ঢাকা, বাংলাদেশ   বৃহস্পতিবার ২৫ এপ্রিল ২০২৪, ১২ বৈশাখ ১৪৩১

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের প্রচার

প্রকাশিত: ০৫:৩২, ২৭ মার্চ ২০১৭

কুমিল্লা সিটি নির্বাচনে জমে উঠেছে শেষ মুহূর্তের প্রচার

মীর শাহ আলম, কুমিল্লা থেকে ॥ কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের আর বাকি মাত্র দুই দিন। শেষ মুহূর্তে এ নির্বাচনকে ঘিরে দেশের বড় দুই দল ও জোটের কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা দল-জোটবদ্ধভাবে ভোটের মাঠে মরিয়া হয়ে প্রচার-প্রচারণা চালিয়ে যাচ্ছেন। ৩০ মার্চ নির্বাচনকে সামনে রেখে বিজয় নিশ্চিত করতে তারা যেন ভোটযুদ্ধে নেমে পড়েছেন। তারপরও বিজয়ের শেষ হাসি নিয়ে সংশয় রয়েছে দুই জোটের মধ্যেই। কারণ হিসেবে আওয়ামী ঘরানার রাজনীতিকদের অনেকে বলছেন- দলের কেউ পেছন থেকে কলকাঠি না নাড়লে আওয়ামী লীগ মনোনীত প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার জয়ে তারা আশাবাদী। অপরদিকে বিএনপি ঘরানার রাজনীতিকদের অনেকে বলছেন- দলের ত্রিমুখী রাজনীতির মধ্যে শেষ মুহূর্তে প্রভাবশালী এক নেতা দলের প্রার্থীর নির্বাচনী প্রচারণাসহ সকল কার্যক্রম থেকে নিজেকে সরিয়ে নেয়ার প্রকাশ্যে ঘোষণা দেয়ায় গুরুত্বপূর্ণ এ নির্বাচনে ভোটের মাঠে দলের প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর জয়ে নেতিবাচক প্রভাব পড়ার শংকা রয়েছে। এদিকে নির্বাচন কমিশন পৃথক বিজ্ঞপ্তি জারি করে বহিরাগতদের নির্বাচনী এলাকা ত্যাগের নির্দেশ, যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা ও প্রার্থীদের প্রচারণা বন্ধে নির্দেশ দিয়েছে। সরেজমিন ঘুরে ও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন নির্বাচন যতই ঘনিয়ে আসছে ভোটের মাঠে বিশেষ করে দুই জোটের প্রার্থীর ভোটের হিসাব-নিকাশ তত বেশি বাড়ছে। সচেতন রাজনীতিক থেকে আরম্ভ করে সাধারণ ভোটাররাও দুই প্রার্থীর পক্ষে-বিপক্ষে জয়-পরাজয় নিয়ে নানান হিসাব-নিকাশ শুরু করে দিয়েছেন। কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় কয়েকজন আওয়ামী লীগ নেতার সঙ্গে আলাপ করলে নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানান, এ মুহূর্তে দলের প্রভাবশালী কেউ পেছন থেকে কলকাঠি না নাড়লে প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমার জয়ের ব্যাপারে তারা আশাবাদী। সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে কেন্দ্রীয় নেতারা এখন কুমিল্লায় অবস্থান করে স্থানীয় নেতাকর্মীদের নিয়ে দিন-রাত প্রচার-প্রচারণাসহ ভোটারদের মন জয় করতে কঠোর পরিশ্রম করে যাচ্ছেন। তারা প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমাকে সৎ যোগ্য নিষ্ঠাবান উল্লেখ করে তাকে নির্বাচিত করার জন্য নগরবাসীর প্রতি আহ্বান জানান। অপরদিকে, জেলা বিএনপির রাজনীতিতে বিএনপি চেয়ারপার্সনের উপদেষ্টা ও কুমিল্লা সদর দক্ষিণ আসনের সাবেক সাংসদ মনিরুল হক চৌধুরীকে ফ্যাক্টর হিসেবে মনে করেন স্থানীয় রাজনীতিকদের অনেকে। তিনি শনিবার ঘোষণা দিয়ে বিএনপির প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কুর নির্বাচনী প্রচারসহ সকল কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ান