ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

এক সাক্ষাতেই সিইসির প্রতি সুর পাল্টে গেছে বিএনপির

প্রকাশিত: ০৫:৫৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

এক সাক্ষাতেই সিইসির প্রতি সুর পাল্টে গেছে বিএনপির

স্টাফ রিপোর্টার ॥ এক সাক্ষাতেই প্রধান নির্বাচন কমিশনারের প্রতি সুর পাল্টে গেছে বিএনপির। সোমবার প্রথম সাক্ষাতেই তাকে সজ্জন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি হিসেবে উল্লেখ করা হয়েছে দলের পক্ষ থেকে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার পর সোমবার প্রথমবারের মতো তার সঙ্গে সাক্ষাত করেন বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর নেতৃত্বাধীন একটি প্রতিনিধি দল। প্রায় আধ ঘণ্টা সাক্ষাত শেষে রিজভী সাংবাদিকদের বলেন, প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন ‘সজ্জন’ ব্যক্তি। চাকরি জীবনের তিনি সর্বোচ্চ পর্যায়ে উন্নীত হয়েছিলেন। তার মতো মানুষ কখনোই অবান্তর কথা বার্তা বলবেন না বলে উল্লেখ করেন। বেলা তিনটায় বিএনপি প্রতিনিধি দল প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত করতে যান। মূলত কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন নিয়ে দলের পক্ষ থেকে লিখিত অভিযোগ দিতেই তারা নির্বাচন কমিশনারের কাছে যান। প্রায় আধ ঘণ্টা ধরে প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে বৈঠক করে বিএনপি প্রতিনিধি দল। এ সময় অন্য চার কমিশনার এবং ইসি সচিব কেউই উপস্থিত ছিলেন না। সাক্ষাত শেষে বের হয়েই সিইসির প্রতি সুর নরম করে কথা বলেন রুহুল কবির রিজভী। অথচ সাক্ষাত করতে যাওয়া কিছুক্ষণ আগেও পল্টন দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে সিইসিকে সমালোচনা করেন তিনি। বলেন, সিইসি বলেছেন, কুমিল্লা থেকেই গণতন্ত্র চর্চা শুরু করতে চান তিনি। সিইসির বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবতার কোন মিল নেই। অথচ সিইসির সঙ্গে সাক্ষাত করেই সাংবাদিকদের কাছে তার প্রতি প্রশংসা সূচক কথা বলেন। সিইসিসহ বর্তমান নির্বাচন কমিশন নিয়োগ পাওয়ার পর থেকেই বিএনপির পক্ষ থেকে অব্যাহতভাবে সমালোচনা করা হচ্ছে। বিএনপি দলীয় প্রধান খালেদা জিয়া থেকে শুরু করে দলের মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর, যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীসহ দলের সবস্তরের নেতারাই ইসিকে সরকারী দলের আজ্ঞাবহ বলে উল্লেখ করেন। গত মাসের ১৫ তারিখে দায়িত্ব নেয়ার আগে নূরুল হুদাকেই আওয়ামী লীগের মুখপাত্র হিসেবে উল্লেখ করেন রিজভী। সিইসি হিসেবে কেএম নূরুল হুদাকে নিয়োগ দেয়ায় বিএনপি চেয়ারপার্সন মন্তব্য করেছিলেন সরকারের আজ্ঞাবহ। অবশ্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে কোন দলের সমালোচনাকে কান দেননি প্রধান নির্বাচন কমিশনার। তিনি তখন বলেন, বিভিন্ন মহল থেকে সমালোচনা হতেই পারে। কিন্তু তিনি দায়িত্ব পালনে কখনও কোন দলের প্রতি শৈথিল্য দেখাবেন না। সোমবার প্রধান নির্বাচন কমিশনারের সঙ্গে সাক্ষাত শেষে রুহুল কবির রিজভী আরও বলেন, কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে বিএনপির দেয়া অভিযোগ খতিয়ে দেখে ব্যবস্থা নেয়ার আশ্বাস সিইসি দিয়েছেন বলে জানান। বলেন, তিনি (সিইসি) যে কথাগুলো বলবেন, যে আশ্বাস দেবেন, সেগুলো কার্যকর হবে এবং তা যুক্তিসঙ্গত বলেই আমরা মনে করি। কুমিল্লায় যে অনাচারগুলো হচ্ছে তা বন্ধ করবেন, দ্রুত ব্যবস্থা নেবেন প্রত্যাশা সিইসির কাছে রয়েছে বিএনপির। আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। দলীয় ভিত্তিতে