ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

কোটি ডলারের পোকা সংগ্রহ

প্রকাশিত: ০৫:৩৫, ২৭ মার্চ ২০১৭

কোটি ডলারের  পোকা সংগ্রহ

বই বা ডাকটিকেট নয়, তাদের নেশা পোকামাকড় সংগ্রহ করা। সে নেশার টানেই বহু বছর আগে তারা একে অপরের কাছে আসেন। ঘর বেঁধেছেন। আর পোকামাকড়ের নেশাতেই ছুটে গেছেন দেশ-বিদেশের নানা প্রান্তে। কখনও কখনও জীবনের ঝুঁকি নিয়ে সমৃদ্ধ করেছেন নিজেদের সংগ্রহ। এভাবে গত ছয় দশক ধরেই তাদের সংগ্রহে জমেছে দশ লাখের বেশি বিভিন্ন প্রজাতির পোকামাকড়। মার্কিন মুলুকে আরিজোনার টাসকন শহরের অশীতিপর দম্পতি চার্লস ও লয়েস ও’ব্রায়েনের সেই সংগ্রহের বর্তমান বাজারদর প্রায় এক কোটি ডলার। সম্প্রতি নিজেদের সারাজীবনের সেই ভা-ার ও’ব্রায়েন দম্পতি তুলে দিলেন আরিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটি কর্তৃপক্ষের হাতে। এত বড়মাপের কোন ব্যক্তিগত সংগ্রহ গোটা দুনিয়াতেই বিরল। আরিজোনার বিশ্ববিদ্যালয়ের পতঙ্গবিজ্ঞানী নিকো ফ্রাঞ্জের মতে, ও’ব্রায়েন দম্পতির এ সংগ্রহ গবেষকদের কাছে সোনার খনি হাতে পাওয়ার মতোই মূল্যবান। সংগ্রহে রয়েছে ছারপোকা, গুবরেপোকাসহ অনেক বিরল প্রজাতির পোকামাকড়। আর প্রতিটি পোকামাকড়ের নমুনার একেকটির দাম হতে পারে ৫ থেকে ৩শ’ ডলার। এর মধ্যে রয়েছে এমন হাজারের বেশি পতঙ্গ, যা হয়ত গবেষকদের কাছেও বিরল প্রজাতির। পতঙ্গদের বৃহত্তর বংশলতিকা তৈরি ছাড়াও বিভিন্ন গবেষণায় এ সংগ্রহ খুবই কাজে আসবে বলে মত নিকো ফ্রাঞ্জের। আপাতত এ বিপুল ভা-ারের ক্যাটালগ তৈরিতে তিনি কাজে লাগিয়েছেন পার্ট টাইমার হিসেবে কাজ করা ছাত্রছাত্রীদের। এক সময় এ বিশ্ববিদ্যালয়েই পার্ট টাইমার হিসেবে কর্মজীবন শুরু করেছিলেন ও’ব্রায়েন দম্পতি। কেমিস্ট হওয়ার পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের টক্সিকোলজি বিভাগেও পার্ট টাইম কাজ করতেন লয়েস। সেই সময়ই পতঙ্গবিজ্ঞান নিয়ে পড়াশোনাও শুরু করেন। তখনই আলাপ সহ-শিক্ষক চার্লসের সঙ্গে। এরপর চার্লসের সঙ্গে সঙ্গে পোকামাকড়েরও প্রেমে পড়েছিলেন লয়েস। সেই শুরু। এরপর প্রায় দশকের পর দশক ধরে কখনও এ্যান্টার্কটিকায় বিরল প্রজাতির উইভিল বা কখনও নিউজিল্যান্ড বা সলোমন আইল্যান্ডে মাসের পর মাস খুঁজে বেড়িয়েছেন পোকামাকড়। পোকামাকড়ের সঙ্গে সঙ্গে বিচিত্র অভিজ্ঞতায় ভরে উঠেছে তাদের ভা-ার। নিকারাগুয়ায় গিয়ে দেখা মিলেছে এমন একজনের, যিনি তোতাপাখির বুলি ছাড়া কখনও কোন মানুষের সঙ্গে কথা বলেননি। এক রাতে ভেনিজুয়েলায় জঙ্গলে তাদের কুমির চোর ভেবে বন্দুকের সামনে দাঁড়াতে হয়েছিল। এসব বিপদ-আপদ কাটিয়েই শুধুমাত্র পোকামাকড় সংগ্রহ করে গেছেন চার্লস ও লয়েস। সন্তানহীন ও’ব্রায়েন দম্পতি জানিয়েছেন, এরই মধ্যে বয়স থাবা বসাচ্ছে তাদের শরীরে। গত ছয় মাসে দুবার নিজের পিঠের হাড় ভেঙ্গেছেন চার্লস। বেশিরভাগ সময় কাটছে ঘরের মধ্যেই। নিজেদের গোটা সংগ্রহ দান করার পর এখন তাদের সঙ্গী ঘরবাড়িজুড়ে ছড়িয়ে থাকা পোকামাকড়ের খালি বাক্স-শোকেস। Ñওয়েবসাইট
×