তারা। দলে নেয়া হয়েছে অভিজ্ঞ পেসার নুয়ান কুলাসেকারা ও নুয়ান প্রদীপকে। তবে চিন্তার কথা হচ্ছে অন্যতম নির্ভরতা হয়ে ওঠা পেসার সুরাঙ্গা লাকমাল কিছুটা ফিটনেস সমস্যায় আছেন। আর একজন ভালমানের অফস্পিনারের অভাববোধ করছে লঙ্কানরা। অথচ এ দেশটিতেই ছিলেন ভয়ঙ্করতম অফস্পিনার মুত্তিয়া মুরালিধরনের মতো কিংবদন্তি। সেই অভাবটা পূরণের কোন রাস্তা নেই তাদের। এ কারণে পেসারদের জন্য সহায়ক হবে এমন উইকেটেই খেলার চিন্তা-ভাবনা রয়েছে শ্রীলঙ্কার। প্রথম ম্যাচে সৌম্য সরকার ও মুশফিকুর রহীম রান পাননি। তাদের জন্য অপেক্ষা করছে লঙ্কান পেস আক্রমণ। সেটা ঠেকাতে আবারও জ্বলে উঠতে হবে সেঞ্চুরিয়ান তামিমকেই। এ সিরিজে ৩-০ ব্যবধানে জিততে পারলে আইসিসি র‌্যাঙ্কিংয়ে ৬ নম্বরে ওঠার হাতছানি, যে পজিশনে আজ পর্যন্ত যায়নি বাংলাদেশ। আজ সিরিজ জয় নিশ্চিত করতে পারলে সে পথে অনেকটাই এগিয়ে যাবেন মাশরাফিরা। কিন্তু স্বাগতিকরাও আজ বেশ প্রস্তুত হয়েই নামবে বাংলাদেশকে হারিয়ে সিরিজে সমতায় আসার। হাড্ডাহাড্ডি একটা লড়াইয়ের আভাস পাওয়া যাচ্ছে আজ ডাম্বুলায়। এখানে ছকটা পাল্টে যেতে পারে যে কোন মুহূর্তে। তবে আত্মবিশ্বাসী বাংলাদেশ দল এখন ফুরফুরে মেজাজে বেশ চাঙ্গা অবস্থায়। সেটা কাজে লাগিয়ে আরেকবার জিততে পারলেই শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে প্রথমবার সিরিজ হয়ে যাবে বাংলাদেশের।
×