ঢাকা, বাংলাদেশ   শনিবার ২০ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

উৎসবমুখর পরিবেশ, নতুন ভোটার ভোট দেয়ার প্রহর গুনছে

প্রকাশিত: ০৫:৪৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

উৎসবমুখর পরিবেশ, নতুন ভোটার ভোট দেয়ার প্রহর গুনছে

আরাফাত মুন্না/ মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ আর মাত্র একদিন পরেই ভোট কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের। ভোটের দিনের পরিস্থিতি নিয়ে বিএনপি শঙ্কা প্রকাশ করলেও, সাধারণ ভোটারদের মধ্যে দেখা গেছে উৎসাহ-উদ্দীপনা। ভোটাররা জানিয়েছে, তফসিল ঘোষণার পর থেকে এখন পর্যন্ত উল্লেখযোগ্য তেমন অপ্রীতিকর কোন ঘটনা ঘটেনি, তাই ৩০ মার্চ উৎসবের আমেজেই ভোট দিতে পারবো। নতুন ভোটারদের মধ্যে নির্বাচন নিয়ে উৎসাহ বেশি দেখা গেছে। তারা জানিয়েছেন, প্রথম ভোট দেব। খুব ভাল লাগছে। কোন শঙ্কা আছে কি না, এমন প্রশ্নে তারা জানান, শঙ্কা প্রকাশ করার মতো এখনও কিছুই ঘটেনি। আনন্দ নিয়েই প্রথম ভোটটা দিতে পারবো। যারা নির্বাচিত হবেন তাদের কাছে সন্ত্রাস, মাদক, যানজট, জলাবদ্ধতামুক্ত এক পরিচ্ছন্ন নগরের প্রত্যাশা জানিয়েছেন তারা। এদিকে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে কাজ করতে আসা নেতাকর্মীদের পুলিশ হয়রানি করছে অভিযোগ করে ভোট নিয়ে শঙ্কার কথা জানিয়েছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কুসিক নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। সোমবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগরপাড়স্থ বিএনপির নির্বাচনী প্রচার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ অভিযোগ করেন তিনি। অন্যদিকে, ভোটারদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, বর্তমান যে পরিস্থিতি বিরাজমান তাতে শঙ্কামুক্ত পরিবেশে তারা ভোট দিতে পারবেন। এ বিষয়ে কুমিল্লা টিচার্স ট্রেনিং কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ নগরীর ৫ নম্বর ওয়ার্ডের ভোটার প্রফেসর পরিমল কান্তি পাল জনকণ্ঠকে বলেন, আমরা এ পর্যন্ত কোন ধরনের বিশৃঙ্খল পরিস্থিতি দেখিনি। দেশের অন্যান্য স্থানে নির্বাচনের আগে অনেক ধরনের ঘটনাই ঘটে। সে রকম কিছুই কুমিল্লায় হয়নি। ফলে নির্বাচনে কোন অঘটন ঘটবে না এবং সুষ্ঠু এবং সুন্দর একটি নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। নগরীর দক্ষিণ আশরাফপুর ২১ নম্বর ওয়ার্ডের বাসিন্দা নুরুল আমিন ডিগ্রী কলেজের সহকারী অধ্যাপক গাজী মোঃ আবদুর রশিদ জনকণ্ঠকে বলেন, এখনও পর্যন্ত যেহেতু উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজ করছে, তাই নির্বাচনের দিনও এ ধরনের পরিবেশ থাকবে বলে আমরা মনে করি। আশা করছি, কোন ঝামেলা ছাড়ই ভোট দিতে পারবো। কুমিল্লা ভিক্টোরিয়া সরকারী কলেজের বিবিএস শেষ বর্ষের ছাত্র নগরীর ১৩ নম্বর ওয়ার্ডের দক্ষিণ ছর্থার বাসিন্দা রেজাউল কাইয়ুম বলেন, আমি একজন নতুন ভোটার হিসেবে এবার সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেব। নির্বাচনী পরিবেশ এখনও উৎসবমুখর। প্রথম ভোট দিতে পারবো তাই ভাল লাগছে। নির্বাচনের দিন পর্যন্ত এ পরিবেশ বিরাজমান থাকবে বলে আশা করছি। ভোট দেয়া নিয়ে আমার মনে কোন ভীতি বা শঙ্কা নেই। নগরীর সুজানগর তালুকদার হাউসের বাসিন্দা গৃহিণী রহিমা বেগম জনকণ্ঠকে বলেন, সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনে ভোট দেয়া নিয়ে আমাদের মনে কোন ভয়ভীতি নেই। এ পর্যন্ত যে পরিবেশ বিরাজমান আছে তাতে একজন নারী ভোটার হিসেবে আমার ভোট আমি দিতে পারবো বলে আশা করছি। বিএনপির শঙ্কা ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন (কুসিক) নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের বিরুদ্ধে পুলিশ প্রশাসনকে ব্যবহার করে বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে মাঠে কাজ করা নেতাকর্মীদের মিথ্যা মামলায় হয়রানি, গ্রেফতার ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করার অভিযোগ এনে ভোট নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য ও কুসিক নির্বাচনের বিএনপির প্রার্থীর প্রধান সমন্বয়ক নজরুল ইসলাম খান। সোমবার দুপুরে নগরীর ধর্মসাগরপাড়ে বিএনপির নির্বাচনী প্রচার কার্যালয়ে আয়োজিত সংবাদ সম্মেলনে এ শঙ্কার কথা জানান তিনি। নজরুল ইসলাম খান