এবং নিজ বাড়িতে তিনি তাঁর বিপুলসংখ্যক অনুসারী নিয়ে বৈঠক শেষে ঢাকায় চলে যান। তাঁর এ সিদ্ধান্তের বিষয়টি গণমাধ্যমে প্রকাশ পেলে নগরজুড়ে বিএনপি ঘরানার নেতাকর্মীদের মাঝে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। রবিবার এ বিষয়টি ছিল টক-অব দ্য টাউন। এ বিষয়ে মনিরুল হক চৌধুরী সাংবাদিকদের জানান, দলের প্রার্থী সাক্কু এ পর্যন্ত আমার সঙ্গে কোনরূপ যোগাযোগ করেনি, কথাও বলেনি- এমনকি আমার জন্মস্থান যে ওয়ার্ডে সেখানে তার নির্বাচনী প্রচার কমিটিতে কারা আছে তাও আমি জানি না। এছাড়া সাক্কুর কয়েক নেতা গত কয়েকদিন ধরে নির্বাচনী প্রচারণাকালে আমাকে নিয়ে বিরূপ মন্তব্য করছে। আমি ও আমার কর্মীরা মাঠে নামলে না-কি সাক্কুর ভোটের মাঠে ধস নামবে এমন অপপ্রচারও চালাচ্ছে। বিষয়টি আমি দলের নির্বাচন পরিচালনা কমিটির নেতৃবৃন্দসহ হাইকমান্ডের অনেককে জানিয়েছি। তবে আমি ও আমার নেতাকর্মীদের কারণে যেন সাক্কুর ভোট কমে না যায় সেজন্য আমি সাক্কুর নির্বাচনী প্রচারসহ সকল কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়িয়েছি। বিএনপির এ নেতা সাক্কুর নির্বাচনী কার্যক্রম থেকে সরে দাঁড়ানোর ঘোষণায় নগরীর সদর দক্ষিণ উপজেলা এলাকার ৯টি ওয়ার্ডে ভোটারদের মধ্যে বিএনপির ওই প্রার্থীর ভোটের মাঠে বিরূপ প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে এবং এ মুহূর্তে বিএনপি প্রার্থীর জয় নিয়ে শংকার কথা জানিয়েছেন রাজনৈতিক বিশ্লেষকসহ সাক্কু শিবিরের অনেকে। তবে জয়ের ব্যাপারে আশাবাদী হয়ে ভোটারদের কাছে টানতে মাঠ চষে বেড়াচ্ছেন প্রার্থীসহ কেন্দ্রীয় ও স্থানীয় নেতারা। আওয়ামী লীগের গণসংযোগ ॥ আওয়ামী লীগের প্রার্থী আঞ্জুম সুলতানা সীমা রবিবার নগরীর কাশারীপট্টি, কাঁটাবিল, বালুধুম, মৌলভীপাড়া, সংরাইশ, টিক্কারচর, নবগ্রামসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এ প্রার্থীর পক্ষে দলের কেন্দ্রীয় নেতা একেএম এনামুল হক শামীম, সুজিত রায় নন্দী, ইঞ্জিনিয়ার আব্দুস সবুর, দেলোয়ার হোসেন চুন্নু, ইসহাক আলী খান পান্না, অজয় কর খোকন, লেয়াকত শিকদার, হায়দার চৌধুরী রোটনসহ দলীয় নেতারা নগরীর সংরাইশ, মৌলভীপাড়া, গর্জনখোলা, সুজানগরসহ কয়েকটি এলাকায় গণসংযোগ করেছেন। বিকেলে আমরা কুমিল্লাস্থ চৌদ্দগ্রামবাসীর পক্ষে পৌর মেয়র মিজানুর রহমান, উপজেলা পরিষদের ভাইস চেয়ারম্যান এবিএম বাহার, জেলা আওয়ামী লীগের ধর্মবিষয়ক সম্পাদক এ্যাডভোকেট আবুল খায়ের, মীর হোসেন মীরু, নিজাম উদ্দিন চৌধুরী, তাজুল ইসলাম, ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় নেতা জামশেদ হোসেন, ছাত্রলীগ নেতা লোকমান হোসেন রুবেলসহ নেতৃবৃন্দ নগরীর বিভিন্ন স্থানে প্রার্থীর পক্ষে গণসংযোগ চালান। বিএনপির গণসংযোগ ॥ বিএনপি প্রার্থী মনিরুল হক সাক্কু রবিবার দিনভর নগরীর বজ্রপুর, ডিগাম্বরীতলা, উত্তরচর্থা, তেলিয়াপুকুরপাড়, রাজগঞ্জসহ বিভিন্ন এলাকায় গণসংযোগ করেন। এছাড়া এ প্রার্থীর পক্ষে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য নজরুল ইসলাম খান, কেন্দ্রীয় নেতা সামছুজ্জামান দুদু, আসাদুজ্জামান রিপন, হাবিবুর রহমান হাবিব, ফজলুল হক মিলন, জয়নাল আবেদীন ফারুক, শহীদ উদ্দিন চৌধুরী এ্যানীসহ ২০ দলের বেশ কয়েকজন নেতা নগরীর নূরপুর, কাপ্তানবাজার, মোগলটুলী, সংরাইশ, চকবাজার, গর্জনখোলাসহ বিভিন্ন স্থানে গণসংযোগ চালান। এছাড়া কেন্দ্রীয় ছাত্রদল ফাউন্ডেশনের সভাপতি আকবর চুন্নুর নেতৃত্বে কুমিল্লা মহানগর সভাপতি এ্যাডভোকেট রেজাউল করিম, সাধারণ সম্পাদক নেছার আহমেদ, জেলা সভাপতি নবীনেওয়াজ, সম্পাদক এ্যাডভোকেট দুলালসহ নেতৃবৃন্দ নগরীর নিউমার্কেট, কান্দিরপাড় ও রাজগঞ্জ এলাকায় গণসংযোগ চালান। এদিকে বিকেলে নগরীর ঋষিপট্টি এলাকায় প্রার্থীসহ দলের কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দ উঠান বৈঠক করেন। বহিরাগতদের এলাকা ত্যাগের নির্দেশ ॥ আগামী ৩০ মার্চ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে কুমিল্লা সিটি কর্পোরেশন এলাকার বাসিন্দা বা ভোটার নন তাদের ২৭ মার্চ রাত ১২টার মধ্যেই নির্বাচনী এলাকা ছাড়ার নির্দেশ দিয়েছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার বিকেলে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। তিনি জানান, রাত ১২টা থেকে বহিরাগতরা এলাকা না ছাড়লে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। এদিকে নির্বাচনকে কেন্দ্র করে ৩০ মার্চ ভোটগ্রহণের বিষয়ে গণবিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে। যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা ॥ নির্বাচনকে কেন্দ্র করে সকল প্রকার যানবাহনের ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার বিকেলে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, আগামী ২৯ মার্চ মধ্য রাত ১২টা হতে ৩০ মার্চ মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত কতিপয় নৌযান/স্থল যানবাহন- যেমন লঞ্চ, স্পিডবোট, বেবিট্যাক্সি/অটোরিক্সা, ট্যাক্সিক্যাব, মাইক্রোবাস, জিপ, পিকআপ, কার, বাস, ট্রাক, টেম্পো চলাচলের ওপর নির্বাচন কমিশন নিষেধাজ্ঞা আরোপ করেছে। এছাড়াও সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনী এলাকায় ২৭ মার্চ মধ্যরাত ১২টা হতে ৩১ মার্চ সকাল ৬টা পর্যন্ত মোটরসাইকেলের ওপর নিষেধাজ্ঞা বলবৎ থাকবে। প্রার্থীদের প্রচারণা বন্ধের নির্দেশ ॥ নির্বাচনী এলাকায় প্রার্থীদের সকল প্রকার প্রচারণা বন্ধে নির্দেশ দিয়ে বিজ্ঞপ্তি জারি করেছে নির্বাচন কমিশন। রবিবার বিকেলে কুমিল্লার আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ও রিটার্নিং অফিসার রকিব উদ্দিন ম-ল স্বাক্ষরিত এক বিজ্ঞপ্তিতে এ তথ্য জানানো হয়। এতে উল্লেখ করা হয়, স্থানীয় সরকার (সিটি কর্পোরেশন) নির্বাচন বিধিমালা, ২০১০ এর ৭৪ বিধি অনুসারে ভোটগ্রহণ শুরুর পূর্ববর্তী ৩২ ঘণ্টা, ভোট গ্রহণের দিন সকাল ৮টা হতে রাত ১২টা এবং ভোট গ্রহণের দিন রাত ১২টা হতে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টা অর্থাৎ সমন্বিত রূপে ২৮ মার্চ মধ্যরাত ১২টা হতে ১ এপ্রিল মধ্যরাত ১২টা পর্যন্ত নির্বাচনী এলাকায় কোন ব্যক্তি কোন জনসভা আহ্বান, অনুষ্ঠান বা উহাতে যোগদান করতে এবং কোন মিছিল বা শোভাযাত্রা সংঘটিত করতে বা উহাতে যোগদান করতে পারবেন না। কোন ব্যক্তি উক্ত বিধান লংঘন করলে অন্যূন ৬ মাস ও অনধিক ৭ বছর কারাদ-ে দ-নীয় হবেন।
×