হওয়ায় বিএনপিও এ নির্বাচনে অংশ নিয়েছে। বিএনপির প্রার্থী হিসেবে এ সিটির সদ্য সাবেক মেয়র মনিরুল ইসলাম সাক্কু মেয়র পদে প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন। সিইসির সঙ্গে সাক্ষাতের সময় বিএনপির পক্ষ থেকে কুমিল্লা সিটি নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে করতে তিন দফা দাবিও তুলে ধরা হয়। এর মধ্যে রয়েছে নেতাকর্মীদের হয়রানি বন্ধ, মিছিলে বাধা না দেয়া, নতুন কোন মামলায় কাউকে গ্রেফতার না করা। রিজভী বলেন, সরকার দলীয় নেতাকর্মীরা যে আচরণবিধি লঙ্ঘন করছে, তাতে স্থানীয় প্রশাসন নির্লিপ্ত ভূমিকা পালন করছে। এ বিষয়ে দ্রুত ব্যবস্থা নিতে সিইসিকে বলেছি আমরা। রুহুল কবির রিজভী এ সময় আরও বলেন, স্বচ্ছ ও নিরপেক্ষভাবে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচন সম্পন্ন করা নতুন নির্বাচন কমিশনের জন্য অগ্নিপরীক্ষা। এ নির্বাচনের মাধ্যমে তাদের নিরপেক্ষতা প্রমাণের পাস ফেল নির্ভর করছে। বৈঠক শেষে রুহুল কবির রিজভী অবশ্য অভিযোগ করে বলেন, কুসিক নির্বাচনে বিএনপির প্রার্থীর নেতাদের প্রচারে বাধা দেয়া হচ্ছে। নেতাকর্মীদের বিভিন্নভাবে ভয়ভীতি দেখানো হচ্ছে। গ্রেফতার করা হচ্ছে। নির্বাচনে যারা এজেন্ট হবেন তাদের গ্রেফতারের হুমকি দেয়া হচ্ছে। এ সময় তিনি প্রতিদ্বন্দ্বী ক্ষমতাসীন আওয়ামী লীগের পক্ষে নির্বাচনী বিধি লঙ্ঘন করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ করেন। তিনি আরও বলেন, নির্বাচনে মন্ত্রী-এমপিরা প্রভাব খাটাচ্ছেন। আচরণ বিধিতে সুযোগ না থাকা সত্ত্বেও পোস্টারে দলের প্রতিষ্ঠাতা ও নেতাদের ছবি ছাপা হচ্ছে। এ সময় তিনি নির্বাচনের দিন প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপন, নির্বিঘেœ ভোট দেয়ার ব্যবস্থা করা এবং নির্বাচনী কর্মকর্তারা যাতে পক্ষপাতিত্ব করতে না পারে সে ব্যবস্থা করার দাবি জানান। বলেন, সিইসি পক্ষপাতিত্ব করবেন না বলে আমাদের আশ্বাস দিয়েছেন। প্রধান নির্বাচন কমিশনার একজন সজ্জন ও দায়িত্বশীল ব্যক্তি। আশা করি তিনি যে আশ্বাস দিয়েছেন তা পূরণ করবেন। বর্তমান নির্বাচন কমিশনের অধীনেই আগামী একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। সিইসি হিসেবে কেএম নূরুল হুদা নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে এ পর্যন্ত দেশে বিভিন্ন স্থানে কয়েকটি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে। এসব নির্বাচন নিয়ে এখন পর্যন্ত কোন পক্ষ থেকে অভিযোগ উঠেনি। আগামী ৩০ মার্চ অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন। এ নির্বাচনে তফসিল ঘোষণা থেকে শুরু করে এখন পর্যন্ত বড় কোন অভিযোগ উঠেনি কোন পক্ষ থেকে। সিইসির পক্ষ থেকে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন সুষ্ঠু করতে সব ধরনের ব্যবস্থাও নেয়া হয়েছে। তবে বিএনটি স্থানীয় সব নির্বাচনে অংশ নিলেও এখন পর্যন্ত আগামী জাতীয় নির্বাচনে অংশ নেয়ার বিষয়ে স্পষ্ট করে কিছু বলেনি। কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ইসির ভূমিকা বিএনপির সিদ্ধান্ত নেয়ার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ বলেও ইঙ্গিত দেন রিজভী। বলেন, এ ইসির প্রতি অনেক রাজনৈতিক দলের নানা প্রশ্ন রয়েছে। এ পরীক্ষা পাস করলে রাজনৈতিক দলগুলো ইসির প্রতি আস্থা পাবে। বিএনপি প্রতিনিধি দলে অন্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন বিএনপির স্বনির্ভর বিষয়ক সম্পাদক আবুল খায়ের ভুইয়া এবং দলের চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা আব্দুস সালাম।
×