ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১০ বৈশাখ ১৪৩১

অবকাঠামো ও বিজ্ঞান শিক্ষার মানোন্নয়নে ব্যয় হবে সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা

৩২৩ সরকারী হাইস্কুল আর দু’শ’ কলেজ উন্নয়নে মেগাপ্রকল্প

প্রকাশিত: ০৫:১৭, ২৮ মার্চ ২০১৭

৩২৩ সরকারী হাইস্কুল আর দু’শ’ কলেজ উন্নয়নে মেগাপ্রকল্প

আনোয়ার রোজেন ॥ শিক্ষা ক্ষেত্রে সরকারী মাধ্যমিক স্কুলগুলোতে বিরাজমান আঞ্চলিক বৈষম্য দূর করতে উদ্যোগ নিয়েছে সরকার। একই সঙ্গে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকারী কলেজগুলোর প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতাও বাড়ানো হবে। এজন্য মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক পর্যায়ের ৫২৩ সরকারী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের অবকাঠামো উন্নয়নে পৃথক দুটি প্রকল্পের কাজ শুরু হতে যাচ্ছে। এর মধ্যে ৩২৩ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয় (হাইস্কুল) এবং ২০০ সরকারী কলেজে রয়েছে। প্রকল্প দুটি বাস্তবায়নে প্রায় সাড়ে ৬ হাজার কোটি টাকা ব্যয় হবে। সংশ্লিষ্ট সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে। সূত্র জানায়, দুটি প্রকল্পই বাস্তবায়ন করবে মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর। দেশে বিদ্যমান সরকারী হাইস্কুলের সংখ্যা ৩৩৫। এর মধ্যে বারোটি স্কুল মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতরের অন্য একটি প্রকল্পের মাধ্যমে নতুনভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। অবশিষ্ট ৩২৩ স্কুলকে নতুন প্রকল্পে অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে। প্রকল্পের হাইস্কুলগুলোর একাডেমিক ভবন নির্মাণ, বিদ্যমান ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ, হোস্টেল নির্মাণ, কম্পিউটার ও বিজ্ঞান ল্যাবরেটরি স্থাপন, ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা এবং মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুস স্থাপন করা হবে। ফলে শিক্ষার্থীর সংখ্যা দ্বিগুণে উন্নীত করা সম্ভব হবে। এর বাইরে বিজ্ঞান শিক্ষার সুযোগ বাড়াতে ২০০ সরকারী কলেজে অবকাঠামো নির্মাণ করা হবে। পরিকল্পনা কমিশন সূত্র জানায়, ৩২৩ সরকারী হাইস্কুলের অবকাঠামো উন্নয়নে প্রস্তাবিত প্রকল্পে ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ৬৪০ কোটি টাকা। আর নির্বাচিত ২০০ কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষা সম্প্রসারণে নেয়া প্রকল্পে ব্যয় হবে ১ হাজার ৮০৫ কোটি টাকা। দুটি প্রকল্পই জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সাম্প্রতিক সভায় অনুমোদন পেয়েছে। সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকেই দুই প্রকল্পে অর্থায়ন করা হবে। ’২১ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের কাজ শেষ করার সময়সীমা বেঁধে দেয়া হয়েছে। মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদফতর সূত্র জানায়, নতুন প্রকল্পের আওতাধীন স্কুলগুলোতে বর্তমানে বিজ্ঞান বিভাগের ৬৮ হাজার ৮৩৯ জনসহ মোট ৩ লাখ ৪৬ হাজার ১০৫ শিক্ষার্থী অধ্যয়ন করছে। প্রকল্পের কাজ শেষ হলে এসব স্কুলে বিজ্ঞানের ৭৬ হাজার শিক্ষার্থীসহ নতুন করে ৩ লাখ ২৯ হাজার বাড়তি শিক্ষার্থী ভর্তি হতে পারবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়নের মাধ্যমে শিক্ষাক্ষেত্রে সরকারী হাইস্কুলগুলোয় বিরাজমান আঞ্চলিক বৈষম্য কমে আসবে বলে মনে করছে পরিকল্পনা কমিশন। পরিকল্পনা কমিশনের সাধারণ অর্থনীতি বিভাগের (জিইডি) সদস্য ও সিনিয়র সচিব প্রফেসর ড. শামসুল আলম জনকণ্ঠকে বলেন, সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় উচ্চশিক্ষাকে দেশের মানবসম্পদ উন্নয়নসহ আর্থসামাজিক উন্নয়নের মূল চালিকাশক্তি হিসেবে গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। পরিকল্পনার উচ্চশিক্ষায় ভর্তির হার ২০২০ সালে ২০ দশমিক ৬০ শতাংশ উন্নীত করার লক্ষ্য বেঁধে দেয়া হয়েছে। শিক্ষা খাতে মোট দেশজ উৎপাদনের (জিডিপি) ব্যয় ২ দশমিক ৫ শতাংশে উন্নীত করার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে। প্রকল্পটি এসব লক্ষ্য পূরণে সহায়ক হবে বলে তিনি আশা করেন। প্রকল্পের প্রধান কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে ৩২৩ সরকারী মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন নির্মাণসহ ভূমি উন্নয়ন। এর বাইরে ১২৫ বিদ্যালয়ের বিদ্যমান একাডেমিক ভবনের উর্ধমুখী সম্প্রসারণ করা হবে। ২৪ বিদ্যালয়ের হোস্টেল ও একটি বিদ্যালয়ের শিক্ষক কোয়ার্টার নির্মাণ করা হবে। তাছাড়া কম্পিউটার ল্যাব, সায়েন্স ল্যাব, লাইব্রেরি, ইন্টারনেট সুবিধাসহ স্মার্ট ক্লাসরুম প্রতিষ্ঠা ও মাল্টিমিডিয়া ক্লাসরুমের জন্য প্রয়োজনীয় যন্ত্রপাতি কেনা হবে প্রকল্পভুক্ত সব স্কুলে। অন্যদিকে সারাদেশে নির্বাচিত ২০০ সরকারী কলেজে বিজ্ঞানশিক্ষার সুযোগ সম্প্রসারণ করা হবে। এ সংক্রান্ত প্রকল্পের আওতায় জেলা পর্যায়ে ৮৮ ও উপজেলা পর্যায়ে ১১২ কলেজে একাডেমিক ভবন নির্মাণ করা হবে। স্থাপন করা হবে বিজ্ঞান গবেষণাগার, মাল্টিমিডিয়া শ্রেণীকক্ষ ও আইটি ল্যাব। এছাড়া কম্পিউটার, অফিস সরঞ্জাম, বিজ্ঞান যন্ত্রপাতি ও আসবাবপত্র সরবরাহ করা হবে। বিজ্ঞানশিক্ষার পথ সুগম করতে শিক্ষকদের সক্ষমতা বৃদ্ধি ও নতুন পদও সৃষ্টি করা হবে। প্রকল্পের প্রস্তাবনায় বলা হয়েছে, বিজ্ঞান শিক্ষা টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এসডিজি) অর্জনের পূর্বশর্ত। কিন্তু বাংলাদেশের বিশেষত সরকারী কলেজগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষায় ব্যাপক প্রতিবন্ধকতা লক্ষ্য করা যায়। সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিজ্ঞান শিক্ষার প্রতি যুব সমাজের আগ্রহ হ্রাস পেয়েছে।
×