ঢাকা, বাংলাদেশ   বুধবার ২৪ এপ্রিল ২০২৪, ১১ বৈশাখ ১৪৩১

শীতলপাটির বাজার মন্দা

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

শীতলপাটির বাজার মন্দা

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ বাংলার আবহমানকালের ঐতিহ্যের এক বড় উপাদান শীতলপাটি। গ্রীষ্মের দুপুরে আমাদের অনেকেরই ছোটবেলার একটা বড় সময় কেটেছে এই শীতলপাটির সংস্পর্শে। তবে এখন আর চৈত্রের তাপদাহেও মানুষ শীতলপাটি তেমন কিনতে আসছেন না। আগে এমন সময় ক্রেতা সামলাতে পারতাম না, আর এখন ক্রেতা নেই বললেই চলে। হতাশার সুরে উপরের কথাগুলো বলেন খুলনার বড়বাজারের কালীবাড়ির পাটি বিক্রেতা সঞ্জিব সমাদ্দার। তিনি জানান, চৈত্রের এই সময় আগে একটু স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলার জন্য মানুষ ছুটে আসতেন শীতলপাটি কিনতে। কিন্তু এখন বৈদ্যুতিক পাখা, এসি, প্লাস্টিকের পাটি কিনছেন তারা। কেননা শীতলপাটির তুলনায় এসব পণ্যের দাম তুলনামূলক কম। তাছাড়া প্লাস্টিকের পাটি বেশ দীর্ঘস্থায়ী। তিনি বলেন, আগে প্রতিদিন পাইকারি ও খুচরা শত শত পাটি বিক্রি হতো। এখন দিনে ১০-১২ টি বিক্রি হয়। এখন শীতলপাটির পাশাপাশি আমরা প্লাস্টিকের পাটি রাখি ক্রেতার চাহিদার কারণে। সঞ্জিব সমাদ্দার বলেন, বিভিন্ন ধরনের প্লাস্টিকের পাটি ও চাটাইয়ের দাম সাধ্যের মধ্যে থাকায় শীতলপাটির চাহিদায় কিছুটা ভাটা পড়েছে। বাজারে চাহিদা কমে যাওয়ায় বহু ব্যবসায়ীর দোকান বন্ধ হয়ে গেছে। দোকানি নির্মল বলেন, চৈত্রের তপ্ত দুপুরে শরীর শীতল রাখতে একটু বিশ্রামের জন্য শীতলপাটির যেমন বিকল্প নেই তেমনি রাতেও সারাদিনের ক্লান্তি দূর করতে শীতলপাটিতে ঘুমানোর আরাম তুলনাহীন। যার কারণে কয়েক বছর আগেও মানুষ আমাদের দোকানে আসতেন। প্লাস্টিকের পাটি বের হওয়ার কারণে এখন মানুষ আর আগের মতো আসেন না। বাঁশের পাটি বের হয়েছে তারও তেমন চাহিদা নেই। তবে অনেক সৌখিন ক্রেতা এখনও রং-বেরঙের শীতলপাটি কিনে থাকেন বলে জানান তিনি। দোকানিরা জানান, তারা যেসব পাটি বিক্রি করেন তা বরিশাল, ঝালকাঠি, ফেনী, নোয়াখালী থেকে আনেন। এসব পাটির মধ্যে রয়েছে- মোটা পাটি, চিকন পাটি, বুকার পাটি, জোড়া পাটি। সরেজমিন বড় বাজারের শীতলপাটির দোকান ঘুরে দেখা গেছে, শীতলপাটির পসরা সাজিয়ে রেখেছেন দোকানিরা। যার মধ্যে রয়েছে বাহারি রং দিয়ে পাটিতে গাছপালা, লতাপাতা, পশু-পাখি, মসজিদ, মিনারসহ নকশা করা পাটি। সাধারণ একটি প্লাস্টিকের পাটি আকারভেদে ৩০০ থেকে ১ হাজার টাকায় বিক্রি হয়। কিন্তু শীতলপাটি ৫০০ থেকে ৩ হাজার টাকায়ও বিক্রি করছেন পাটি বিক্রেতারা। পাটি কিনতে আসা বেসরকারী চাকরিজীবী এম রহমান বলেন, প্রচ- গরমে চোখ বুঁজে একটু শান্তিতে ঘুমানোর জন্য আরামদায়ক বলে শীতলপাটি কিনতে এসেছি। যদিও প্লাস্টিকের পাটির চেয়ে শীতলপাটির দাম একটু বেশি, তবু স্বস্তির জন্য লম্বা একটি পাটি কিনেছি ৯শ’ টাকায়।
×