ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ১৯ এপ্রিল ২০২৪, ৬ বৈশাখ ১৪৩১

ব্যাংকে অলস টাকা বেড়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি

প্রকাশিত: ০৫:১৩, ২৮ মার্চ ২০১৭

ব্যাংকে অলস টাকা বেড়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি

অর্থনৈতিক রিপোর্টার ॥ ব্যাংক ঋণের সুদের হার কমার পরও বিনিয়োগ বাড়ছে না। এতে ব্যাংকগুলোতে বাড়ছে অলস টাকা। পরিসংখ্যান বলছে, ১ বছরে দেশের বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোয় অলস টাকা বেড়েছে প্রায় ২ হাজার ৩০০ কোটি। এ সময় সরকারী, বেসরকারী ও বিদেশী সব খাতের ব্যাংকেই বেড়েছে অলস অর্থ। এর জন্য বিনিয়োগের যথাযথ পরিবেশের অভাবকে দায়ী করছেন সংশ্লিষ্টরা। তারা বলছেন, ব্যাংক ঋণের সুদ আগের যে কোন সময়ের তুলনায় এখন কম। তবে গ্যাস, বিদ্যুত ও অবকাঠামোর খুব উন্নতি হয়নি। কাটেনি রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা। এতে নতুন বিনিয়োগ অনেকটা থমকে আছে। এছাড়া বিভিন্ন আর্থিক অনিয়ম ও দুর্নীতির কারণে খেলাপি ঋণ বাড়ায় ব্যাংকগুলোও বিনিয়োগের ক্ষেত্রে যথেষ্ট সতর্কতা অবলম্বন করছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ প্রতিবেদনে দেখা যায়, ২০১৬ সাল শেষে ব্যাংকিং খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য দাঁড়িয়েছে ১ লাখ ২২ হাজার ৭৩ কোটি টাকা, ২০১৫ সাল পর্যন্ত যা ছিল ১ লাখ ২০ হাজার ৬৭৯ কোটি টাকা। ফলে ১ বছরের ব্যবধানে এ খাতে উদ্বৃত্ত তারল্য বেড়েছে ১ হাজার ৩৯৬ কোটি টাকা। এ সময়ে উদ্বৃত্ত তারল্যের পাশাপাশি অলস অর্থও বেড়েছে। প্রতিবেদন অনুযায়ী, ২০১৫ সাল পর্যন্ত ব্যাংকিং খাতে অলস অর্থ ছিল ৭ হাজার ৫৫৪ কোটি টাকা, যা ২০১৬ সালে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৯ হাজার ৮৬৮ কোটি টাকা। ফলে ১ বছরের ব্যবধানে অলস টাকা বেড়েছে ২ হাজার ৩০০ কোটি টাকা। এ সময় দেশের ইসলামী ব্যাংকগুলোয় সবচেয়ে বেশি অলস অর্থ রয়েছে, যার পরিমাণ ৬ হাজার ৪৪১ কোটি টাকা। আগের বছর যা ছিল ৩ হাজার ৯৯০ কোটি টাকা। ইসলামী ব্যাংক বাদে দেশের অন্য বেসরকারী ব্যাংকগুলোয় অলস অর্থ রয়েছে ১ হাজার ৬৬৭ কোটি টাকা। আগের বছর ছিল ১ হাজার ১৮ কোটি টাকা। দেশের রাষ্ট্রায়ত্ত ছয় ব্যাংকে অলস অর্থ রয়েছে ৯৩৯ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ১ হাজার ৮৩৬ কোটি টাকা। বিদেশী ব্যাংকগুলোয় অলস অর্থ রয়েছে ৮২০ কোটি টাকা, যা আগের বছর ছিল ৬০৯ কোটি টাকা। তবে আগের বছর বিশেষায়িত ব্যাংকগুলোয় ১০০ কোটি টাকার অলস অর্থ থাকলেও গেল বছর তা শূন্যে নেমেছে। গত মাসে রূপালী ব্যাংকের এক অনুষ্ঠানে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠান বিভাগের সচিব ইউনুসুর রহমান বলেন, সরকারী ব্যাংকে প্রচুর অলস টাকা রয়েছে। অথচ গ্রামের মানুষ চাহিদার তুলনায় ঋণ নিতে পারছেন না। তাদের চাহিদার মাত্র ৪০ ভাগ ঋণ পাচ্ছেন। সরকারী ব্যাংকের কর্মকর্তারা ঋণ প্রদান-সংক্রান্ত কাজ একেবারেই বন্ধ করে দিয়েছেন। কারণ কাজ না করলেও তাদের বেতন হচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংকের তথ্য পর্যালোচনায় আরও দেখা যায়, বিনিয়োগ পরিবেশের উন্নতি না হওয়ায় কয়েক বছর ধরেই বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবাহ বাড়ছে কম। ২০১৩ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৪ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত বেসরকারী খাতে ঋণের প্রবৃদ্ধি হয়েছিল সাড়ে ১৩ শতাংশ। ২০১৪ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৫ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত তা ১ শতাংশেরও কম বেড়ে হয় ১৪ দশমিক ১৯ শতাংশ। আর ২০১৫ সালের ডিসেম্বর থেকে ২০১৬ সালের ডিসেম্বর পর্যন্ত এ ঋণপ্রবাহ বেড়েছে ১৫ দশমিক ৫৫ শতাংশ। চলতি বছরের জানুয়ারিতে তা সামান্য বেড়ে হয়েছে ১৫ দশমিক ৬১ শতাংশ। চলতি মুদ্রানীতিতে জুন পর্যন্ত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে সাড়ে ১৬ শতাংশ। বিনিয়োগের অন্যতম প্রতিবন্ধক হিসেবে এত দিন ব্যাংক ঋণের উচ্চ সুদকে দায়ী করে আসছিলেন ব্যবসায়ী ও শিল্পোদ্যোক্তারা। বাংলাদেশ ব্যাংকের নানা পদক্ষেপে বর্তমানে তা এক অঙ্কের ঘরে (সিঙ্গেল ডিজিট) নেমেছে। তবে খেলাপি ঋণ বৃদ্ধি ও অতি মুনাফা প্রবণতার কারণে অনেক ব্যাংকের ঋণের সুদ এখনও দুই অঙ্কের বেশি রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসের হিসাবে এ তালিকায় বেসরকারি খাতের অন্তত ২৩টি ব্যাংক রয়েছে। তাই সুলভ বিনিয়োগ পরিবেশ নিশ্চিতে প্রতিনিয়ত ঋণের সুদ কমাতে ব্যাংকগুলোকে নৈতিকভাবে চাপ প্রয়োগ করে আসছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। এরই অংশ হিসেবে কয়েক মাস আগে ‘স্প্রেডকে’ সংশ্লিষ্ট ব্যাংকের ক্যামেলস রেটিংয়ের অন্তর্ভুক্ত করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। এতে যেসব ব্যাংকের স্প্রেড সীমা অতিক্রম করবে, তাদের ক্যামেলস রেটিং নেতিবাচক হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে। এর পাশাপাশি ঋণের সুদ যাতে প্রতিযোগিতার ভিত্তিতে কমে আসে, সে জন্য বেসরকারী খাতে স্বল্প খরচের বিদেশী ঋণ নেয়ার অবারিত সুযোগ দেয়া হয়েছে। একইসঙ্গে স্বল্প সুদের বিভিন্ন পুনঃঅর্থায়ন তহবিল থেকে উদ্যোক্তাদের সহজ ঋণের ব্যবস্থা করেছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গবর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদ বলেন, বেসরকারী খাতে বিনিয়োগ চাহিদা কম থাকাই অলস অর্থ বাড়ার মূল কারণ। এসব অর্থের বিপরীতে ব্যাংকগুলোকে নিয়মিত সুদ গুনতে হলেও কোন আয় হচ্ছে না। তিনি বলেন, বিনিয়োগের অনুকূল পরিবেশ না থাকায় উদ্যোক্তারা নতুন প্রকল্প নিয়ে এগিয়ে আসছেন না। ব্যাংকগুলোও নতুন ঋণ বিতরণের ক্ষেত্রে সতর্কতা অবলম্বন করছে।
×