ঢাকা, বাংলাদেশ   শুক্রবার ২৬ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে হাঁটি এক মাইল’

প্রকাশিত: ০৫:৩৩, ২৭ মার্চ ২০১৭

‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে হাঁটি  এক মাইল’

স্টাফ রিপোর্টার ॥ একাত্তরে একদল অভিযাত্রী দেশমাতার মুক্তির অভিপ্রায়ে ‘বিশ^ বিবেক জাগরণ’ পদযাত্রায় হেঁটে অসামান্য দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছিলেন। সে দৃষ্টান্ত অনুসরণ করে স্বাধীনতা দিবস উদ্যাপনে ‘অভিযাত্রী’ নামের সংগঠন শহীদ মিনার থেকে জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত পদযাত্রার আয়োজন করে। ‘মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণে হাঁটি এক মাইল’ প্রতিপাদ্যে পর্বতারোহীদের দল অভিযাত্রীর এ যাত্রার শিরোনাম ছিল ‘শোক থেকে শক্তি : অদম্য পদযাত্রা’। রবিবার ভোর ৫টায় রাজধানীর কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে এ পদযাত্রার সূচনা হয়। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের জগন্নাথ হল, মধুর ক্যান্টিন, সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, শিখা চিরন্তন, সিটি কলেজ, মোহাম্মদপুর শারীরিক শিক্ষা কলেজ, রায়ের বাজার বধ্যভূমি, সাদুল্লাপুর ঘাট, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়, সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ ঘুরে আবার শহীদ মিনারে এসে শেষ হয় ‘অদম্য পদযাত্রা’। পর্বতারোহীদের সংগঠন ‘অভিযাত্রী’ ২০১৩ সাল থেকে ‘শোক থেকে শক্তি’ নামে একটি পদযাত্রার আয়োজন করে আসছে। ২০১৬ সাল থেকে এ পদযাত্রা নিবেদিত হয় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ তহবিল গঠনের উদ্দেশ্যে। অভিযাত্রী দলের অন্যতম সদস্য নিশাত মজুমদার জানান, ঢাকার কেন্দ্রীয় শহীদ মিনার থেকে সাভারের জাতীয় স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত দীর্ঘ এ পদযাত্রায় পুরোটা পথ না হেঁটে ন্যূনতম এক মাইল হেঁটেছেন ছাত্র-শিক্ষক-কর্মজীবী থেকে শুরু করে সর্বস্তরের মানুষ। তারা সাধ্যমতো মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর নির্মাণ তহবিলে অনুদান প্রদান করেছেন। স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে পদযাত্রী দল মায়ের ভাষার জন্য আত্মত্যাগকারী মৃত্যুঞ্জয়ী শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানাতে হাজির হন কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে। ভোর ৫টায় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শিল্পীদের সঙ্গে পদযাত্রীরা কণ্ঠ মেলান জাতীয় সঙ্গীতে। এরপর পঁচিশে মার্চ কালরাতের ভয়াল স্মৃতিবিজড়িত জগন্নাথ হল, মধুর ক্যান্টিন পেরিয়ে পৌঁছান স্বাধীনতার ঐতিহাসিক প্রান্তর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে। শিখা চিরন্তনে কিছুটা সময় নীরবতা পালন করে শাহবাগ হয়ে সিটি কলেজে পৌঁছায় অভিযাত্রী দল। এরপর পিলখানা, জিগাতলা হয়ে তাজউদ্দীন আহমদের স্মৃতিধন্য বাসভবনের পাশ দিয়ে মোহাম্মদপুরের সরকারী শারীরিক শিক্ষা কলেজে পদযাত্রী দল পৌঁছায় সকাল সাড়ে ৮টায়। একাত্তরের বর্বর পাক বাহিনী এবং তাদের দোসর আলবদর ও রাজাকারদের পাশবিক নির্যাতনের সাক্ষ্যবহ স্থানটিতে শহীদ বুদ্ধিজীবী পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে কিছুটা সময় কাটায় পদযাত্রী দল। তারপর বুদ্ধিজীবীদের প্রতি বিনম্র শ্রদ্ধা নিবেদন করে। তারপর বছিলা সেতু ঘাট থেকে নৌকায় চেপে তারা যান আমিনবাজারে। সেখান থেকে নৌকায় চেপে তুরাগ নদী পেরিয়ে পদযাত্রী দল দুপুর ১২টায় পৌঁছায় সাদুল্লাপুরের শতবর্ষী বটমূলে। সেখানে তারা সাক্ষাত করে বেগুনবাড়ি স্কুলের ছাত্র-শিক্ষকদের সঙ্গে। খানিকটা সময় কাটিয়ে তারা চলে আকরাইনের পথে। সেখানেই সম্পন্ন হয় মধ্যাহ্নভোজ। এরপর পাকিস্তানী বাহিনীর সঙ্গে মুক্তিকামী বাঙালীর সম্মুখযুদ্ধের স্মৃতিঘেরা কলমা গ্রামের ছায়াময় মেঠোপথ ধরে পদযাত্রী দল সাভার ডেইরি ফার্ম পেরিয়ে চলে যায় জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের দিকে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রাঙ্গণে ঢোকার আগে ডেইরি ফার্ম গেটে শহীদ টিটোর সমাধির পাশে দাঁড়িয়ে জানায় বিনম্র শ্রদ্ধা। অসম সমরে পাকিস্তানী বাহিনীকে নাজেহাল করে শহীদ হন অমিততেজ তরুণ টিটো। এ তেজোদীপ্ত বীরত্বগাথায় উজ্জীবিত হয়ে দল চলতে থাকে বিশ্ববিদ্যালয়ের লাল ইটের সুউচ্চ শহীদ মিনারের পাশ দিয়ে। পাখির কুজন শুনতে শুনতে শিমুল আর পলাশের পাপড়ি ছড়ানো পথ দিয়ে হাঁটতে হাঁটতে দল চলে যায় ক্যাম্পাসের অপর প্রান্তের বিশ্ববিদ্যালয় স্কুল গেটে। গেট পেরোলেই আসে গোকুলনগর গ্রামের মেঠোপথ। এ পথে খানিক চলতে চলতে চকিতে দৃষ্টিপথে জেগে ওঠে শক্তির সেই উজ্জ্বল শিখর জাতীয় স্মৃতিসৌধ।
×