ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৭ বৈশাখ ১৪৩১

শিববাড়ি বোমা বিস্ফোরণ

পলাতক ফারুককে সন্দেহে রেখে মামলার তদন্ত শুরু

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

পলাতক ফারুককে সন্দেহে রেখে মামলার তদন্ত শুরু

স্টাফ রিপোর্টার, সিলেট ॥ শনিবার রাতে সিলেটে শিববাড়ি এলাকায় শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে করা মামলায় হাসপাতাল থেকে পালিয়ে যাওয়া ফারুককে সন্দেহের তালিকায় রেখে তদন্ত শুরু করা হয়েছে। অজ্ঞাতনামাদের আসামি করে রবিবার গভীর রাতে মামলাটি দায়ের করা হয়। সোমবার এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউকে আটক দেখায়নি পুলিশ। নগরীর মোগলাবাজার থানার এসআই শিবলু চৌধুরী বাদী হয়ে বিস্ফোরক আইনে মামলা দায়েরের আগে থেকেই ফারুকের বিষয়ে পুলিশ খোঁজ নিচ্ছে। পুলিশ সূত্র জানায়, আহত অবস্থায় যাদের হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছিল তাদের মধ্যে থেকে এক ব্যক্তি উধাও হয়ে যায়। এতে তাদের সন্দেহ হয়। পুলিশ বলছে ঘটনার দিন দুটি মোটরসাইকেলে চারজন এসে আতিয়া মহল কতদূর জানতে চান। স্থানীয়রা বাড়িটি দেখিয়ে দিল। কিছুক্ষণ পরই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। এতে ধারণা করা হচ্ছে সিলেটে আতিয়া মহলের বাইরেও জঙ্গী আস্তানা রয়েছে যেখান থেকে এসে এই হামলা চালানো হয়েছে। সঙ্গত কারণে সবগুলো আশঙ্কাজনক স্থান খতিয়ে দেখছে পুলিশ। গত সন্ধ্যায় মোঘলবাজার থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা খায়রুল ফজল সোমবার জানান, সন্দেহের তালিতায় থাকা প্রত্যেকের বিষয়ে তারা খোঁজ নিচ্ছেন। তবে আলাদা করে ফারুকের বিষয়ে তিনি কিছু জানাতে পারেননি। পুলিশের একজন কর্মকর্তা সোমবার জনকণ্ঠকে বলেন, ফারুক শনিবার সন্ধ্যায় শিববাড়ির আতিয়া মহলের পাশে বিস্ফোরণে আহত হয়েছিলেন। অন্যদের মতো আহত অবস্থায় তাকেও ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালে নেয়া হয়েছিল। কিন্তু হাসপাতালে ভর্তির কিছু সময় পরই সে কোথাও চলে গেছে। হাসপাতালের রেজিস্টারেও তার নাম রয়েছে। সঙ্গত কারণেই তাকে খোঁজা হচ্ছে। তাদের সন্দেহের তালিকায় আরও তিনজন রয়েছে। এর মধ্যে দুজন এ ঘটনায় নিহত হয়েছেন। যদিও সোমবার তাদের লাশ সোমবার স্বজনদের কাছে হস্তান্তর করা হয়েছে। আর অন্যজনের নাম তদন্তের স্বার্থে প্রকাশ করছে না পুলিশ। নগরীর দক্ষিণ সুরমার শিববাড়িতে জঙ্গী আস্তানা সন্দেহে আতিয়া মহল নামের একটি পাঁচতলা বাড়িতে সেনাবাহিনীর অভিযান চলাকালে শনিবার সন্ধ্যায় ওই ভবনের কাছে দুটি শক্তিশালী বোমা বিস্ফোরণে নিহত হন জালালাবাদ থানার পরিদর্শক (তদন্ত) মনিরুল ইসলাম, আদালত পুলিশের পরিদর্শক চৌধুরী মোঃ আবু কয়ছর, ছাত্রলীগ নেতা জান্নাতুল ফাহমি ও অহিদুল ইসলাম অপু, ছাতকের দয়ারবাজার এলাকার কাদিম শাহ এবং নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ার শহীদুল ইসলাম। যদিও তাদের স্বজন এবং প্রতিবেশীরা দাবি করছে তারা কখনও জঙ্গী তৎপরতায় জড়িত হতে পারে না। তারাও অন্যদের মতোই ঘটনা দেখতে গিয়ে পরিস্থিতির স্বীকার হয়েছেন। এদের মধ্যে কাদিম শাহ ও শহীদুল ইসলামের মরদেহ রবিবার পরিবারের কাছে হস্তান্তর করেনি পুলিশ। তারা দু’জন পরস্পরের বন্ধু এবং দুজনই সিলেট নগরীর দাঁড়িয়াপাড়ায় প্রাইম লাইটিং এ্যান্ড ডেকোরেটর্সে কাজ করতেন। সোমবার আঙ্গুলের ছাপ এবং জমাকাপড়ের নমুনা ছাড়াও প্রয়োজনীয় আলামত রেখে তাদের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হয়। