ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৮ মার্চ ২০২৪, ১৪ চৈত্র ১৪৩০

নিউজিল্যান্ডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে পাকিদের বাধা

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ মার্চ ২০১৭

নিউজিল্যান্ডে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে পাকিদের বাধা

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরের ২৫ মার্চ গণহত্যা নিয়ে পাকি গণমাধ্যমের অপপ্রচারের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দিয়েছে পাকিস্তানীরা। স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠানের আমন্ত্রণপত্রে জাতির জনক বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালীর আত্মত্যাগ ও পাক হানাদার বাহিনীর বর্বতার সারসংক্ষেপ তুলে ধরা হলে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের বাধা দিয়েছে পাকিস্তানী কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি ছাড়াও আয়োজকদের হুমকি দিচ্ছেন তারা। এর আগে এবার একাত্তরের ২৫ মার্চ পাক হানাদার বাহিনীর নারকীয় হত্যাযজ্ঞের দিনটিকে প্রথমবারের মতো জাতীয় গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের ঘোষণার পর থেকেই পাকিস্তানের বিভিন্ন গোষ্ঠী বিশেষত গণমাধ্যমে শুরু হয়েছে মিথ্যাচার। অব্যাহতভাবে চলছে একাত্তরে তাদের অপরাধ নিয়ে অপপ্রচার। দেশটির গণমাধ্যম ‘দ্য ডনের’ মতো মিথ্যাচার করছে দ্য নিউজ ও পাকিস্তান অবজারভারের মতো পাকি মিডিয়া। বাংলাদেশের সংসদে ২৫ মার্চকে গণহত্যা দিবস হিসেবে পালনের প্রস্তাব পাস হওয়ার পর থেকেই পাকিস্তানী মিডিয়াগুলো এ অপপ্রচারে নামে। গত ২৫ মার্চ ওই দুই মিডিয়ায় প্রকাশিত নিবন্ধে ১৯৭১ সালের গণহত্যা নিয়ে বিভিন্ন প্রশ্ন তোলা হয়েছে। ভারতের ষড়যন্ত্রে বাংলাদেশ গণহত্যা দিবস পালনের এ সিদ্ধান্ত নিয়েছে বলেও প্রকাশিত নিবন্ধে বলা হয়। কেবল তাই নয়, নিবন্ধে বাংলাদেশ সরকারের গণহত্যা দিবস পালনের যৌক্তিকতা নিয়েও প্রশ্ন তোলে এসব মিডিয়া। দ্য নিউজের নিবন্ধে বলা হয়, ‘বাংলাদেশ তাদের দুই উচ্চপদের কর্মকর্তাকে নিউইয়র্কে অবস্থিত জাতিসংঘের সদর দফতরে এবং জেনেভায় জাতিসংঘের মানবাধিকার কাউন্সিলে পাঠাবেন ১৯৭১ সালের গণহত্যাবিষয়ক দিবসের স্বীকৃতির জন্য।’ পত্রিকাটির বিনন্ধে আরও বলা হয়, ‘এটা খুবই পুরনো কাল্পনিক তত্ত্ব এবং এটা অপপ্রচার ছাড়া কিছু নয়, যা মূলত শেখ মুজিবুর রহমানসহ বাংলাদেশের নেতারা করে আসছিলেন যে পাকিস্তানী সেনাবাহিনীর হাতে ওই গণহত্যা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, পাকিস্তানের নিরাপত্তা প্রতিষ্ঠার বিরুদ্ধে মৃতের কাল্পনিক সংখ্যাও বলা হচ্ছে বিভিন্ন ক্ষেত্রে।’ পাকিস্তানে ২৩ মার্চ পাকিস্তান দিবস হিসেবে পালিত হয়। কিন্তু পাকিস্তানী মিডিয়া এবার বিকৃত তথ্য হাজির করে বলছে, ‘পাকিস্তান দিবসের পাল্টা দিবস হিসেবে বাংলাদেশ সরকার ২৫ মার্চ গণহত্যা দিবস পালনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।’ পাক অবজারভারের নিবন্ধে বলা হয়, ‘বাস্তবতা হলো, তিন মিলিয়ন (৩০ লাখ) বাঙালীকে হত্যার কোন হিসেব নেই। পাকিস্তানকে বিভাজিত করার জন্য ভারতের বাজে ইচ্ছেয় এটা বাংলাদেশ সৃষ্টি করেছে।’ একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটিসহ দেশের প্রগতিশীল সংগঠনগুলোর নেতৃবৃন্দ বলেছেন, ’৭১ নিয়ে পাকিস্তানের প্রশাসন ও জনগণের একটি অংশের পাশাপাশি বাংলাদেশেও পাকিস্তানপন্থীদের মিথ্যাচার নতুন নয়। গত চার দশকের বেশি সময়জুড়ে একাত্তরে পাকিস্তানী বাহিনীর নৃশংসতা ও গণহত্যা নিয়ে দেশে-বিদেশে সংবাদ প্রকাশের পাশাপাশি গবেষণাধর্মী অনেক বই বের হয়েছে। এসব প্রকাশনা থেকে গণহত্যার বিষয়টি একেবারে স্পষ্ট। কাজেই ২৫ মার্চ পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা অস্বীকার করার কোন সুযোগ নেই। এদিকে একাত্তরের ২৫ মার্চ কালরাত নিয়ে পাকি অপপ্রচারের মধ্যেই নিউজিল্যান্ডের ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান আয়োজনে বাধা দিয়েছে পাকিস্তানীরা। স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনের লক্ষ্যে রবিবার নিউজিল্যান্ডের ক্রাইস্টচার্চের ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশী শিক্ষার্থীদের আয়োজিত অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল সতীর্থদের। আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, স্বাধীনতাযুদ্ধে বাঙালীর আত্মত্যাগ এবং পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতার সংক্ষিপ্ত চিত্র তুলে ধরেছিলেন আয়োজকরা। এতেই ক্ষুব্ধ হয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা দিবসের অনুষ্ঠান বন্ধ এবং অনুষ্ঠানের আহ্বায়ককে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বহিষ্কারের দাবি তুলেছে পাকিস্তানী কর্মকর্তা ও শিক্ষার্থীরা। অনুষ্ঠানের আহ্বায়ক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের বিশেষ শিক্ষা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মোহাম্মদ মাহবুবুর রহমান বর্তমানে ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ে পিএইচডি কোর্সে অধ্যয়নরত। তিনি জানিয়েছেন, ২৬ মার্চ এর প্রেক্ষাপট তুলে ধরতেই তিনি আমন্ত্রণপত্রে বঙ্গবন্ধুর স্বাধীনতার ঘোষণা, পাকিস্তানী বাহিনীর গণহত্যা, ৩০ লাখ শহীদের রক্ত ও প্রায় তিন লাখ নারীর সম্ভ্রমের বিনিময়ে বাঙালীর বিজয় অর্জনের প্রেক্ষাপট তুলে ধরেছিলেন। এতেই ক্যান্টারবারি বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ও অধ্যয়নরত সব পাকিস্তানী বিষয়গুলো অস্বীকার করে তার বরুদ্ধে বিদ্বেষ ছড়ানোর অভিযোগ করে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের কাছে। এমনকি ওই পাকিস্তানীরা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে তাকে বহিষ্কারের দাবিও তুলেছে। মাহবুবুর রহমান বলেছেন, পাকিস্তানী শিক্ষার্থীরা মুক্তিযুদ্ধে পাকিস্তানী বাহিনীর বর্বরতাকে বাংলাদেশের মিথ্যাচার হিসেবে প্রচারণা চালাচ্ছে এবং মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে কথা না বলতে ই-মেইল ও টেলিফোনে হুমকি দিয়ে যাচ্ছে। পাকিস্তানী শিক্ষার্থীরা একদিকে গণহত্যা, বর্বরতা, নির্যাতনকে বাংলাদেশের মিথ্যাচার বলে অভিহিত করছে। আবার অন্য মুসলিম দেশগুলোর শিক্ষার্থীদের মাধ্যমে অতীত ভুলে যাওয়ার পরামর্শ দিচ্ছে তারা।
×