বলেন, নির্বাচনে মাঠে প্রভাব বিস্তারের লক্ষ্যে সরকারদলীয়রা পুলিশকে ব্যবহার করছে। বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর পক্ষে মাঠে কাজ করা নেতাকর্মীদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে সাদা পোশাকে তল্লাশির নামে পরিবারের সদস্যদের হয়রানি করা হচ্ছে। অনেকের নামে মামলা না থাকলেও পুরাতন মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে কারাগারে পাঠানো হচ্ছে। আমরা কয়েকজনকে ছাড়িয়ে এনেছি। এসব কর্মকা- আমাদের নির্বাচনে পরাজিত করার ষড়যন্ত্র। তিনি বলেন, সরকারদলীয় প্রার্থী ও তাদের নেতারা নিয়মিত আচরণবিধি লঙ্ঘন করলেও প্রশাসন কোন ব্যবস্থা নিচ্ছে না। নির্বাচন কমিশন সুষ্ঠু অবাধ ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা এর বাস্তবায়ন দেখতে চাই। তিনি আরও বলেন, ভোটের দিন ভোটাররা যেন কেন্দ্রে নির্বিঘেœ ভোট দিয়ে তাদের পছন্দের প্রার্থীর পক্ষে মতামত দিতে পারে এ জন্য কেন্দ্রে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ সৃষ্টি করার জন্য তিনি রিটার্নিং অফিসার এবং স্থানীয় প্রশাসনের প্রতি আহ্বান জানানো পাশাপাশি ভোট চুরি ও জাল ভোট প্রতিরোধে প্রতিটি কেন্দ্রে সিসি ক্যামেরা স্থাপনসহ শান্তিপূর্ণ, অবাধ ও নিরপেক্ষ ভোটের পরিবেশ সৃষ্টির জন্যও নির্বাচন কমিশনের প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। নজরুল ইসলাম আরও বলেন, কুমিল্লার আশপাশের জেলাগুলো থেকে সরকারদলীয় প্রভাবশালীরা এসে কুমিল্লায় অবস্থান করছেন। আমরা জানতে পেরেছি নির্বাচনের দিন তারা ভোটকেন্দ্রে প্রভাব বিস্তার করবে। বিষয়টি আমরা নির্বাচন কমিশনকে অবহিত করেছি। নির্বাচন কমিশন এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেবেন বলেন আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। এ সময় অন্যদের মধ্যে বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান আবদুল্লাহ আল নোমান, শওকত মাহমুদ, চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা জয়নাল আবদীন ফারুক, হাবিবুর রহমান, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ মোয়াজ্জেম হোসেন আলাল, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, ইমরান সালেহ প্রিন্স, প্রচার সম্পাদক শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানী, সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক আবদুল আউয়াল খান, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক হাজি আমিনুর রশীদ ইয়াছিন, কল্যাণ পার্টির কেন্দ্রীয় নেতা শহিদুল ইসলাম তামান্না, বিএনপির মেয়র প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর প্রধান নির্বাচনী এজেন্ট ও তার ভাই এ্যাডভোকেট কাইমুল হক রিংকু এবং চেয়ারপার্সনের মিডিয়া উইংয়ের সামছুদ্দিন দিদারসহ দলের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় বিপুল সংখ্যক নেতাকর্মী উপস্থিত ছিলেন। রিটানিং অফিসারের বক্তব্য ॥ আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকীব উদ্দিন ম-ল জনকণ্ঠকে বলেন, মেয়র প্রার্থীদের পক্ষে পাঁচ-ছয়টা অভিযোগ জমা পড়েছিল। এসব বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। এখন পর্যন্ত উৎসবমুখর পরিবেশে নির্বাচনের কার্যক্রম চলছে। তিনি বলেন, ভোটের দিনও যাতে এ ধরনের উৎসবমুখর পরিবেশ বিরাজমান থাকে সে জন্য নির্বাচন কমিশন যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের জন্য নগরীতে মাইকিং করা হয়েছে। তিনি আরও জানান, ভোটাররা যাতে শঙ্কামুক্ত হয়ে ভোটকেন্দ্রে গিয়ে অবাধে ভোট দিতে পারেন এ জন্য সন্ত্রাসী ও অস্ত্রধারীদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণে পুলিশকে নির্দেশ দেয়া আছে। পুলিশ নির্দেশ মোতাবেক কাজ করছে। পুলিশ সুপারের বক্তব্য ॥ কুমিল্লার পুলিশ সুপার মোঃ শাহ আবিদ হোসেন জানান, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনের স্বার্থে পুলিশের সকল প্রস্তুতি রয়েছে। এ ক্ষেত্রে অন্যায়ভাবে ও কোন অভিযোগ ছাড়া কাউকে গ্রেফতার কিংবা মামলা দিয়ে হয়রানি করা হচ্ছে না। কেউ যদি সুনির্দিষ্ট অভিযোগ দায়ের করেন তদন্ত সাপেক্ষে ওই অভিযোগগুলো খতিয়ে দেখা হবে। তিনি বলেন, নির্বাচনকে সামনে রেখে কোন দলের নেতাকর্মীকে গ্রেফতার বা মামলা দিয়ে হয়রানির বিষয়টি ঠিক নয়।
×