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার এসএম রোকন উদ্দিন বলেন, চারজনের লাশ পরিবারের কাছে হস্তান্তর করা হলেও দুজনের বিষয়ে খোঁজ নেয়ার পর তাদের লাশ হস্তান্তর করা হয়েছে। তিনি বলেন, কারা হামলার সঙ্গে জড়িত তা খুঁজে বের করতে তদন্ত চলছে। এ ঘটনায় যারা আহত হয়েছেন তাদের ব্যাপারেও আমরা খোঁজ নিচ্ছি। ওই বিস্ফোরণে ছয়জন নিহতের পাশাপাশি অন্তত ৫০ জন আহত হন। যাদের মধ্যে ১৭ জন প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে ওইদিনই বাড়ি ফিরে যান। বাকিরা এখনও কেউ কেউ হাসপাতালে রয়েছেন। হামলার পর সেখানে একটি বাজারের ব্যাগ এবং সবজি পড়ে থাকতে দেখে পুলিশ মনে করছে বাজারের ব্যাগে বোমা বহন করা হয়েছিল। তবে হামলাটি আত্মঘাতী কী না এ ব্যাপারেও এখনও নিশ্চিত হতে পারেনি পুলিশ। প্রথম দফায় বোমা হামলাকারী জঙ্গী সবজির ব্যাগে করে বোমা বহন করে বিস্ফোরণ ঘটায় বলে ধারণা করছে পুলিশ। সিলেট মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত উপকমিশনার (গণমাধ্যম) জেদান আল মুসা বলেন, বোমা বিস্ফোরণস্থলের পাশে বাজারের ব্যাগ ও সবজি পড়ে থাকতে দেখে প্রাথমিকভাবে মনে হচ্ছে হামলাকারী জঙ্গী সঙ্গে থাকা বোমা গোপনে সবজির ব্যাগে করে বহন করেছিল। এদিকে জঙ্গী আস্তানায় অভিযানের মধ্যে শনিবার হামলার ঘটনা ঘটায় এখনও ওই এলাকায় আতঙ্ক বিরাজ করছে। হামলার ঘটনা এবং আশপাশের প্রায় এক বর্গ কিলোমিটার এলাকায় ১৪৪ ধারা এখনও জারি রয়েছে। পুলিশ ওইদিন বোমা বিস্ফোরণের পর ১৯টি বল-বিয়ারিং, সিøন্টার, দুটি মোবাইল ফোন সেট, ভেঙ্গে টুকরো টুকরো হয়ে যাওয়া কয়েকটি লোহার ছোট পাত, স্কচটেপ ও রক্তমাখা একটি চাদর উদ্ধার করা হয়। ঘটনাস্থলটি এখনও পুলিশ ঘিরে রেখেছে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছে পুলিশ ॥ এদিকে ওসমানীনগর উপজেলায় বসবাসরত বহিরাগত ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছে পুলিশ। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার ‘আতিয়া মহলে’ জঙ্গী আস্তানা উদঘাটনের পর ওসমানীনগর উপজেলায় বসবাসরত বহিরাগত ভাড়াটিয়াদের তথ্য সংগ্রহে নেমেছে পুলিশ। ওসমানীনগর থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুল আওয়াল চৌধুরীর নেতৃত্বে একদল পুলিশ স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে নিয়ে তথ্য সংগ্রহের জন্য মাঠে নেমেছেন। সোমবার দিনভর উপজেলার ব্যবসায়িক প্রাণ কেন্দ্র গোয়ালাবাজারের প্রতিটি বাসায় গিয়ে ভাড়াটিয়া ও মালিক পক্ষের কাছে তথ্য প্রদানের ফরম বিতরণ করেন। এ সময় পুলিশের সঙ্গে ছিলেন গোয়ালাবাজার ইউপি চেয়ারম্যান আতাউর রহমান মানিক, ইউপি সদস্য আবদুল সামাদ ও সাংবাদিক আনোয়ার হোসেন আনা। ওসি আবদুল আওয়াল চৌধুরী জানান, এলাকায় বসবাসরত সকল বহিরাগতসহ সকল ভাড়াটিয়ার তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে। তথ্য পাওয়ার পর তা যাচাই-বাছাই করা হবে। ভাড়াটিয়াদের তথ্য প্রদানে পুলিশ ও স্থানীয় ইউনিয়ন প্রশাসনকে সহযোগিতা প্রদানের জন্য সকলের প্রতি অনুরোধ জানান তিনি।
×